জৈষ্ঠ্যমাসের একপাহাড় রোদ।জ্বলে যাচ্ছে গোটা শরীর। বাবার গা থেকে টপটপ করে জল পড়ছে।অথচ তিনি গলা ফাটিয়ে গাইছেন, “ওঠরে চাষী জগতবাসী ধর কষে লাঙল”
আমরা ভাইবোনেরা বাবার দিকে তাকিয়ে আছি অবাক দৃষ্টিতে। মা নিশ্চুপ। ঠাকুমা পড়ছেন “বিষের বাঁশি”।
সেই মূহুর্তে ঘরের আবহাওয়া একদম থমথমে।যেন একটা দামাল কালজৈষ্ঠ্য ভর করেছে আমাদের পাঁচজনকে ।
বাবা শোনাচ্ছেন কিভাবে লেটো গানের দল থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সৈনিক হবার রাস্তা তৈরি করেছেন সাম্যবাদী এক যুবক। কিভাবে উর্দু গজলের নয়া ঘরানা থেকে “ধুমকেতু”র মতো তাঁর উদ্ভাস হয়েছে নিজস্ব “অগ্নিবীণা”য়।
মা বলছেন অসম বিবাহের কথা।মা বলছেন হিন্দু মুসলিমের এক থালায় পাতা সংসারের দাম্পত্যআলোর ইতিবৃত্ত ।মা ঠাকুমা মিলে একত্রে বলছেন আজ থেকে প্রায় একশো বছর আগের সামাজিক পরিস্থিতিতে কাজী নজরুল ইসলাম এবং প্রমিলা সেনগুপ্ত’র বৈবাহিক লড়াইয়ের কাহিনী।
আমরা শুনছি এক টুকরো চুরুলিয়ার আকাশে-বাতাসে কী তেজালো উত্তাপ
আমরা দেখছি সেই রুটির দোকানের শিশুশ্রমিকের হাতে আটার মন্ড আর চোখে যুদ্ধমাঠ
আমরা বুঝছি। আস্তে আস্তে সবটা বুঝছি।একটা জ্বলন্ত সূর্য কিভাবে এক এক ডিগ্রী করে হেলতে থাকে পিক্সডিসিজ নিয়ে
সেই মূহুর্তে আমরা ভিজে যাচ্ছি সবাই।আমাদের টালির চালে বৃষ্টি হচ্ছে ঝমঝমিয়ে। আমাদের প্ল্যানচেটে এসে স্বয়ং নজরুল গাইছেন,”সই ভালো করে বিনোদ বেনী দে বাঁধিয়া দে, মোর সখী যেন বাঁধা থাকে বিনুনী ফাঁদে, বেনী বাঁধিয়া দে “