ফর্সা মুখ লালচে হয়ে আছে।জ্বর আছে।কপালে নরম ঠাণ্ডা হাত।চোখ মেলে রজত এক স্বপ্নের কাছে।
মুহূর্তে সচেতন হয়, ধড়মড় করে উঠে বসতে যায়।
—একদম উঠবে না।
মাথার কাছে দেবলীনা।
ডাক্তার দেখিয়েছ।
না।প্যারাসিটামল 650 খাচ্ছি।
তুমি শুয়ে থাকলে কাজ চলবে না।
–“সরি।
কিছু হয়েছে?”
বাচ্চাটার ডি এন এ ওর মা বাবার সঙ্গে মিলছে না রজত।
-“হুম”
কিছু বলতে চাও মনে হচ্ছে।
-“মোহিনীমোহন,পিতা রমনীমোহন
এক ভাই সুরেন্দ্র মোহন।”
ভাই নেই ।
-“ছিলো
আত্মহত্যা করেছে পাঁচ বছর আগে
কালিয়াচক, বাখরপুরে।”
ছেলে অতীন্দ্র ব্যবসা করে।কাপড়ের দোকান,দুটো।
স্ত্রী মনিকা মহেশপুরের মেয়ে।
এগুলো জানি আমরা।
-“অভিজিৎ দাশ নামটা কি শুনেছেন স্যর”
স্যরটা বাদ দাও এখন আমি অফিসে নেই।
নামটা চেনা।
-“কেন?
একটু ভেবে দেখুন
আমার জানা নেই কিন্তু এই কেসে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।”
দেবলীনা দ্রুত চিন্তা করে।
আসছি ,রজত উঠে যায় বাথরুমে
অভিজিৎ দাশ।
অভিজিৎ দাশ…..
ভবানীভবন,মিঃ তালুকদার, ছোট্ট চেম্বার
হঠাৎ আজানের আওয়াজ আর চিরিক করে মস্তিষ্কের আলোটা জ্বলে ওঠে।
মোস্ট ওয়ান্টেট এর তালিকায়
অভিজিৎ দাশ
২০১৬ থেকে নিঁখোজ। কালিয়াচক থানায় আগুন লাগানো, হিন্দু মুসলিম রায়ওট।দুজন অগ্নিদগ্ধ
গ্রেপ্তার চার ফেরার দুই।
অভিজিৎ দাশ এর কোনো খবর নেই।
কেস চলে গেছে সি আইডি র হাতে।
অভিজিৎ দাশ ফেরার ২০১৬ থেকে রজত।
একটা ট্রে দুটি পোর্সিলিনের কাপ কিছু কুকিস।
দেবলীনা হাত থেকে নেয়।
তুমি জ্বর গায়ে এসব কি জন্য করলে।আমি কি অতিথি?
ট্রে হাত বদলের সময় হাতে হাতে ছোঁয়া।
দূরে শাঁখের আওয়াজ।
একটা পাখি ডাকছে।হারিয়ে ফেলেছে তার বাসা।
-“অতিথি নয়!”
এক মূহুর্ত চোখে চোখ আটকে,
এক যুগ
অস্বস্তিকর নৈঃশব্দ্য !
-“অভিজিৎ দাশ মনিকার প্রাক্তন প্রেমিক।
হেরোইনের ব্যবসা।রেড যেদিন হয় সেদিন সে পুলিশের হাত থেকে পালায়।কিন্তু পায়ে গুলি লাগে।”
থ্যাংক্যু রজত।
আনোয়ার এসেছিল?ঘাড় নাড়ে রজত।
–“কেসটা জটিল হবে”
দেবলীনা জানলার বাইরে তাকায়।অন্ধকারে ফিকে আলোর রেখা।
কেন রজত। পার্টি র বদান্যতায়?
-“হ্যাঁ। এখন বখরা পাচ্ছে শাসক দল।
অভিজিৎ এখন আসগর রহিম।পার্টি র লোক।”
কালিয়াচক যেতে হতে পারে সোমবার।
-“ফরেনসিক আর কিছু নতুন তথ্য দিলো ম্যাডাম। ”
আজ কাজের কথা বলতে আসিনি।
দুদিন রেস্ট নাও।
কাল ডঃ চাকী কে পাঠিয়ে দেব।
দেবলীনা উঠে পরে।হোমওয়ার্ক। অনেক জট।একটা একটা করে খুলতে হবে।নিজেকে প্রমাণ করতে হবে।প্রথম কেস।
দরজায় দাঁড়িয়ে রজত।
গাড়ির দরজা খুলে দেয় রহিম।
পেছন ফিরে তাকায় ওসি
রজত শুনতে পায় কৃষ্ণকলির চাপা কন্ঠ
থানার বাইরে দেবলীনা আমার নাম কেমন,
পরশু জয়েন করবে।
নির্জন রাস্তাটা আরো নিস্তব্ধ অন্ধকার হয়ে যায়।রজতের সব গুলিয়ে যাচ্ছে।
রাত বারোটায় হটলাইনে ফোন।দেবলীনা নামটা দেখে প্রমাদ গোণে।
রাস্তার ধারে বসে আছে হরেক মাল নিয়ে শিবু। টুকিটাকি সাবানদানি থেকে সেফটিপিন। নতুন হকার।অনেক রাত অবধি।শুনশান রাস্তা প্রায় মাঝরাত একা জেগে ঘরে বসে থাকে বুড়ি মা।
পায়ে পায়ে জঙ্গল পেরোতে হয়।চাঁদ আর গাছের ছায়ায় লুকোচুরি খেলা।শিবু শিষ দিচ্ছিল।
নীরবে সামনে পেছনে এসে দাঁড়ায় চারটি ছেলে।
শিবু হোঁচট খেয়ে একবার পড়ে যায়।লুকোনো স্থানে চাপ দেয় জোরে পাতলা জিনিসটায়।ছেলেগুলো লাথি মেরে ছড়িয়ে দিচ্ছে আগাছায় অবিক্রীত জিনিস।
–“কে তুই ”
তোমরা?
জবাব দে।আমাদের পারমিশন নিয়েছিস।
তোমরা কে ভাই।আমি তো ফুটপাতে বসি।ওই ভক্তিনগরের ওধারে বাড়ি।
“এখানে বসতে গেলে মাল্লু দিতে হয়।নতুন জন্মালে নাকি বাওয়া”
আরেকজন যোগ করে ,
আর বসার জায়গা পেলো না পার্টি অফিসের সামনে।
শিবু গুনছে ৬০,৫৯,৫৮,৫৭….
আজ্ঞে কোথায় বসব বলেন।
কাল মহাদেবদা ডেকেছে।
কে?
এ শালা গা** নাকি।আরে আমাদের কাউন্সিলার দা।
ও
তোমরা কে ভাই
(২ মিনিট ৫০ সেকেন্ড)
চারজন হাসতে থাকে জোরে জোরে।
আধখালি বোতল গলায় ঢেলে নেয় রতন নামে লোকটি।
দেখিস চালাকি মাড়াতে গেলে বিলা হয়ে যাবি
(২ মিনিট ৫৯)
হাওয়া দিচ্ছে শনশন।মেঘ ঢেকে দিয়েছে চাঁদ।
হঠাৎ কাটা কলাগাছের মতো দুটি ছেলে সপাটে আছড়ে পড়লো।
পেছনের ছেলে দুটো কঁকিয়ে উঠেছে।
একটা পেঁচা খুব কাছ দিয়ে উড়ে গেলো ডেকে হেঁকে।
শিবু ধীরে সুস্হে বাড়ি র পথ ধরে।
একজন এস আই আর দুজন কন্স্টেবল চারটেকে হাজির করে থানায়।
–এই যে এসেছ বাপধনরা, ঘুমিয়ে পড় বা**ত। কাল একটু আদর করব, রাত হয়ে গেছে আজ।
আজিজ ওদের লকাপে ঢোকাতে বলে বাড়ির দিকে রওনা দেয়।
ছিঁচকে চুরির জন্য তিনবার ধরা পড়েছিল শিবু।শেষবার মরেই যেত মার খেয়ে পাবলিকের হাতে।বছরখানেক হলো শিবু পাল্টেছে।
এখন শিবু আজিজের বিশ্বস্ত ইনফর্মার। ট্রাফিকিং এর কেসগুলোয় সাহায্য করছে।
মহাদেব সর্দার লোকাল কাউন্সিলারের স্বামী।মহিলা কোটা বলে নিজের বউ।এলাকায় আধিপত্য বাড়ছে।পার্টির ব্লক সভাপতিকে একটি অনুষ্ঠানে সুযোগ পেয়ে জানিয়েও ছিলো তরুণ আই পি এস আজিজ।
কিন্তু পরে দেখা গেল তিনি আরো বড়ো গভীর জলের মাছ।কতটা গভীর মাপছে আজিজ।
রজত একটু মানসিক দ্বন্দে ভুগছে।হয়ত বদলি নিয়ে চলে যাওয়া উচিত।কিন্তু এভাবে ট্রান্সফার হয় না।
কী বলেতে পারে সে।
একজন এস আই,সেই থানার ওসি মাননীয়ার প্রেমে পড়েছে ! পৌরুষে লাগছে? চোখে চোখ রাখলে উদাস হয়ে যাচ্ছে! কর্মক্ষেত্রে যদি অসুবিধে হয়,যদি দেবলীনা মুর্মু আই পি এস কখনো অধস্তনকে অপমান করে?কার্যক্ষেত্রে তা সে মেনে নিতেই পারে।কিন্তু এই দুর্বলতার অসম মন দেওয়া নেওয়া কতটা বাস্তব।
আজ জ্বর কম। রেডি হয় অফিস যাবার জন্য। ডঃ চাকীর অষুধ সত্ত্বেও সুস্থ হতে লেগে গেলো চারদিন।
হোমওয়ার্ক!
হ্যাঁ তা করেছে এ কদিনে ।মোহিনী মার্ডার কেস।ইন্টারেস্টিং!!