• Uncategorized
  • 0

ধারাবাহিক উপন্যাসে আবুল কালাম আজাদ (পর্ব – ৪)

দার্শনিক হেলাল ভাই – ৪

সুরঞ্জনারা শুধু যুবকের কাছে যায়, দার্শনিক হেলালের আহ্বানে সাড়া দেয় না।
মাই গড! তার মানে হেলাল ভাইয়ের এ অভিজ্ঞতা পূরণো। আমরা একটু স্বস্তি পেলাম যে, সমস্যা হবে না কোনো। এ পাড়ার কোনো মেয়েও হেলাল ভাইয়ের প্রস্তাবে সাড়া দিবে না। তাকে আমাদের যতই ভালো লাগুক, মেয়েরা তাকে দেখে ভুলবে না।
মেয়েদের নামের তালিকা তৈরীর দায়িত্ব নিলো গাব্বু। আর চিঠি বিলি করার দায়িত্ব আমাদের সবার।
তিন দিনের মধ্যেই গাব্বু পাড়ার সব মেয়ের নামের সুন্দর একটা তালিকা তৈরী করে ফেলল। শুধু নাম না, নামের সাথে বাসা, ক্লাশ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এসবও আছে। খাতায় চারটা কলাম করে লিখেছে। হাতেও লেখাটাও হয়েছে খুব সুন্দর। তালিকাটা এরকম-
নাম বাসা শ্রেণি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম
১. মনিকা ১৩৬, রীতা কোটেজ (দোতালা) এইচ.এস.সি ২য় বর্ষ হলিক্রস কলেজ
২. অনন্যা ১৪২, খান ভিলা অনার্স ২য় সেমি: (পলিটিকাল :সায়েন্স:) ইডেন বিশ্বঃ কলেজ
৩. তৃষা ১৪৪, হাফেজ সাহেবের বাড়ি দশম শ্রেণি নব প্রভাত সঃ উঃ বিঃ
৪. ঐশী ৪২০, নোয়াখালী ভবন এইচ.এস.সি ১ম বর্ষ সিদ্ধেস্বরী গার্লস কলেজ
৫. এথিনা ১৬৯, পূব হাওয়া ক্লাশ নাইন (ইংরেজি মাধ্যম) লিটল স্টার স্কুল
বল্টু মোট ৭২ জনের নামের তালিকা তৈরী করেছে। হেলাল ভাই তালিকাটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল। তারপর বলল: তোরা বললি, শ’খানেক মেয়ে আছে। এখন দেখছি মাত্র বাহাত্তরটা।
প্রেম প্রস্তাব দেবার জন্য বাহাত্তরটা মেয়েও কম হয়ে যায়। কি অদ্ভূত মানুষ এই হেলাল ভাই! বল্টু বলল: শ’খানেক গুণতে গেলে ক্লাশ এইট থেকে ধরতে হবে।
: না থাক, এইট-নাইনের মেয়েরা ধরতে গেলে বাচ্চা।
ফজলু ওরফে ফজা বলল: হেলাল ভাই, আপনার এমন কি বয়স হয়েছে? এভাবে বলা ঠিক না।
হেলাল ভাই ফজার কথায় কান না দিয়ে ভুরু কুঁচকে বলল: সংখ্যাটা বাহাত্তর! আচ্ছা, বেহেস্তে যে হুর দেবার কথা সেটা কি বাহাত্তুর না সত্তুর?
রান্টু বলল: যতদূর জানি সত্তুর।
: আমার মনে হয় বাহাত্তুর।
: গতকাল তো মসজিদের ঈমাম সাহেব বললেন, হে যুবক ভাইয়েরা, তুমরা পথে-ঘাটে মাইয়া মানুষের দিকে তাকায়া থাইকা চরিত্র নষ্ট কইরো না। বেহেস্তে সত্তুরটা হুর পাইবা। দুনিয়ার সব চাইতে সুন্দর মাইয়াডারেও সেই হুরের কাছে বান্দি মনে হইব।
: আচ্ছা, যাহা বাহান্ন তাহাই তেপ্পান্ন। সত্তুর আর বাহাত্তর দূরের কিছু না। তবে আমি হুর নিয়া ভাবি না।
: ভাবেন না কেন? আপনে কি বেহেস্তে যাইতে চান না?
: যদি যাইতেই হয় তো আমাকে পছন্দের বই, রবীন্দ্র সংগীত এসব দিলেই খুশি হব। রুটি-মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে যাবে, কিন্তু একটা বই থাকবে চির নতুন।
: কে বলেছেন এই অসাধারণ কথাটা?
: ওমর খৈয়াম। বই আমাকে যেভাবে টানে, হুর সেভাবে টানে না। বলতে গেলে, একেবারেই টানে না। তবে…..।
: তবে কী?
: সেই ঈমাম সাহেব পৃথিবীর মেয়েদের এইভাবে অপমান করে কথা বলতে পারেন না। পৃথিবীর মেয়েরা কি সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি না? তারা কি সর্বশ্রেষ্ঠ্য সৃষ্টি না? ফেরেশতাদের চেয়েও মানুষকে বেশি মূল্যায়ন করা হয়েছে। এই জন্যই ফেরেশতাদের বলা হয়েছিল আদমকে সিজদা করতে। সুতরাং বেহেশতের সেই হুররা কখনোই পৃথিবীর নারীর চেয়ে অধিক মূল্যবান বা সুন্দর হতে পারে না।
: ঈমাম সাহেব পৃথিবীর মেয়েদেরকে হুরের কাছে বান্দি মনে করলেও চার-চারটা নারীকে ইতোমধ্যে বিয়ে করে ফেলেছেন। ভবিষ্যতে আরও করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
আমি ভেবে দেখলাম, আলোচনা অন্য লাইনে চলে যাচ্ছে। জনগণের কানে এইসব কথা গেলে সমস্যা হতে পারে। অনুভূতিতে আঘাত লাগার সমস্যা। বর্তমানে সবচেয়ে বড় আঘাতের নাম হলো অনুভূতিতে আঘাত। বিনা কারণে পিঠে একশ’টা চাবুক মারার চেয়েও বড় আঘাত এটা।
বললাম: হেলাল ভাই, এই পৃষ্ঠা উল্টান। অন্য পৃষ্ঠায় যান। নামের তালিকাটা ভাল করে দেখেন।
: যখন যে পৃষ্ঠা সামনে আসবে সেটাই পড়ে নিতে হবে। কথা হল ঘামাচির মত। একটা গালালে দশটা উঠে। শোন, বেহেস্তে সত্তুরটা হুর না দিয়ে একটা হুর দিলে কি সুখ কম হত? হুর কমিয়ে তো অন্যদিকে সুবিধা বাড়িয়ে দিলে হত। ওয়াইফাই সুবিধা…….।
: সেখানে কোনো সুখেরই অভাব নাই। অপার সুখ সেখানে। হাই স্পীডের ওয়াইফাই সুবিধা আছে নিশ্চয়। ফেসবুক করা যাবে মহাআরামে।
: তাহলে সত্তুরটা হুর দিতে চাওয়ার মানে কী? এখানে যৌন সুখকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হলো না কি?
: হেলাল ভাই, প্লিজ…………।
: আমি দার্শনিক মানুষ। আমার মাথায় প্রশ্ন আসে। তোরাই তো প্রথমদিন বলেছিলি, দার্শনিক মন্তব্য শুনতে চাস।
: আমরা তো দার্শনিক না। আমাদের মাথায় কোনো প্রশ্ন আসে না। আসল কথায় যান।
: প্রশ্নহীন ছেড়ে দেবার কারণেই যুগ যুগ ধর্ম মানুষের জন্য মঙ্গলময় যতটুকু হয়েছে, তার চেয়ে বেশি হয়েছে অমঙ্গলের কারণ। ধর্ম কি পেরেছে জগতব্যাপী মানুষের জন্য শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে?
: হেলাল ভাই,…….।
: এই যে ঈমাম সাহেব হুরদের কাছে নারীকে বান্দি বলে ছোট করেছেন, এ জন্য কি আমাদের অনুভূতিতে আঘাত লাগা উচিত না? নাকি আমাদের কোনো অনুভূতি নাই? সমস্থ অনুভূতির ইজারা নিয়েছে তারা?
হেলাল ভাই চিৎকার করতে শুরু করল। অতিশয় রেগে গেছে। ঘন ঘন শ্বাস ফেলছে।
আমি উঠে পড়লাম। আমার দেখাদেখি ওরাও গা ঝারা দিয়ে উঠে দাঁড়াল।
হেলাল ভাই বলল: উঠলি যে?
আমি বললাম: এসব বিষয়ে আলাপ হলে আমরা থাকব না।
হেলাল ভাই টান দিয়ে আমাকে বসাল। ওরাও বসল। তারপর হেলাল ভাই লিস্টে মনোনিবেশ করল। কয়েক মিনিট তালিকায় চোখ বুলিয়ে বল্টুকে বলল: দশম শ্রেণির মেয়েগুলোর নাম কেটে দে’। ওরা ছোট মেয়ে। প্রেমপ্রত্র পেয়ে ওদের পড়াশোনায় ক্ষতি হতে পারে।
বল্টু বলল: কী যে বলেন! সিক্স-সেভেনের মেয়েরাও আজকাল প্রেম করে। প্রেম এসে গেলে লেখাপড়ার ধার ধারে না।
: তাই বলে লেখাপড়ার ধার ধারবে না?
: ধার ধারত যদি পাস নিয়ে সমস্যা থাকতো। (এ+) পাবে তা তো জানেই।
: না, স্কুলের মেয়েদেরকে আমি পত্র দিব না। ওদের নাম কেটে দে’।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।