পড়ে আছে সভ্যতার গলিত শব গৃহস্থালীর এঁটোকাটা মেখে।
আমার পুরু চোখ ঠিক করে ফ্রেম, দেখি, সন্দেহে শুঁকে যাওয়া চতুস্পদের লেজ নাড়া, ঝিরিঝিরি উড়ে আসে হলদেটে কৃষ্ণচূড়ার পাতা, আহা!
অনবদ্য কম্পোজিশন হলেও হতে পারতো….
কিন্তু আমি চিত্রগ্রাহক নই।
পাশ কাটিয়ে দেখি বাজার বসেছে কত! ‘এখানে মহামারী প্রবেশ করতে পারেনি’, রটনা এমন।
থলে দোলা পৃথুল গৃহস্থ দু আঙুলে তুলে দেখে লাল টকটকে কানকো, খাবি খাওয়া রুই কাটাকুটি হয় কলাপাতায়। ডিম, নাড়িভুঁড়ি, আঁশটুকু আলাদা জড়ো। ওসবের খদ্দের আলাদা।
সংসারী সুখ উপচে পড়ে ইতিউতি।
কিন্তু আমি গল্পকারও নই।
অভ্যাসে কিনে ফেলি গোটা দুই টি-শার্ট, ছেলের বারমুডা, গৃহিণীর রূপটান।
সাথে ম্যাচিং মুখ-বন্ধনী, স্যানিটাইজার, মাল্টি ভিটামিন, মহামৃত্যুঞ্জয় বটি, আর্সেনিক আ্যালবাম। তীব্র গতিতে ছুটে যায় সাদা গাড়ি, লাল ক্রশ। ‘ভগবান মঙ্গল করুন’….অদেখা রুগীর দিকে ছুঁড়ে দি দুটো প্রার্থনা।
ভাগ্যিস আমি কোভিড-যোদ্ধা নই!
আমি সুনাগরিক। সাবধানে বাজার করি, অফিস করি, দূরত্ব বজায় রাখি ফিতে মেপে। সন্ধ্যায় চা-মুড়ি-বিতর্ক সভার পর ফোন করে চলি উৎকন্ঠায়। পরশু যে প্রতিবেশী ফিরেছিল, চারটে আম-কলা-লেবু রেখে আসি দোড়গোড়ায়। এ সময় ফল খেতে হয় বেশী বেশী। প্রোটিন ও।
অথবা মদ। দিশি কিংবা বিলিতি।
আমি সমাজের ঠিকেদার তো নই ই।
আমি ততটুকুই মানুষ যতটুকু হলে নাম গোত্রহীন ‘ভীড়’ হওয়া যায়। যে ভীড় প্রশ্ন করেনা, উত্তর আশা করেনা। আমি যান্ত্রিক অভ্যাস বশে মুঠোহাত তুলেও শিউরে উঠে গা ঢাকা দি। যদি ছবি ওঠে নজরদারি ক্যামেরায়! ফুসফুসে চাপ বাড়ে….
সংক্রমণের গ্রাসে পড়ি আমি। পড়ে আরো একজন, তারপর আরো…আরো….
রাষ্ট্র সুখী হয় নতজানু ছায়াশরীর দেখে। আমি রাজনীতিক কখনই ছিলাম না।