• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে পিয়াংকী (পর্ব – ৫)

স্টেশন থেকে সরাসরি

ছাদকাহিনী আর বাবার হাজিরাখাতা

ইংরেজি চব্বিশে শে মে ২০২১
বাংলা নয়ই জৈষ্ঠ্যমাস ১৪২৮… সোমবার

আজ অনেকদিন পর ছাদে এলাম। খানিক একা একা কথা বললাম।পুরোনো কিছু স্মৃতি মনে পড়ে যাওয়ায় হাসলামও খুব। একা। একদম একা।
আগে রোজ এসব করা একপ্রকার নিশ্চিত ছিল, বলা ভালো অভ্যেস ছিল।স্টেশনে পৌঁছে ট্রেন ধরার মতো, আমার নেশা ছিল কাজকর্ম ঝকঝকে পরিস্কার করে শেল্ফতাকে তুলে দিয়ে এক দৌড়ে ছাদে গিয়ে হাজিরা দেয়া।
এই হাজিরা দেয়ার কথাতেই মনে এল, আমি তখন দশম শ্রেণির ছাত্রী, সদ্যস্নাত জুঁইফুল।বার্ষিকমাধ্যমিক শেষ হয়েছে সবে , বাবার আদেশমত খুব গল্পের বই পড়ছি, প্রেমিকের দেওয়া প্রেমপত্রটিও, লুকিয়ে, বইয়ের ভিতর আটকে নিয়েছে নিজের বোতাম।হঠাৎই বাবার তৃতীয় চক্ষু কপালে। শেষ হলো বইপড়ার ইতিহাস। নির্দেশ এলো রোজকার মতো হাজিরা দিতে হবে ছাদে।
আসলে উঁচু থেকে নীচে তাকালে নক্ষত্রের আনাগোনা টের পাওয়া যায় ,একটা ভারহীন শরীর কেমনভাবে যেন নিখুঁত করে দিতে শুরু করে আপনাকে।উঁচু আর নীচুর মধ্যে দূরত্ব যত বেশি হয় আপনিও তত বেশি নিখুঁত হতে শুরু করেন।
ছাদও অনেকটা সেইরকমই মায়াহীন একটা জমির মতো। চাষ করা আর ফসল ফলানোর পর যার ওপর আর কোন অধিকার কার্যকর হয় না।
সংসার সন্তান সমাজ … অনেকটা পরিপাটি ভাতের থালা। নুনলেবুর মতো তাকে সর্বপ্রথম পরিবেশন করে সারাদিনের সহিংস আন্দোলনের(ঠিকই পড়েছেন অহিংস বলিনি, ) পর আজও ঠিক একটু সময় হিচড়ে টেনে বের করে লাফিয়ে লাফিয়ে চলে যাই ছাদে।
আপনারা সবাই জানেন আমি ট্রেনফ্যান একজন। স্টেশন আমাকে টানে মারাত্মক। জীবনের প্রতিটি কাইক্যাচড়া অলিগলি খানাখন্দ পুকুরদিঘী ,তার ওঠানামা সবকিছুই শূন্য মনে হয় রেললাইনের কাছে গিয়ে দাঁড়ালে।
ট্রেন চলে যায়, কতজন নেমে পড়েন কতজন ওঠেন। আমি দূর থেকে সরাসরি তাকিয়ে থাকি ওদের দিকে। স্টেশন মাস্টারকে বরাবরই আমার ভিখিরি বলে মনে হয়
পুরোনো চাল ভাতে বাড়ুক বা সমান থাকুক, বাবার শেখানো মতো ভরসন্ধ্যায় ছাদে মাদুর পেতে বাটিতে মুড়ি-চানাচুর মাখা নিয়ে হাজিরাখাতা খুলে যখন বসি তখন দেখতে পাই এই মধ্যযামে এসেও আমার চোখেমুখে লেপ্টে রয়েছে থোকা থোকা হলুদ আলো। গোছা গোছা প্রেমিকআলো।সেইসময় নিজেকে বড় সুন্দরী মনে হয়
ভাবি,ভাগ্যিস বাবা ছাদে উঠিয়ে ট্রেন চালানোটা শিখিয়েছিলেন একদিন। ঠিক সেই সময় দেখি আমার মায়ের হাতে বোনা টগর গাছটা একতলার প্ল্যাটফর্ম অতিক্রম করে ছাদের ওপরে উঠে এসেছে।আমি তাকে বলি “পরেরজন্মে স্টেশন হবি?”

আমার কথা শুনুন। মাছের বাজার সামলে একবার রেললাইন উদ্বোধন করে দেখুন। বিশ্বাস করুন পরেরদিন থেকে নিজেকে বিলগেটস ভাবতে আপনাকে গুগলের সাহায্য নিতে হবে না

অনেকক্ষণ হয়ে গেল। আমার সঙ্গে আপনারাও আজ বেশ কিছুটা সময় ছাদে পায়চারী করছেন। পা ব্যাথা করছে নিশ্চিত।আজ তবে এটুকুই।
আমি পিয়াংকী। এতক্ষণ “স্টেশন থেকে সরাসরি ” ছিলাম আপনাদের সাথে।
পরবর্তী স্টেশনে অন্য কেউ অন্য কিছু…
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।