• Uncategorized
  • 0

সাতে পাঁচে কবিতায় রাজশ্রী বন্দোপাধ্যায়

নকশী কাঁথার মাঠ

আমি গুরজালি মাছ চিনি না
ল্যাম্বের মা‍ংস যে খায় প্রথম শুনে ছিলাম শ্বশুর বাড়িতে এসে ,
শ্বাশুড়ী বলেছিলেন ,”মা কি কিছুই শেখায়নি ?”
আমার চিৎকার করে বলতে‌ ইচ্ছে করেছিল ,”
আপনাদের মত নিস্তরঙ্গ ,তুলতুলে জীবন ছিল না আমার ,
বাবা মারা যাওয়ার পর –
আমাদের বাড়িটাকে গাঢ় অন্ধকার ঘিরে থাকতে দেখেছি ,
চালের টিনের ঢাকনা খুলে মাকে- ঝরঝর করে চোখের জল ফেলতে দেখেছি ,
লোকের বাড়ি রান্না করে ,জামা কাপর সেলাই করে
না জানি আরও কত পাথরে ঘষতে ঘষতে
একটু একটু করে ক্ষয়ে যেতে দেখেছি ,মা-কে
মা একটু একটু করে নিরাভরণ হয়েছে ,আর আমি ধীরে ধীরে এগিয়ে গেছি সোনালী ভবিষ্যতের দিকে
মা বলত ,” নিজেকে স্বয়ং সম্পূর্ণ কর মামনি !
কারোর চলে যাওয়া ,তোকে ক্ষত বিক্ষত করবে
ভাঙ্গবি ,কিন্তু মচকাবি না । ”
আমার মা রোজ আমায় মাছ খাওয়াতে পারেনি ,
সামান্য পান্তায় লেবু পাতা আর লংকা দিয়ে-
সে যে কি পরমান্ন মেখে দিত মা !
তোমাদের কন্টিনেন্টাল ,বড় পানসে লাগে তার কাছে ,
আমি রবীন্দ্রনাথ পড়েছি ,সেক্সপিয়ার পড়েছি ,
পিকাসোর আঁকা নিয়ে কলেজ ক্যান্টিনে মুখর হ‍য়েছি ,
আমি সরস্বতীর উপাসনা করেছি ,
তাই বোধহয় লক্ষ্মীর পাঁচালি শেখা হয়নি ,
আমি রাস্তার নিরাশ্রয় মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে
তোমাদের মত স্ট্যাটাস মেইনটেইন করতে দশ হাজার টাকা দামের শারি কিনতে পারিনি ,
আমি আজও সুস্বাদু মাছগুলোর নাম মনে রাখতে পারিনা ,
আমি আজও তোমাদের বাঁকা কথা সহ্য করে , হসপিটাল থেকে
রোজকার প্রাকটিস সেরে ,বস্তিতে যাই ওদের শুশ্রূষা করতে ,
আমাদের মত মানুষগুলো বিরল প্রজাতির ,
অতীতটাকে জাগিয়ে রাখি রক্তের ফোঁটায় ,
বেলোয়ারি ঝার লাগে না স্বপ্ন দেখতে ,
জোনাকির আলোয় পার হই নকশী কাঁথার মাঠ ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *