• Uncategorized
  • 0

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব – ৫)

সুমনা ও জাদু পালক

সুমনা যখনই ওদের সঙ্গে দেখা করতে ওখানে যায়, তখনি বাড়ি থেকে কিছু না কিছু খাবার নিয়ে যায় ওদের জন্য । জামার পকেটে, প্যান্টের পকেটে পাখিগুলোর জন্য কখনো চাল, কখনো গম ,কখনো বা ক্যারি প্যাকেটে জলে ভেজানো ছোলা নিয়ে আসে। ঘরে কিছু না থাকলে নিদেনপক্ষে মুড়িও নিয়ে আসে পকেটে ভরে।
শিব মন্দিরের সামনে ফাঁকা জায়গাটায় বসে ওদের ডাকে সুমনা। ওরা সুমনাকে চেনে। সুমনার সঙ্গে খুব ভাব পাখিগুলোর। তাই সুমনা ওদের ডাকলেই ওরা একে একে চলে আসে। ওরা ভিড় জমায় সুমনার চারিধারে। ওর হাত থেকে চাল খায় ,গম খায়। কেউ কেউ আবার মাঝে মাঝে চড়ে বসে ওর কাঁধে।
সুমনা ওদের জন্য শুধু খাবার নিয়েই যায়না, কেউ আহত হলে সুমনা তাদের শুশ্রূষা করে। ওদের পা কেটে গেলে শিব মন্দিরের পিছন থেকে ‘লাল পাতা’ তুলে আনে। তারপর নদীর জলে পাতাগুলো ভালো করে ধুয়ে হাতে পিষে ক্ষত স্থানে লাগিয়ে যত্ন করে বেঁধে দেয়। কোন পাখির ডানা বা পা ভেঙে গেলে নদীর পাড়ে ঝাঁকড়া আমগাছটায় চেপে ‘হাড়জোড়া’ লতা নিয়ে এসে ভাঙা জায়গাটা ভালো করে বেঁধে দেয়।এমনি অনেক রকম গাছ গাছড়ার ওষুধ দিয়ে অসু্স্থ পাখিদের সুস্থ হয়ে উঠতে সাহায্য করে সুমনা। আর এ সমস্তই সে শিখেছে হাসিখুশি দিদার কাছ থেকে।
হাসিখুশি দিদা গান পাগল চিরপ্রসন্ন দাদুর বৌ। গ্রামের উত্তরে ‘শতদল দিঘি’র পাড়ে গগন পীরের মাজারের পাশেই ওদের ছোট্ট আখড়া। অবশ্য আখড়াতেই বা ওরা থাকে কতক্ষণ? সক্কাল সক্কাল ঘুম থেকে উঠে স্নান সারে । তারপর ঠাকুর পূজো সেরে, ,সামান্য পুজোর প্রসাদ খেয়ে, দুজনে বেরিয়ে পড়ে মাধুকরীতে।ফিরতে ফিরতে দুপুর। রান্না-বান্না সেরে খাওয়া-দাওয়ার পাট চুকতে চুকতে বিকেল হয়ে যায়। সন্ধ্যেবেলায় আখড়ার ঠাকুরের পূজো, আরতি ইত্যাদি সারার পর বসে গানের আসর। সেই আসরে গ্রামের বিভিন্ন বয়সের গানপ্রিয় মানুষজনেরা হাজির হয়। অনেক রাত পর্যন্ত চলে সে আসর।
যতদিন ওরা গ্রামে থাকে মোটামুটি এই নিয়মেই চলে। কিন্তু মাঝে মাঝেই ওরা দুজনে গ্রাম ছেড়ে কোথায় যেন উধাও হয়ে যায়। ফিরে আসে বেশ কিছুদিন পর। দেখা হলে সুমনা জিজ্ঞাসা করে,” তোমরা কোথায় গেছিলে গো হাসিখুশি দিদা, চির প্রসন্ন দাদুর বোনের বাড়ি’মেঘডুবি’ গ্রামে?”
হাসিখুশি দিদা এক মুখ মিষ্টি হাসি হেসে বলে,”নাগো, এবারে আমরা গেছিলাম ‘আকাশনীল’ গ্রামে।”
— বাহ! কি সুন্দর গ্রামের নামটা —আকাশনীল! গ্রামের নাম এরকম হয় নাকি?
— ওই দেখো, হবেনা কেন? মানুষের যদি সুন্দর সুন্দর নাম থাকতে পারে ,গ্রামের থাকতে পারেনা?
—- কেমন দেখতে গ্রামটা, কি কি আছে হোথায় আমার বলবে একটু?
—- বলবো ,সব বলব তোমায়। বিকেল বেলায় তুমি যখন আখড়ায় যাবে, তখন সব বলব ‘রাইকিশোরী’। চিরপ্রসন্ন দাদু বলে।
চিরপ্রসন্ন দাদু সুমনাকে ‘রাইকিশোরী’ বলে ডাকে।
অনেকদিন দেখা হয়নি ওদের সঙ্গে। মনে হয় আবার কোথাও বেরিয়ে পড়েছে।
নাঃ, আর দেরি করলে হবে না। বাদল দাদু কেন ডেকে পাঠিয়েছে দেখতে হবে। মাকে বলে যেতে হবে তো।
মায়ের কাছে আসে সুমনা। মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে, মা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। মা কি ঘুমোচ্ছে? ক’দিন জ্বরে ভুগে খুব রোগা হয়ে গেছে মা । ছোটবেলায় সুমনা দেখেছে, মার বেশ গোলগাল পুতুলের মত চেহারা ছিল। মার ডাকনাম তো ‘পুতুল’, ভালো নাম সুনয়নী ।
মায়ের গায়ের রং বেশ ফর্সা গোলাপি গোলাপি। কিন্তু কয়েকদিন জ্বরে ভুগে মায়ের গায়ের রংটা ও কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। মাকে ঘুম থেকে ডাকবে কি ডাকবে না ভাবছিল সুমনা। হঠাৎ ই চোখ মেলে তাকায় মা। সুমনাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একটু হেসে খুব ধীরে ধীরে জিজ্ঞাসা করে, কিরে, কিছু বলবি আমাকে?
—— আমি একটু বাইরে যাব মা।
—– কোথায়, নদীর পাড়ে তোর সেই পাখি বন্ধুদের দেখতে?
—- বাদল দাদু দেখাো করতে বলেছে মা।
—- ওমা, তাই!তা কে খবর দিল তোকে?
— পুটু পিসি।
—- কখন এসেছিল পুটু? আমাকে ডাকলি না কেনো?
—– তখন তো তুমি ঘুমাচ্ছিলে মা। তাছাড়া পুটু পিসির খুব তাড়া ছিল। ফার্স্ট বাসটা ধরতে যাচ্ছিল।
—ও।
— আমি তাহলে বাদল দাদুর কাছে যাব মা?
—-খেয়েছ কিছু? মুড়ি টুড়ি? মুড়ি আছে তো টিনে?
—-আছে। তুমি খাবে এখন?দেব?
—- আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না মা।
—- চৌকির ডান দিকে খাবার জল ঢেকে রেখেছি গ্লাসে, পিপাসা লাগলে খেও।
—- ও বাবা, মেয়ে তো আমার পাকা গিন্নি হয়ে গেছে! একবার আমার কাছে আয় তো মা।
—-কেন?
—– একটু আদর করে দিই আমার মেয়েটাকে।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।