• Uncategorized
  • 0

মার্গে অনন্য সম্মান ডঃ সুকান্ত কর্মকার (সর্বোত্তম)

অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পরিবার

সাপ্তাহিক প্রতিযোগিতা পর্ব – ৪৫
বিষয় – সমর্পণ / শিশুশ্রম / মানবিকতা / বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

অন্য শৈশব

“কীরে পচা, প্লেট আর থালাগুলো ধোয়া হল? সেই তো কখন নিয়ে বসেছিস। তোর আর কাজে মন নেই দেখছি । খদ্দের টেবিলে বসে আছে, তাড়াতাড়ি কর। ভালো করে ধুবি”… দোকানের মালিক চিৎকার করে বলে ওঠে। ” এক্ষুনি আনছি বাবু, হয়ে গেছে” বলে ওঠে পচা। পচা বছর দশেকের ছেলে। বাড়ি দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার প্রত্যন্ত গ্রামে। বাবা ক্ষেতমজুরের কাজ করে। জমি-জমা কিছু নেই। তিন ভাই-বোনের মধ্যে পচাই সবথেকে বড়। অভাবের সংসারে তিন জনকে পালন করা সম্ভব হচ্ছিল না। পচা বড় হচ্ছে, কিছু কিছু  রোজকার করতে পারলে ঘরেও টাকা আসবে। সেই আশাতেই গ্রামের এক দুঃসম্পর্কের আত্মীয়ের হাত ধরে কলকাতায় পাঠিয়েছে তার বাবা। সেই থেকে তার ঠিকানা বাবুঘাটের এই ছোট হোটেল। হোটেলেই খাওয়া-দাওয়া মেলে, রাত্তিরে হোটেলের ছোট ঘরের একপাশে রাঁধুনিকাকুর সাথে ঘুমোয়। সকাল থেকে শুরু হয়ে যায় তার কাজ। বেলা দশটা-সাড়ে দশটা থেকে চালু হয়ে যায় হোটেল। তার আগে সব টেবিল পরিষ্কার করা, পেঁয়াজ-রসুন ছাড়ানো আরও অনেক কিছু সামলাতে হয় তাকে। দুপুরের পর বিকালটায় একটু স্বস্তি, তারপর সন্ধ্যা থেকে আবার সেই হোটেলের কাজ। ভুল হয়ে গেলে তিরস্কারও জোটে কপালে। প্রথম প্রথম বাড়ির জন্য, গ্রামের বন্ধুদের জন্য মন খারাপ লাগত। এখন সয়ে গেছে। বিকাল হতে পচা মালিকের কাছে এসে বলে, “বাবু, আমাকে দশটা টাকা দেবে? চিপস্ কিনে খাব।” – সেকি রে, তুই যদি বার বার টাকা চেয়ে নিস তবে তোর বাবাকে টাকা পাঠাবো কি করে? এই তো সেদিন ফুচকা খাবি বলে টাকা নিলি। – দাও না বাবু, বাকি টাকা পাঠাবে। মালিকের কি মনে হল, দশ টাকা হাতে দিল পচার। পচা একটা চিপসের প্যাকেট  কেনে। তারপর এসে বসে গঙ্গার ধারে একটা বেঞ্চে। তখন পড়ন্ত বেলার রোদ খেলে যাচ্ছে গঙ্গার বুকে। গঙ্গার পাশে ঘেরা পার্কে একদল বাচ্ছার ভিড়। কয়েকজন লোক গঙ্গার জলে বিকালের স্নান সারছে। ওদের
সাথে কয়েকটা ছোট-বড় ছেলে জলে লাফালাফি করছে। গঙ্গার বুকে পারাপার করছে বড় বড় লঞ্চ, ট্রলার। চিপস্ খেতে খেতে সেইসব দৃশ্য দেখতে থাকে পচা। তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে তাদের গ্রামের পাশে বয়ে যাওয়া নদী, ভটভটি চেপে খেয়া পারাপার! এঁটেল কাদা মাড়িয়ে আলপথে হেঁটে যাওয়া.. কেমন যেন উদাস হয়ে যায় পচা। গ্রামের ফেলে আসা শৈশবের ছবিগুলো একে একে ওর মনের দরজায় কড়া নাড়তে থাকে…..
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।