পড়াশোনা ও জীবন যাপনের বাকী সব সাধারণ কাজকর্ম নির্বিঘ্নে করা গেলেও ফুটবলের মতন বডি কনট্যাক্ট গেম কি ভাবে সম্ভব ? এই নিয়ে দামিনীর চিন্তার অন্ত নেই । খেলতে গিয়ে যদি চোট আঘাত লাগে তখন ? সেদিন অল্পের ওপর দিয়ে ফাঁড়া কেটে গেছে । কিন্তু চশমার কাঁচ ভেঙে যদি চোখে ঢুকে যেতো তবে ? ভাবতেই গা শিউরে ওঠে । বাড়ীর সবাই পুঁচকি মাইয়াটার খেলার স্বপক্ষে সওয়াল করে । দামিনীর এমনিতে কোনো আপত্তি নেই । খেলতে চায় খেলুক না ! কিন্তু মায়ের মন নিশ্চিন্ত থাকে কি করে ? বিপদ যে মাথার ওপর সর্বদা ভো চক্কর কাটছে । একেই চোখের অবস্থা ক্রিটিকাল । আর পাঁচটা সমবয়সি বাচ্ছার মতন নর্মাল নয় । তার ওপর যদি কোনো অঘটন ঘটে তবে তো আর রক্ষে নেই । ইতিমধ্যে খেলতে গিয়ে এক বছরে তিন তিনটে চশমা দেহ রেখেছে , এই নিয়ে চার নম্বর । সুতরাং দামিনী সর্ব সাধারণের উদ্দেশ্যে ঘোষণা করল আজ থেকে বুন্দির ফুটবল খেলা সম্পূর্ণ বন্ধ । ঠাকুমাও এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারলেন না । হাজার হোক সন্তান হলো মায়ের । তার ভালোমন্দ শুভাশুভ বিচারের অধিকার তারই হবে । এতো দিন ছেলের বৌয়ের সঙ্গে যে দড়ি টানাটানির খেলা চলেছে তার মধ্যে একটা আলাদা মজা ছিল । কিন্তু আদরের নাতনির প্রাণ সংশয় হতে পারে এমন কিছু তিনি নিশ্চই জোর করে চাপিয়ে দেবন না ।
অকস্মাৎ বসু বাড়ীর সকলের চোখে দুঃখের কালো কাঁচ দিয়ে তৈরী চশমা ঘন অন্ধকার ডেকে আনলো । সবাই মনমরা হয়ে আছে । বুন্দির দিকে কেউ ফিরে তাকাতে পারছে না । আমাদের শান্তিপ্রিয় জলিদা বারকতক মিউ মিউ করে বৌকে বোঝাবার চেষ্টা করেছিলেন । কিন্তু দামু বৌদি দৃষ্টিতে এমন অগ্নিবান হানলেন যে বেচারা জলিদা একেবারে চুপসে গেলেন ।
এই সাংঘাতিক সংবাদ কোচ স্যারের কানে পৌঁছল । শুনেই তাঁর হৃদযন্ত্র বিকল হওয়ার জোগাড় । বুন্দি তাঁর টিমের সব চাইতে প্রমিসিং বল প্লেয়ার । যাকে বলে একেবারে বুলেটের গতি সম্পন্ন । যে কোন পজিশনে তার জুড়ি মেলা ভার । ক্লাবের সকলে তাকে লিটিল ম্যারাডোনা বলে ডাকে । সেই বুন্দি আর খেলবে না ? হর্ষবর্ধনবাবু মাথায় হাত দিয়ে ধপাস করে বসে পড়লেন । তাঁর মনে হচ্ছে তিনি যেনো অতল গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছেন । দেরী না করে সদলবলে হাজির হলেন বসু বাড়ীতে । দামিনীর সামনে করজোড়ে সনির্বন্ধ প্রার্থনা জানালেন
– ম্যাডাম প্লিজ গোটা ব্যাপারটা একবার ঠান্ডা মাথায় বিবেচনা করে দেখুন । ঠিক একমাস বাকি জেলা ভিত্তিক অনুর্দ্ধ দশ নক আউট টুর্নামেন্টের ফাইনাল । আমরা গত বছরের চ্যাম্পিয়ান তাই সরাসরি ফাইনাল খেলবো । চ্যালেঞ্জ ট্রফি পরপর দু’বার জিতেছি , এবার জিতলে হ্যাট্রিক হবে আর ট্রফিটা ফর গুড হয়ে যাবে । আজীবন আমাদের ক্লাবের শোভা বর্ধন করবে । বুন্দি আমাদের একমাত্র স্কোরার যাকে চোখ বন্ধ করে ভরসা করা যায় । সে যদি না মাঠে নামে তাহলে তো ভরাডুবি ! অনুগ্রহ পূর্বক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করুন ।
কিন্তু কাকস্য পরিবেদনা , ভবি অত সহজে ভোলবার নয় । দামিনীর অথিতি আপ্যায়নে কোনো ত্রুটি রইল না । তার নির্দেশে মারুতি পিসি অসম্ভব তৎপরতা ও দ্রুততার সঙ্গে সুস্বাদু ফ্রেঞ্চ টোস্ট ও কফি পরিবেশন করলো । সবাই যখন বেশ আশাবাদী হয়ে উঠেছে তখন তিনি কঠিন মুখে তার সিদ্ধান্তে অনড় অটল অবিচল থাকার কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন । সমাদ্দার মশাই যেমন এসেছিলেন তেমনই পুরো টিম সহ বিফল মনোরথে ফিরে যেতে বাধ্য হলেন ।
এরপর সঙ্গত কারণেই বুন্দি তার মায়ের ওপর বেজায় ক্ষেপে গেল ।
– কোচ স্যার নিজে বাড়ীতে এলেন অথচ তুমি তার রিকোয়েস্ট রাখলে না ! তুমি কিছু জানো না শুধু শুধু টেনশন করছো । চাঁদু মামার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে । বলেছে এমন ব্যবস্থা করে দেবে যাতে আমার খেলার কোনো অসুবিধেই হবে না ।
– হ্যাঁ তা তো বটেই ! তোমার সব জান্তা মামা দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কিনা ! জ্ঞানের ভান্ডার একেবারে উপচে পড়ছে । কার দৌড় কদ্দুর পর্যন্ত সব আমার ভালোই জানা আছে ।
– তোমার বিশ্বাস না হয় কাজু পিসিকে জিজ্ঞাসা করে দেখো না ।
– হ্যাঁ পিসি তোমার আরেক পণ্ডিত , তাই সাক্ষী মানা হচ্ছে । একদম চুপ , মুখে মুখে তর্ক করবে না । যাও নিজের ঘরে যাও ।