মঙ্কা অনেকটা ধর্মের মত। সে ভারি অনায়াসসাধ্য, একবার আড়াল করতে পারলেই যা ইচ্ছা করা যায়।
পাগল! শব্দটা বুক জুড়ে হুহু শব্দগুচ্ছকে কামনা করে। ইস, মঙ্কা যদি পাগল না হত! মৌলী জানে মৌলীর মত এই অজয়নগরে আরও অনেক উঠতি সদ্য বুকগজানো মেয়ে আছে যারা মনে মনে মঙ্কাকে কামনা করে। কিন্তু নিরুপায়। শুধু মৌলীরা জানে কখন মঙ্কা স্নানের ঘাটে আসতে পারে। মৌলী তখন নিথর পাথর। মনে হয় সারা পুকুর পাড় ঘিরে এক অলৌকিক জগতের সৃষ্টি হয়েছে। এ যেন কোন এক ঐতিহাসিক গ্রীকরাষ্ট্র। সারা পুকুর পাড় ঘিরে দাঁড়িয়ে এথেনা, পোশেইডন, আর্টেমিস, হেরা, হার্মিস…। আর সবার মাঝখানে ধ্যানরত জিউস। সাক্ষাৎ গ্রীক দেবতা। আর গাছের আড়াল থেকে বহু আফ্রোদিতি।
মৌলী চেনে। সবাইকে না হলেও, কয়েকজনকে তো বটেই। চম্পু, চিনি, শম্পা, পায়েল, গৌরি, বাবলি, শুনু আরো কত কে! এমন কী সংগ্রাম কলোনির জলিবৌদির সবে পনের পেরোনো মেয়েটা অবধি। সব ক’টা মুর্তিমান আফ্রোদিতি, মিনার্ভা, সেরেস, ভেনাস, প্রসারপিনা। মঙ্কার অবশ্য গাছের আড়াল থেকে কোন ফিসফিসই কানে আসে না। শুধু মৌলী জানে সব। শুধু মৌলী দেখে এক সুঠাম পুরুষ দেহ। সামান্য উন্নত বৃহৎ পুরুষাঙ্গ। যেন কোনও অন্ধকার অরণ্য ভেদ করে সদ্য উত্থিত ম্যানগ্রোভ। সুগঠিত নিতম্ব, যেন রাজা বিক্রমাদিত্যের টিলা-সিংহাসন। কলাগাছের থোড়ের মত থাই, চওড়া পায়ের পাতা, কাঁধ, রোমশ বুক। মৌলী দেখে, সব দেখে, অপলকে দেখে, সবাই দেখে, নীরবে, নিঃশব্দে।
নিত্য সন্ধ্যার রুটিনে, ছাত্র পড়াতে পড়াতে মৌলী সবটাই ভুলে যায়। আবার মনে পড়ে রাতে। যখন পুরোনো বছরের ক্লাশের খাতার পাতা ছিঁড়ে ছিঁড়ে বেড়ার ওপরে আচ্ছাদন দেওয়া দেখতে দেখতে মৌলী ঘুমোবার চেষ্টা করে। ঘুম আসে আবার আসে না। তন্দ্রা বাসা বাঁধে চোখের পাতায় পাতায়। ভীষণ আদর পেতে ইচ্ছে করে সেই গ্রীক দেবতার। সারা শরীরে এক অদ্ভুত রোমন্থন। অজানা শিহরন। শরীরের ঘরে ঘরে অদ্ভুত প্রদীপ জ্বলে, লজ্জায় চোখ বুজে ফেলতে ইচ্ছা করে। কখন ইচ্ছায়, অনিচ্ছায় দেহের সর্বত্র নিজের আঙুল ভ্রমণ করতে থাকে। নাতিউচ্চ টিলা ছুঁয়ে, গভীর উপত্যকা পেরিয়ে মসৃণ চড়াই ভেঙে রহস্যময় অরণ্যে।
তৃষ্ণার্ত মৌলী ঘুমোয়।
ওদিকে নিষ্পলক মঙ্কা।
দেবতাদের ঘুমোতে নেই।