সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে তনিমা হাজরা (পর্ব – ১০)

ছড়িয়ে জড়িয়ে
অবাক হয়ে ভাবি সে সময়কার কৃষি বিজ্ঞানের কী অসামান্য উন্নতির কথা। এবং যেহেতু চাষা মানে সে সময় অধিকাংশই নিরক্ষর। কিন্তু নিরক্ষর মানে সে তো আর মূর্খ বা মস্তিষ্কহীন নির্বোধ নয়। সেও জ্ঞানী এবং সেও স্মৃতিধর।
তাই ছড়ার ছড় দিয়ে বর্ণিত এই বিদ্যাকে সে অনায়াসে রপ্ত করে ফেলে এবং তা ছড়িয়ে থাকে জড়িয়ে থাকে তাদের হাতে কলমে চাষের কাজের পরতে পরতে।
আসুন সে যুগের চালে কেমন ছিল বিভিন্ন প্রকার শস্য রোপণের ও কাটবার দিন ক্ষণ রীতি যত্ন।
ধান্যাদি **
(১)
ষোল চাষে মূলা, তার আধা তুলা
তার আধা ধান, বিনা চাষে পান।।
(২)
শ্রাবণের পুরা, ভাদরের বারো,
এর মধ্যে যত পারো।
কোল পাতলা ডাগর গুছি,
লক্ষ্ণী বলেন, সেথায় আছি।
(৩)
ষেঠিধান পাকে ষাট দিনে,
যদি বর্ষে রাত দিনে।।
(৪)
আউশ ধানের চাষ,
লাগে তিনটি মাস।।
(৫)
বেদের কথা না হয় আন,
তুলা ( কার্তিক মাস) বিনে না পাকে ধান।।
(৬)
আষাঢ়ের পঞ্চদিনে
যে রোপে ধানে
সুখে থাকে কৃষি বল।
সকল আশা হয় সফল।।
(৭)
আগে থাকলে বাঁধো আলি (আল)
তবে গিয়ে রো’ও শালি,
তাতে যদি নাই ফলে,
দিও গালি খনা’র নাম বলে।।
তা ধান রোপণ তো হল দিন ক্ষণ দেখে। আল বাঁধ ও দেওয়া হল, জমির রস শুষে তো সেই মা লক্ষ্ণী দিনে দিনে শরীরে রসমতী হয়ে ডাগর ডোসরটি হয়ে পোয়াতিও হলেন। শীষের উপর তুষের কোটরে জন্ম নিল দুধ দুধ অন্ন। সে অন্ন ক্রমে ক্রমে ঘন হয়ে শক্ত হয়ে পুষ্ট হয়। যার মধ্যে জমানো থাকে ক্ষুধার্তর পেটের আরাম। শরীরের প্রাণশক্তি ধারণের অত্যাবশকীয় উপাদান।
তাই এবার ধান্য কাটার পালা। লক্ষণ মিলিয়ে দেখতে হবে সে যথাযথ পুষ্ট ও পরিপক্ক হয়েছে কিনা।
(১)
থোড় তিরিশে, ফুলো বিশে,
ঘোড়ামুখো তেরো,
সেই বুঝে শ্বশুর ঠাকুর,
কেনা বেচা করো।
থোড় অর্থ্যাৎ গর্ভশস্য ৩০ দিনে পুষ্ট হবে। তার বিশ দিন বাদে ফুলে সঠিক আকৃতি পাবে এবং যখন শস্য ভারে শীর্ষটি ঘোড়ার মুখের মতো বেঁকে পড়বে, তখনই ধান কাটবার সঠিক সময়।
(২)
আঁধার পরে চাঁদের কলা,
কতক কালা করে,
উতরে উঁচো দখিনে কাত,
ধারায় ধারায় ধরে,
চাল ধান দুই সতা,
মিষ্টি হবে লোকের কথা।।
(৩)
পৌষের মধ্যে ধান লাফা( কর্তন)
খনা বলে দ্বিগুণ নাফা (লাভ)
(৪)
আঘনে পৌটি (১৬ আনা)
পৌষে ছৌটি( ছয় আনা)
মাঘে নাড়া ( সামান্য)
ফাগুনে কাঁড়া (নষ্ট)
(৫)
শীষ দেখে বিশ দিন
কাটতে মাড়তে দশ দিন।