অণুগল্পে জয়ন্ত দত্ত

ঢেউ

সামান্য দুলে উঠেছিল যেন!ছলাৎ ছলাৎ শব্দ ও কয়েক মুহূর্ত।কেউ তাকে মনের ভুল ও ভাবতে পারে।জানা গেল জাহাজ এখন মাঝসমুদ্রে।অথচ ভাবভঙ্গি দেখে বুঝে ওঠার উপায় নেই।খাওয়া -দাওয়া শেষ করে যে যার মতো কেবিনে চলে গেছে।কেবিনের ছোট্ট ঘরে ঢুকে বোঝাই যায় না যে,জাহাজ এখন উত্তর সাগরের বুকে ভেসে চলেছে।একফালি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে জাহাজের ভেসে যাওয়া অনুভব করি।সঙ্গী কেউ না থাকায় ‘ডেকে’ যাওয়ার সাহস পাই না।মনে পড়ে যায় কোলরিজের ‘দ্য রাইম অফ দি এনশিয়েন্ট মারিনা’-র কথা।কবিতায় প্রায় দুশো বছর আগের সেই জাহাজ ছিল পাল এবং মাস্তুল নির্ভর।আমাদের জাহাজে সেই আদ্যিকালের লম্বা সাদা দাড়ির সেই বুড়ো নাবিক ও নেই।নেই কোনো বিস্ময় সৃষ্টিকারী সিন্ধুসারস,অ্যালবট্রস।নিস্তরঙ্গ উত্তর সাগরের ওপর দিয়ে ভেসে চলায় কোনো বিপদ নেই।যদি কোনো বিপদ সামনে এসে পড়ে,তার জন্য এই বিলাসবহুল জাহাজে রয়েছেন নিশ্চিন্ত নাবিক।যাদের আমরা মেরিন ইঞ্জিনিয়ার বলি।নির্বিঘ্নেই জাহাজটি পথ দেখিয়ে নিশ্চিন্ত উপকূলে পৌঁছে দেবে।এত ক্লান্তিতেও আমার ঘুম আসে না।সেই কিশোর কালে ক্লাস রুমে পড়ানো টালমাটাল জাহাজটির কথা মনে পড়ে।মাঝে মাঝেই ছলাৎ ছলাৎ শব্দ কানে আসে আর ‘বুড়ো নাবিকের উপকথা’ থেকে ভেসে আসে কিছু ঢেউ ।আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়…।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।