|| ভাষাতে বাংলা, ভাসাতে বাংলা || সংখ্যায় দেব চক্রবর্তী
by
·
Published
· Updated
শপথের কথাগুলো সব
একুশ ফেব্রুয়ারী, ১৯৫২
আর পাঁচটা দিনের মতোই স্বাভাবিক ।
চারদিকে শুকনো ফুলের ওড়াউড়ি
হাওয়ায় দুলছে সরষের ক্ষেত
বীজধানে সবুজ বাংলার মাটি।
জ্বলন্ত চুল্লির ধারে
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সিরাজুল
গোপনে লিখে চলেছে
নিষিদ্ধ বাংলায় কঠিন আত্মপ্রত্যয়
শুধুই তোমাকে রক্ষার জন্যে।
তোমাকে রক্ষার জন্যে
চা-খানায় , রেস্তোরাঁয়, কলেজ ক্যান্টিনে, কফি হাউসে
ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি থেকে উঠে এসেছিলো ধোঁয়ায় ভরা গনগনে লাভাস্রোত।
আর তখনই দেওয়ালে দেওয়ালে ছড়ানো রাঙা পোস্টার।
তোমাকে রক্ষার জন্যে
মাঠে-ময়দানে উত্তপ্ত কথা বলা আর রহমত মাঝির তীব্র আক্রোশ ।
আবদুল জব্বারের সমর্থনে
রোদেলা দুপুরে-
ফেস্টুনে প্ল্যাকার্ডে দৃপ্ত প্রতিবাদের ঝাঁঝালো মিছিল।
দুরন্ত স্লোগানে শাণিত পদক্ষেপ-
অবিরাম অবিরাম বুটের দাপাদাপি-
মুহূর্তে প্রচন্ড ব্লাস্টিং
শব্দ ধোঁয়া আর আর্তনাদ।
রক্তাক্ত রাজপথে বিবর্ণ দেহের স্তুপ ।
সেদিন ফেব্রুয়ারীর একুশ ছিলো।
পাষাণ বুকের রক্ত নিংড়ে
বুলেট ও বিষ্ফোরণের মাঝখানে
মৃত সন্তানের পাশে
চোখহীন মুখে
গ্যাঁজলা ওঠা ভাইয়ের পাশে
এক পা এক পা করে এগিয়ে আসছে শোকার্ত মা, হতভাগ্য বোন।
সেদিন ফেব্রুয়ারীর একুশ ছিলো।
শুধু তোমার জন্যে
আজও সত্তর বছরের ফতেমা
ভাইয়ের ছবিতে মালা দেয় না
গায় না কোনও ভোরের গান
শুধু স্বপ্ন দেখে একটা নতুন একুশের-
স্বপ্ন দেখে নতুন শপথের দিন।
একুশ ফেব্রুয়ারী
তুমি বাংলার প্রতিটি প্রান্তে –
হাটে ঘাটে বাজারে ময়দানে
দুর্বার উচ্চারণে
শপথের কথাগুলো সব
আজ আবার মনে করাও।
মনে করাও
তোমার ক্ষয়হীন ভালবাসার কথা
আবার
বারবার॥