সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে পিয়াংকী (পর্ব – ৪)

স্টেশন থেকে সরাসরি
ডাউন ট্রেনের পতঙ্গ আর পিঁপড়ে
আজ সতেরোই মে ২০২১,
বাংলার দোসরা জৈষ্ঠ্যমাস ১৪২৮, সোমবার
আজ ট্রেন বন্ধ। মানুষের যাতায়াত মরে যাচ্ছে। আবহাওয়ায় শুধু ট্রেন বাতিলের সিদ্ধান্ত । অথচ এরকম পরিস্থিতিতেও আমাকে স্টেশন যেতে হবে।
স্টেশন আমার খিদে।
স্টেশন আমার ধানমাঠ,
স্টেশন আমার অক্সিমিটার।
দৌড়ে হোক বা হেঁটে অথবা হাঁপাতে হাঁপাতে…
স্টেশন আমার প্রফেশন,
স্টেশন আমার প্যাশন
প্রায় বছর বিশেক আগে হাঁটতে হাঁটতে একদিন অনেকটা পথ চলে এসেছিলাম নদীর দিকে।গঙ্গার দূরত্ব আমাদের বাড়ি থেকে মাত্র দশ মিনিট। ধারে বসেছিলাম। ওপার দিয়ে ট্রেন যাচ্ছিল। লঞ্চে উঠে নদী পেরিয়ে আমারও ট্রেন ধরার কথা।বাড়ি থেকে সেইমত সময় হিসেব করেই বেরিয়েছি।আচমকা একটা গঙ্গাফড়িং এসে বসল কাঁধের উপর। খুব ভারী।ফুঁ দিলে সরে না, হাত দিয়ে তাড়ালেও ওঠে না।মহামুশকিল। ডাকলাম নদীর চরে পড়ে থাকা একটা হাতনৌকার একজন মাঝিকে। সে এল সাথে এল তার দলবল যন্ত্রপাতি । গঙ্গাফড়িং ততক্ষণে আরও চেপ্টে বসেছে শরীরের সাথে।
বিফল হয়ে সবাই চলে গেল।বাধ্যতামূলক ওটাকে কাঁধে চাপিয়েই পার হলাম পথ।আসলে হাজার আটকানোর চেষ্টাচরিত্র করার পরও যেমন তেলচিটে গন্ধ সরে না ছাতকুরা লাগা খাদ্য থেকে ঠিক তেমনই মানুষের গা থেকে পতঙ্গও মরে না কোনদিন। যতদিন মানুষ বাঁচে তার ছায়াবৃত্ত ধরে সেও বাড়ে।বাড়তেই থাকে।
পতঙ্গভুককে চেনাতে চেনাতে সে কলসপত্রীর আকার ধারণ করে তবু একটি বারের জন্যও নড়ে না অবস্থান থেকে ।
আমরা সবাই এক স্টেশন থেকে পরের স্টেশনে পৌঁছে যাই।কেউ কামরায় দাঁড়িয়ে থাকি কেউ সিট পাই কেউ আবার প্ল্যাটফর্মেই কাটিয়ে ফেলি জীবনের হাফ সারাংশ।
এই নামাওঠার মাঝে যখন একজনের গা ঠেকে যায় আরেকজনের সাথে তখন অকালবৈশাখী হয়। চলতি পথে মনও ধাক্কাধাক্কি হয়।হবে না ই বা কেন, ট্রেনে তো খুব ভীড়। এক মন চাপাচাপি করে বসে আরেক মনের পাশে, আরবসাগরের জলে সুনামি ওঠে। পরদিন ভোরে খবরের কাগজে ফলাও করে প্রকাশ হয় নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন।
খোঁজ এনে দিতে পারলে ভারতীয় মুদ্রায় দশ হাজার টাকা নগদ।
“তুমি আমাকে ধরিয়ে দিও আমি তোমায় ধরিয়ে দেব “এই শর্তে আমরা দু’পয়সা কামানোর ধান্দা খুঁজে ফেলি। আসলে পতঙ্গ হল লক্ষ্মী, ধনলক্ষ্মী। ও যতক্ষণ ফড়ফড় করে ততক্ষণ তুমি স্টেশনে স্টেশনে ঘুরে এ কামরা ও কামরা নেচে বেড়াও।আর ডানা ঝাপটানো বন্ধ হয়ে গেলেই তোমায় ঘিরে ধরে আধকামড়ানো আপেলের লালসাদা মিক্সকালার
আমাদের যাদের চোখ আছে তারা দেখি বাকিরা…
স্টেশন হল অবসেশনের মতো। একটু করে করে অধ্যায়ের সর্বোৎকৃষ্ট পরিমিতিটাও একসময় বৃদ্ধ হয়ে…
আজ এটুকুই।
আমি পিয়াংকী! এতক্ষণ “স্টেশন থেকে সরাসরি” ছিলাম আপনাদের সাথে।