• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে কুণাল রায় (পর্ব – ১১)

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা

তৃতীয় অধ্যায়ে দ্বিতীয় ভাগ: কর্মযোগ

ব্রহ্মা সৃষ্টির প্রথমে মানুষকে সৃষ্টি করেন এবং যজ্ঞের সকল ক্রিয়া এবং পদ্ধতি ঠিক করে দেন। এই যজ্ঞের দ্বারা মানুষের উন্নতি সম্ভব। সকল প্রকার কামনার পূর্তিও হয়ে থাকে।
এই যজ্ঞের দ্বারা দেবতারা সন্তুষ্ট হলে, তাঁরাও সকলকে সুখী রাখবেন। এই ভাবেই একে অপরের উপকার করলেই সামগ্রিক মঙ্গল সম্ভব। অন্যদিকে দেবতারা সন্তুষ্ট হয়ে যা যা প্রদান করেন, সেই সকল নিবেদনের জায়গায়, যদি কেউ আপন ভোগের জন্য ব্যবহার করেন, তিনি চোর রূপে বিবেচিত হন।
যাঁরা যজ্ঞ করেন, তাঁর অবশিষ্ট ভোগ করেন, তাঁরা সকল প্রকার পাপের থেকে মুক্ত হন। কিন্তু যাঁরা শুধুমাত্র নিজেদের জন্য অন্নপাক করে থাকেন, তাঁরা শুধুমাত্র পাপই ভোগ করেন।
জীবের থেকে অন্ন জন্মায়, বৃষ্টির থেকে অন্ন, যজ্ঞের থেকে বৃষ্টি হয় এবং হোম ইত্যাদি বৈদিক কর্ম থেকে যজ্ঞ হয়।
বেদ থেকে কর্মের উৎপত্তি। বেদ পরব্রহ্মের থেকে জন্মেছে। তাই যে ব্রহ্ম জগৎ জুড়ে আছেন, তিনি সদা, সর্বদাই যজ্ঞে বর্তমান আছেন।
ভগবান অর্জুনকে বলেন যে যাঁরা এই কর্মবৃত্ত অনুযায়ী না চলেন, ইন্দ্রিয়সেবায় আসক্ত সেই পাপী ব্যক্তির জীবন বৃথা। কিন্তু যে ব্যক্তির আত্মা সকল প্রকার প্রীতি ও সন্তুষ্টি লাভ করেছে, তাঁর নতুন করে কিছু প্রয়োজন হয়ে না। এই জগতে তাঁর কোন কর্ম করবার প্রয়োজন হয়ে না। কিন্তু কর্ম না করবার জন্য, কোন পাপ তাকে স্পর্শও করে না। ইচ্ছে চরিতার্থ করবার জন্য অন্য কোন প্রাণীর আশ্রয়ও নিতে হয়ে না।
তাই সকল প্রকার ফলের আশা ত্যাগ করে কর্ম করা উচিত। এই ধরনের অভিপ্রায় মুক্তির পথ প্রশস্ত করে থাকে।
মহাপুরুষেরা কর্মের দ্বারা জ্ঞান লাভ করে থাকেন। তাই লোক শিক্ষার প্রয়োজনে অর্জুনেরও কর্ম করা উচিত।
শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি যা যা করেন, সাধারণ মানুষ তাঁদের অনুসরণ করে থাকে। শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিরা যা যা ঠিক করেন, সাধারণ মানুষ তাই মেনে চলেন।
শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বললেন যে তাঁর কিছু করবার নেই। এর কারণ এই ত্রিভুবনে এমন কিছু নেই তিনি পেতে পারেন না। তবুও তিনি কর্ম থেকে বিরত থাকেন না। তিনি সকল প্রকার আলস্য ত্যাগ করে কর্ম করেন। এরূপ না করলে, এই মর্ত বাসী তাঁরই অনুগামী হবে, যা কোনভাবেই কাম্য নয়।
কর্ম ছাড়া এক মুহূর্তও অতিবাহিত করা সম্ভব নয়। তাই তিনি কর্ম না করলে, এই বিপুল সৃষ্টি সংকটে পড়বে নিশ্চিত রূপে। বর্ণসংকর তৈরি হবে। বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। এবং তাঁর দোষেই সব মানুষ ধ্বংস হয়ে যাবে।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।