লাখো লাখো মাথা ঐ হয়েছে সামিল পদব্রজে রাজপথে,
বাসা ফেরবার অঙ্গীকারে অসাধ্যকে যেন তারা করবেই সাধন।
দৃঢ় প্রত্যয় পুঁজি নিয়ে তারা সকল ঝঞ্ঝা করবে লঙ্ঘন,
করবে না পরোয়া যাত্রাপথে আগত আর কোনো অদৃশ বাধন।
ওদের চোখের তারায় ক্ষণে ক্ষণে যেন স্ফুলিঙ্গের মত উঠছে জ্বলে প্রবঞ্চনার অনল।
পরিবার পরিজনেরা সব কাটাচ্ছে বসে উদ্বেগের প্রহর ; সেবন করে অধীর প্রতীক্ষার গরল।
বাজি রেখে বিধাতার নিকট তাদের ভালোবাসা,
নিরন্তর ওদের ভার্যারা যেন চেলে যাচ্ছে পতির মৃত্যুঞ্জয়ী পাশা।
ফিরে যদি আসে সকল বাধাবিপত্তি জয় করে একবারের জন্যও,
করবে পরশ প্রাণনাথের কায়া ; পূর্ণ হবে চিত্তের একমাত্র নিবিড় আশা।
ওরা বহুদূর দেবে পাড়ি; মনে ক্ষীণ আশা বাসা ফিরে পাবে দেখতে সন্তানের আনন
নাই বা থাক মুক্তগগনে বিহঙ্গের ন্যায় উন্মীলিত করার মতন ওদের পেলাব ডানা;
তা বলে কি আর ওদের নেই এটুক অধিকার যে
নিজ মুলুকেই প্রদেশ হতে প্রদেশান্তরে থাকবে না ওদের অবাধ আনাগোনা!?
মাইলের পর মাইল অতিক্রমণ করে ওদের শ্রান্ত চরণযুগল ক্ষান্ত হয়ে
যখন খুঁজে নিচ্ছে বিশ্রামের জন্য একটু নির্বিদ্ম আশ্রয় এই সড়কেই,
তখনই পণ্যবাহী কিছু শকট ঘানির মত যাত্রাপথে অক্লেশে ওদের পরিশ্রান্ত তন্বী
ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে ভূতলে পিষে বিলীন করে দিয়ে যাচ্ছে পলকেই।
দিবানিশি একযোগে জনসাধারণের পায়ের নীচের ভিত যারা করছে সুদৃঢ় ;
আবার তুলছে গড়ে মাথার ওপর সুরক্ষিত এক ছাত।
অত্যাশ্চর্যভাবেই সমাজের এই বিশ্বকর্মাদের দেহক্ষরিত
নির্ঝর রক্তপাত দেখেও থেকে যায় নির্বিকার ; স্বার্থান্বেষী এই মানবজাত।
জনহিতে সমর্পিত অকালে ঝরে যাওয়া ওদের অমূল্য জীবনের সন্দেশ আর রাখে না
মূক এ সমাজ; শুধু আঙুল তুলে বলে ওদের করুণ এই পরিণতির জন্য আর কেউ নয় ;
ওদের হঠকারী গৃহযাত্রাই কেবল দায়ী।
আসলে যে ওদের নেই কোনো নাম ; নেই কোনো জাত ; ওড়বার পাখনা না থাকলেই বা!
ওদের কেবল একটিই পরিচয় সমাজের সেঁটে দেওয়া সংকীর্ণ তকমা “পরিযায়ী”।