• Uncategorized
  • 0

T3 || আমি ও রবীন্দ্রনাথ || বিশেষ সংখ্যায় মৌসুমী মণ্ডল দেবনাথ

হলুদ প্লাজমা

তখন দারুণ গ্রীষ্মকাল…
সেখানে লালমাটির পথে ধুলোয় ধুলোয় মায়া
বেগনি রঙ লেগে আছে সবুজ পাতার কপালে
তখনও মাঠের ঘাসে ঘাসে ছোট্ট সাদা মধুফুল,
ইস্কুল যাওয়ার প্রাচীন পথে পথে
লুটিয়ে আছে আমাদের জল থইথই সমূহ কথা এখানেই …
আমি এখনও তাদেরকে চোখের ক্যামেরায় তুলে রাখি।
অনেক শতাব্দীর পরে কিশোরীবেলার চাঁদ ওঠে নিমবনের মাথায়,
শুধু ঝুঁকে যাওয়া মেরুদণ্ড বেয়ে আর নেমে আসে না চাঁদের আলো,
এ শহরের মানুষেরা আর চেনে না তোমাকে
কেউ মনে রাখেনি তোমার উদাস বাউল সুর
শুধু চৈত্রের দলছুট বিকেল বাতাস ভোলেনি ঢেউয়ের জন্মকথা…
কেউ কেউ এখনও পদ্মার পাড়ে বসে সন্ধের ঢেউ থেকে সোনা তুলে নিয়ে যায় বিবাহবাসরে।
ঢেউয়েদের দেখা যায়, চেনা যায়
দেখা আর পাওয়া যায় না শুধু
সেই চড়কের মেলায় হারিয়ে যাওয়া বাতাসটুকুর
আজকাল অরণ্য আর রাজপথ হয়েছে লাল, রক্তের মতো
কিন্তু মুখ জুড়ে খুব হলুদ ফুলের ব্র্যান্ডেড মুখোশ
হসপিটালের সবুজ পর্দারাও গেছে পাল্টে।
মৃত্যুকে ম্যাঙ্গো ইয়েলো কালার বলে
দেয়ালে দেয়ালে মিছে রঙ করে গেছে
একদল না-মানুষ।
শুধু ফেরিওয়ালারা জানে
এখন দুপুর-রৌদ্র কঠিন হলুদ প্লাজমা খোঁজে শুধু ,
অমলতাস আসলে একটি সরল রঙের টপ্পা এবং
গিটারের তার ও সোমলতার সুর,
বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালের গায়ে বোকা বোকা মিথ্যে বিপ্লবী পোস্টারগুলোও হলুদপোকার খাদ্য
শুধু রঙবাজ পদের গায়ক পাখি ভানুসিংহ জানেন
কোথাও নাকি একদল ছেলেমেয়ে বানিয়েছে
লাল রঙের এক মৃত্যুঞ্জয়ী ওষুধ।
কোথায় চলে গেছে পাড়ার রকবাজ ছেলেরাও
শুধু তারাভরা রাতে যাওয়ার আগে ওরা তুলে নিয়ে গেছে পলাশের রঙটুকু।
যা কিছু এতদিন আমাদের ছিল
তারা সবই বেমালুম নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে।
একরাতে প্লাতা নদীর তীরে এক খোলা জানালায়
দাঁড়িয়ে ওকাম্পো বললেন, কেন তাঁকে
পরিপাটি করে ম্যাগনোলিয়ায় সাজানো হলো না…
গোটা পৃথিবীটার সব জনবসতিই যখন মৃত !
তখনও পৃথিবীর এক প্রাজ্ঞ কবি রবি ঠাকুর
খুঁজে বেড়াচ্ছে পেনক্রিয়াস সারানোর স্বরলিপি…
আমাদের সকলকে নস্যাৎ করে সিল্করুট পেরিয়ে আসা একশ বছরের এক বৃদ্ধা মেয়ে
আবার কাঁথায় ফোঁড় তুলে তুলে আঁকছে
আগামী শতাব্দীর মেশিনহীন গ্রামীণ জীবন
শান্তিনিকেতন আশ্রম…
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *