|| অণুগল্প ১-বৈশাখে || বিশেষ সংখ্যায় কৌস্তভ যোদ্দার
by
·
Published
· Updated
রুবিনা ম্যাম
স্কুল সেক্রেটারি পদে নিযুক্ত হওয়ার বেশ কিছুদিন পর শুনলাম হেডস্যার অবসর নিচ্ছেন ।সেই পদে যোগদান করবেন এক নতুন ম্যাম। হেড স্যারের কাছে নামটা শুনতে স্যার বলল -রুবিনা ,পদবিটা না বলেই তিনি নিজেকে অন্য কাজে আত্মনিয়োগ করলেন। নামটা শুনতে ই কলেজ জীবনের এক ছটফটানি, হাসিখুশি মুখের এক বান্ধবীর কথা মনে পড়ে গেল। যার সঙ্গে বহু যাবৎকাল সাক্ষাৎ হয়ে ওঠেনি ।বি.এ তিন বছর পড়া শেষ হওয়ার পর কিছুদিন কথা হতো কিন্তু ফোনটা হারিয়ে ফেলার পর অনেক কাছের বন্ধু বান্ধবীদের নম্বর হাতছাড়া করেছিলাম । সেই তালিকায় রুবিনা ও ছিল।
ভ্রম ভুলে ভাবলাম, ভারতবর্ষে রুবিনা নামে কত মেয়ে আছে!
হেড স্যারের বিদায় অনুষ্ঠান ছিল দশটা থেকে এবং পরপরই নতুন ম্যামের যোগদান করার সময় ছিল।কিন্তু আমি বিশেষ কারণ বশত ওই অনুষ্ঠানে যোগদান করতে পারিনি ।
তাই বেলা তিনটে নাগাদ স্কুলের দোরগোড়ায় পৌছালাম। গেটে ঢুকতেই স্কুলের কেরানির সাথে দেখা,আমাকে দাঁড় করিয়ে বলল-‘পুরানো হেড স্যার আপনার কথা খুব বলছিলেন ,শেষমেষ চলে গেলেন এইমাত্র।’
হাতের উপহার টা স্যারকে না দিতে পারায় নিজেকে খুব দোষী মনে হচ্ছিল।
কেরানি কথার মোড় পাল্টে বলল-‘নতুন ম্যামটা কথায় কথায় বেশ হাসেন।’ বেশি কথা না বাড়িয়ে কেরানির সাথে চললাম দোতালার স্টাফ রুমে।ম্যাম আপন-মনে টেবিলে মুখ গুঁজে কি কাজ করছিলেন ।কেরানি বললো -‘ম্যাম , ইনি আমাদের স্কুলের সেক্রেটারী কৌস্তুভ যোদ্দার।’ নতুন ম্যাম টেবিল থেকে মুখ তোলার পর একটু হতভম্ব ও বিস্মৃত হলাম ।তারপরই মাতোয়ারা উল্লাসে উভয়ের মুখে কিঞ্চিৎ হাসিতে ঘরে বাজলো -তুই! এখানে !
তারপর টেবিলকে মধ্যে রেখে চলল পুরানো সব স্মৃতিচারণ ।বললাম -মনে পড়ে সরকার স্যার একদিন পড়া না পারার সত্তেও হাসার কারণে তোকে অপমান করে ক্লাস থেকে বার করে দিয়েছিল। হেডস্যারের আসনে বসে থাকা ব্যাক্তির কাছ থেকে উত্তর পেলাম – ‘স্যার ওইদিন ওভাবে না বললে হয়তো আমি এই জায়গাতে বসতে ই পারতাম না।’
তারপর নেমে আসলো কলেজ ক্যান্টিনে সবাই একত্রে বসে, চায়ের পাত্রে ঠোঁট ছুঁইয়ে ফেলে আসা আড্ডার দিনগুলির গল্প। আর হাইল্যান্ড পার্ক, ঢাকুরিয়া, কলেজস্ট্রিট ,ভিক্টোরিয়া বিভিন্ন জায়গায় সবাই মিলে ঘোরার কিছু টুকরো মুহুর্ত ।চললো নিখোঁজ বন্ধু- বান্ধবীদের খবরা খবর ।আর থেকে থেকে পাকা দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে প্রতি কথার শেষে যেটি ফিরে ফিরে আসছিল সেটি হল বহু যাবৎকাল আগের নিখোঁজ সেই হাসিটা।