• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ১৮)

আমার কথা

৬৯
সব মুনিসে পজা মমা
সকল মানুষ আমার সন্তান
সম্রাট অশোক না কি এভাবেই বলেছিলেন। একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র কিভাবে ভাববে, কি রকম হবে জনতার সাথে রাষ্ট্রশক্তির সম্পর্ক, প্রতিবেশী দেশের সাথে তার সম্পর্কের বিন্যাস কি রকম হবে, ভাষাপ্রয়োগ কিভাবে হবে, এ নিয়ে সম্রাট অশোক অনেক কিছু ভেবেছিলেন। তার সেই মহৎ ও যুগান্তকারী চিন্তাকে মান্যতা দেবার জন্যই স্বাধীন ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রতীক তাঁর স্মারক বহন করে। ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকায় থাকে অশোক চক্র। আমরা নিজেদের কাছে প্রশ্ন করবো সম্রাটের ভাবনার সাথে আমরা বাস্তবে কতদূর সহমত।
৭০
শান্তি সম্প্রীতি অহিংসা মৈত্রী সহাবস্থান, একথা গুলি স্বাধীনতার সাথে এক নিঃশ্বাসে উচ্চারিত না হলে তা প্রধানতঃ উৎপীড়নের স্বাধীনতা হয়ে ওঠে।
৭১
বাড়ির আশি পেরোনো কর্তার হঠাৎ মৃত্যু হল। বেশ টুকটুক করে ঘুরতেন, ফিরতেন, সর্বদাই হাসি মুখ। পার্থিব কোনো ব্যাপারে তাঁর মনে সংকটের লেশমাত্র নেই। ছেলেরা সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছে। সকলে স্বাবলম্বী। এমন অবস্থায় মৃত্যু খুব বিভীষিকা বহে আনে না। তাই কেউই কান্নায় আছাড়ি পিছাড়ি খাচ্ছেন না। কেবল সত্তর পেরোনো গৃহকর্ত্রী মাঝে মধ্যে চোখের জল মুচছেন। যা হোক এত দিনের সুখ দুঃখের সঙ্গী। সে চলে গেল। দুঃখ পাওয়া খুব স্বাভাবিক। শুভানুধ্যায়ীরা ভিড় করেছেন। দেহ এখনো বিছানায় শয়ান। সে সময় এক শুভাকাঙ্খী মহিলা সিঁদুরকৌটো হাতে নিয়ে সদ্য স্বামীহারা প্রবীণাকে জিজ্ঞাসা করল “আপনি সিঁদুর পরেছেন? সিঁদুর যে একটু পরতে হয়!” অমনি প্রবীণার চোখ ভরে জল। সেই যে স্বামী সিঁদুরদান করেছিলেন। আর তো পরা হবে না। এক কটুভাষী আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম ভিড়ের সামনে। বুক চিতিয়ে বলে উঠলাম, “যা আপনাদের কৃত্য আছে, নীরবে সমাধা করুন। মাসিমাকে আর কাঁদাবেন না।” মৃত ব্যক্তির জ্যেষ্ঠ পুত্রও মৃদু প্রতিবাদ করে উঠলেন। বললেন, “এ যুগে এ সব আর মানায় না।” শুভাকাঙ্খী মহিলা অকুতোভয়। তিনি বেশ জানেন, তাঁকে কেউ বাধা দেবে না। তাঁরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। সংখ্যাগুরু হলেই সত্য উপলব্ধির লাইসেন্স জুটে যায় না, এ কথা কে তাঁকে বলে দেবে!
৭২
পাশের বাড়ির বৌটি বয়স্ক শাশুড়িকে খুব টিক টিক করে। পান থেকে চুন খসলে মুখ ঝামটা দেয়। শাশুড়িও তেমনি সরেস। একগ্লাস জল খেতেও অনীহা। শরীর ভাল থাকবে কি করে! এদিকে শুচিবায়ুর দাপটে এক একবারে বাথরুমে গিয়ে পাঁচশ লিটার জল খালি করে দেন। এই নিয়ে বৌটি বাড়ি মাথায় তোলে। সেই শাশুড়ি অসুস্থ হয়ে বাথরুমে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়ে সরকারি হাসপাতালে আশ্রয় প্রার্থিনী। সরকারি হাসপাতালে কেন চাইলেই বেড পাওয়া যায় না, তার ময়না তদন্ত করতে বসল বৌ। এত গুরু গম্ভীর বিষয়ে তার যে এত ঔৎসুক্য রয়েছে, তাই বা কে জানত !
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।