সূর্যের প্রথম কিরণ স্পর্শ করল এই ধরণীকে। ধরণী তৃপ। পবিত্র সূর্য কণায় স্নাত এই পৃথিবী উল্লসীত, উচ্ছসিত। এক নতুন প্রাণের আগমন ঘটতে চলেছে। মা তাঁর প্রথম সন্তানকে এই পৃথিবীর আলো দেখাতে চলেছেন। সন্তান ভূমিষ্ট হল। শুরু হল এক পরম যত্নে তার লালন পালন। কিছু সময়ের পর ওই ছোট্ট শিশুটি হাঁটতে শেখে, আদো আদো ভাষায় কথা বলে, জয় করে নেই সকলের মন প্রাণ।
এই শৈশব যেন একজন মানুষের কাছে চিরস্মরণীয়। শিশুটি একটু বড় হওয়ার পর, পাড়ার সকল বন্ধুদের সাথে মাঠে খেলতে যায়। তবে একা নয়। সঙ্গে কেউ না কেউ না থাকে। বেলা শেষে যখন সূর্য মামা তাঁর পাটে যান, ফিরে আসে সে আপন বাসায়। ঝাঁপিয়ে পড়ে মা ঠাকুমার কোলে। আদর, আবদার, আহ্লাদ, কত কিছুই না সেখানে রয়েছে!
এর ঠিক পর পর শুরু হয় স্কুল জীবন। নার্সারি। কান্নাকাটি, কিছুতেই বাবাকে ছেড়ে যাবে না সে। শেষে অনেক কষ্টেশিষ্টে, কার্যটি সুসম্পন্ন হয়। ধীরে ধীরে বড় হয় সে। শৈশব পেরিয়ে কৌশোর। এখন সম্পর্কের মানচিত্রে অনেকটাই পরিবর্তন এসেছে। সেই শিশু সুলভ আচরণও নেই। আবদারের মাত্রাটাও বৃদ্ধি পেয়েছে নিঃসন্দেহে। তবুও বাবা মা তাঁদের একমাত্র সন্তানের জন্য যতটা সম্ভব ততটাই করেন। যৌবনে কর্ম, বিবাহ এবং জীবনে একাধিক নতুন সদস্যের আগমনে, বাবা মায়ের সাথে সম্পর্কের আলো কিছুটা হলেও স্মিত হয়। সম্পর্কের রসায়নে আসে পরিবর্তন, নিস্তব্ধে! তবুও যেন কোথাও না কোথাও তাঁদের এই সন্তানের শৈশব লুকিয়ে থাকে। তাঁদের সেই পরম আদরের বাবুসোনা। মানতে কষ্ট হয় ঠিকই। কিন্তু কিছুটা হলেও নিরুপায় তাঁরা। সময় ও বাস্তবের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে তাঁরা অপারগ। কিন্তু এই প্রকৃতি লীলাময়ী। বার্ধক্যে, যখন তাঁদের আদরের বাবুসোনার শৈশব আরও একবার ফিরে আসে, যখন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে, তখন হয়ত বাবা মায়ের কথা মনে পড়ে। কিন্তু তখন তাঁরা এই মায়াধরণীর মায়া ত্যাগ করে বৈকুন্ঠবাসী হয়েছেন।
তাই বলা বাহুল্য শৈশব কোনোদিন আমাদের ছেড়ে যায় না। প্রতিটি জীবের মধ্যে সেই সারল্যভাব বর্তমান। তাই শৈশব কাল পরমেশ্বরের শ্রেষ্ঠ উপহার। এক চিরন্তন উপহার!!