• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে শক্তিনাথ ভট্টাচার্য্য (পর্ব – ৬)

হোয়াটস্অ্যাপে পরকীয়া – 

[ কিছুটা আশ্চর্যই বোধ হচ্ছে অর্কপ্রভর! অনেক নারীপুরুষই তার সঙ্গে কথা ‘লেখে’ WAএ… নানা সম্বোধনে… নানা বিষয়ে…  ভালই লাগে। খারাপও লেগেছে কোথাও কোথাও …কেউ কেউ যে আশা নিয়ে এসেছে, তাকে সম্মানের সঙ্গে ফিরিয়ে দিতেও হয়েছে। তাদের দুঃখ বুঝেও কোন বিশেষ সম্পর্কে জড়াতে চায়নি। বিনীতভাবে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে, ভবিষ্যতে তার অভিঘাতের কথা ভেবে।
তবে, তার মনেহয়েছে, কী হত, যদি তাদের সঙ্গে কোন বিশেষ সম্পর্কে তারা কোন আকর্ষণ অনুভব করে খুশী হয়ে আনন্দে দিন কাটাত’ ! কী ক্ষতি  হ’ত! আর, সত্যিই কি এতে কোন সম্পর্ক গড়ে ওঠে!! সাংসারিক কোন দু্ঃসহতা থেকেই হয়তো কেউ বন্ধু খুঁজেছে!! সবই তো অনলাইনে! এর কি কোন বাস্তবতা আছে!.. তারা তো শুধু involvement এর আনন্দটুকুই পেতে এসেছিল! নাকি, এর কোন বাস্তবতাকে ভবিষ্যৎ অস্বীকার করতে পারত’ না!!
এক নারীর কথা মনে এল। বারাণসীতে থাকেন… কী যে আবেদন রেখেছিলেন!!… বেনারসের গঙ্গায় মিশিয়ে দেওয়া সে কান্না এসে পৌঁছেছিল কোলকাতার ঘাটে।… বেগম আখতারের কণ্ঠ বেয়ে সে কান্না সারারাত ধরে ঘরের চার দেওয়ালে ধাক্কা মেরে গেছে, ‘ফিরায়ে দিও না মোরে শূন্য হাতে ‘।… “বড় বেদনার মত” বেজেছিল পুলকবাবুর কথা আর গুরু জ্ঞানপ্রকাশের সুরে গানটি। সেদিন খুব দুঃখ হয়েছিল! চোখ ভিজে গেছিল, মনেহয়েছিল, এত দিনে গানটির আত্মাকে স্পর্শ করতে পেরেছে। কিন্তু, শূন্য হাতেই ফেরাতে হয়েছে তাকে। যেভাবে আসতে চেয়েছে, তা হয় না।
… রানাঘাটের ইংরেজী সাহিত্যে M.A. পড়া মেয়েটি! কিংবা, শ্রীরামপুরের অত্যন্ত গুণী মেয়েটি এবং…  ; এরা কেউ বুঝতে চায়নি যে, তারা পরের প্রজন্ম! প্রত্যেকেই মনে করে, বয়স একটি সংখ্যামাত্র!!… যেখানে মনের তরঙ্গ মিলে যায় কোনভাবে, সেখানে ওরা পরিযায়ী পাখির মত সুদূরের ডানা মেলে অনির্দিষ্ট গন্তব্যের পথে উড়তে ভয় পায় না। দিক পালটে চলে যেতেও পারে নির্দ্বিধায় !!
অনলাইন হল সেই তরঙ্গমাধ্যম… যেখানে, মনে মনে সব কিছু দেনাপাওনা অনুভব করা যায়। জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে হাঁড়ি হাঁড়ি মিষ্টি পাঠিয়ে দেওয়া যায়… দামি ফুলের তোড়া… গ্রহণ করে  সম্মানিত বোধে ধন্যবাদ জানিয়ে তৃপ্তি লাভ করা যায়… মেঘলা আকাশ পাঠিয়ে দেওয়া যায়, বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা তার কাছ থেকে চেয়ে নেওয়া যায়… প্রেয়সীকে ইচ্ছে মত ছুঁয়ে দেওয়া যায়…  বিনিময়ে উষ্ণ আলিঙ্গন গায়ে মেখে নেওয়া যায়… স্বর্গে বা জাহান্নমে, “কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা”… অবশ্য, “মনে মনে”।… তবে, মূলতঃ, লেখনীর হাত ধরেই ভীড়ের মধ্যে থেকে কারো সাথে আলাদা পথ চলা! হাঁটতে হাঁটতেই পৌঁছে যাওয়া রূপকথাদের দেশে!!
লেখার পিঠে লেখা গাঁথতে পারলে কখন যে একটা উঠোন গড়ে ওঠে! মোহনার লেখায় সে আভাস আছে। ওর লেখার মধ্যে নিজের অতীতের ছায়া খুঁজে পায় অর্কপ্রভ। তবে কি ওকে আশ্রয় দিয়ে নিজের অতীতকেই সে ফিরে পেতে চায়, আজ এই ষাটোর্ধ বর্তমানে!? নিজেকেই প্রশ্ন করে সে।… না, এমন তো ভাবে নি আগে ! তেমন কোন ভাবনা নিয়ে ও তো  কারো সঙ্গে মেশেও নি! তারও কারণ আছে! মোহনাকে এখনই সে কথা বলার সময় আসেনি। ওর বোধ তো অন্যদের থেকে আলাদাই মনেহচ্ছে!!
এখন, শুধু আশ্চর্য হওয়ার সঙ্গে একটু কৌতুকও অনুভব হল। হঠাৎ কেন যে সেসে এভাবে আসতে চাইছে !! ]
( সকাল শুরু করল অর্কপ্রভ )
অর্কঃ :   এতদিন বলতাম, না পাওয়ার বেদনা আর পেয়ে হারানোর আফসোস, দু’রকমের দুঃখ। এর বাইরে আর কিছু হয় না।
এখন দেখছি, পেয়ে না-পাওয়া আর একরকমের দুঃখ যা, আরো বেশী কষ্টদায়ক। 🙂
মোঃ : আর….  এই যে অযাচিত পাওয়া….  সে কি কম নাকি…!? তা দিয়ে তো এক পৃথিবী দু:খ মুছে ফেলা যায়…
আচ্ছা, ডাক্তারবাবু,
পাওয়া মানে কি….!? ছুঁতে পারার মতো কাছাকাছি থাকা…!?
আইনি স্বীকৃতি…!?
অধিকার প্রয়োগের অবাধ ছাড়পত্র…!?
নয়….  নয়…. মোটেই নয়….
তবে তো ভগবান কেও পাওয়া যাবে না…  কারণ তিনি তো শুধুমাত্র উপলব্ধিতে… 🙂
আসল পাওয়াটি তাই উপলব্ধিতেই….  সেখানে ছাড়পত্রের প্রয়োজন নেই… কারণ বাধা থাকলে তবেই তো অবাধ ছাড়পত্রের প্রয়োজন হবে… তাই সেখানে আইন খাটে না…  ক্ষমতা কার সেখান থেকে কিছু কাড়ে… তাই সেই ধনে ধনী হতে পারলে আর দু:খ কিসের….!? 🙂
শুভদিন….!
অর্কঃ :  বাহ..বাহ.. বেশ বলেছ।… ‘পাওয়া’ নিয়ে তোমার এই অভিব্যক্তি তুলনাহীন… সত্যি।…
তবে দ্যাখো, অন্তরে পেয়েছি মনে করতে পারলে তো ভালই,  কিন্তু তারও একটা স্বীকৃতি দরকার পড়ে… একটা শংসাপত্র।… বাধা নেই, আইন নেই,  পাশ-ফেল নেই, তাহলে বুঝব কি করে যে তাকে পেয়েছি, পাশ করেছি !!… মনের মধ্যে একটা অতৃপ্তি, অস্বস্তি থেকেই যাবে। নাহলে, তুমি বলো, রামকৃষ্ণদেব তো ভবতারিণী মাকে অন্তরে পেয়েইছিলেন, তা সত্ত্বেও কেন তাঁর উদ্দেশে বললেন, দেখা দে, নয়তো তোর এই খাঁড়া দিয়ে নিজের গলা কেটে ফেলবো!… কিংবা রবিঠাকুরের কথাই ভাবো…  কেন বলেছেন, শুধু তোমার বাণী নয়, মাঝে মাঝে তোমার পরশখানি দিও। কিংবা, “বাহির হয়ে এসো ওগো, যে আছ অন্তরে”!!… সে-ই অনলাইনের ছায়া থেকে বাস্তবের কায়ায় পাওয়ার আকুলতা!!
তোমার ভাবনায়, তোমার তো এই অতৃপ্তি থাকবে না,… কিন্তু, আমার ভাবনায়, আমার যে সে অস্বস্তি থাকবে!! 😊
মোঃ :  উফ্!!.. কী সাংঘাতিক লোক আপনি!!😲…  শংসাপত্র না পেলে কী ঠাঁই দিতে ভরসা হচ্ছে না!?😍
তবে কী জানেন!?…  আমি সে শংসাপত্র পেয়ে গেছি আপনার কাছ থেকে।
অর্কঃ :  আমার শংসাপত্র জুটবে কী করে!!? 😍
[ হঠাৎ আবার সাড়া নেই মোহনার। বিরক্তি আসলেও অর্ক মানিয়ে নিতে চেষ্টা করে। কী যে হয় মেয়েটার!  ‘অন্ততঃ, বলে যা’, মনে মনে বলে অর্কপ্রভ… যাকগে। অন্য কাজে চলে যায় অর্কপ্রভ।]
( অনেকক্ষণ পর)
মোঃ : আরেঃ!!…কোথায় গেলেন…!?
ভিডিওতে গান পাঠালাম!!… ‘নাম… বুকের বোতাম… হারানো খাম…. আজ কেন যে খুঁজে পেলাম’… এ গান শুনেছেন!?… এখনকার গান…আমার খুব ভাল লাগে… 🙂
[কিছুক্ষণ কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে, মোহনার মনেহল, উফ্, আচ্ছা লোক, একদম বোঝে না যে কী করে এখানে আসি!… শাশুড়ী মা আছে… ফোন নিয়ে বসে আছি দেখলে তো বিরক্ত হন-ই…  তখন, কিছু না জানিয়েই ফোন ঝপ করে বন্ধ করে দিতে হয়। তিনি বাথরুমে, তাই তারমধ্যে ভিডিও করে পাঠানো!… আমার প্রেমের শীলমোহর লাগানো শংসাপত্র!… না ঠিক শংসাপত্র নয়… অঙ্গীকার। ]
মোঃ :  নাঃ, সব সময় আসতে পারি না…  এই সময় আবার আপনি নেই!!…
(আরো কিছুক্ষণ পরে)
মোঃ : উফ্… আপনি কতক্ষণ নেই…  আমি ফেসবুকে খানিক ছবি দেখলাম…  কমেন্ট করলাম…
কিন্তু এবার আমার কেনো জানিনা ভারি মনখারাপ লাগছে…  এ ভারি অদ্ভুত… কোন কারণ নেই… তবু।
আমি ঠিক সুবিধার নই…  খানিক গোলমেলে.. . জানিয়ে রাখলাম… 🙂… অতিমাত্রায় আবেগপ্রবণ …  খানিক বিদঘুটে তাই… আমি.. 🙂
এমন সময় গুলোতে আমার মনে হয়…  কোথাও আমার জন্য বুঝি একটি প্রদীপও জ্বলে না…  🙂
অর্কঃ: 😊… কাজ ছিল। পেশেন্ট দেখতে হবে তো!! সারাদিন সময় পাইনি। এখন এলাম।
উফ্!!…কী ছায়াবার্তা (ভিডিও) পাঠিয়েছ!? 😲
তোমার গান শুনবো, না, তোমায় দেখবো!?… বাপরে, হার্টফেল করে যেতাম যে!!…  নেহাৎ, হৃদয়হীন, তাই কিছু হয়নি!! 😊
গানের কথাটিতে  ‘হারানো বোতাম খুঁজে পাওয়ার’ উল্লেখ থাকলেও,  তুমি তো বুকের বোতাম খুঁজেই পাওনি, দেখলাম !!… সব ক’টাই তো হারিয়েছ !!… 😍
মোঃ : হা,হা,হা,হা,….😃। শংসাপত্র। আপনাকে দিলাম।…  আমার স্বাক্ষর রাখা অঙ্গীকার!
অর্কঃ :  বেশ।… তোমার খুঁজে পাওয়া হারানো খোলা খামে, স্পষ্ট অথচ অপঠিত সৌন্দর্যের শিলমোহর দিয়ে পাঠানো এই শংসাপত্র  আমি তোমার অন্তরাত্মার কাছে পেশ করলাম… তিনি যেন তোমার অন্তরমহলের বাসিন্দাদের বাইরে আসার ছাড়পত্র দেন, এটিকে গ্রহণ করে 😊!!
মোঃ :  ডাক্তারবাবু!..  আমার অন্তরমহলের বাসিন্দারা যে খবর পেয়ে গেছে,  তাদের বন্দী দশার মেয়াদ শেষ হতে চলেছে!… তারা মুক্তি পেতে চাইছে!! 😊
অর্কঃ :   তারা কি বন্দী ছিল এতদিন!?…  তারা তো দিকে দিকে খুঁজে ফিরেছে এতদিন!! এবার তাদের ফিরতে বলো, বরং!
মোঃ :  😊… একটা কবিতা পাঠালাম :
আমার আঁচল থেকে চুরি যাওয়া স্বপ্ন
গোপন খামে তোমায় পাঠাই রোজ!
খসে পড়া তারায়  উদ্ভ্রান্ত শিশিরে
থমকে যাওয়া বিষণ্ণতা
ঋতুবদলের আভাস আনে,
আমি ভেজা মনে
সযত্নে আগুন জ্বালাই
সোহাগী আঁচড়ে গোপন জবানবন্দী লিখি…
আমার হৃদয়ে সুর, তাল, ছন্দে কুহক রচে।।
অর্কঃ :  আহা!! কী যে সুন্দরভাবে নিজেকে প্রকাশ করলে ! বাঃ!…  এই মণিমাণিক্য আমি সুরের বুনুনি দিয়ে গেঁথে মালা করে তোমায় পাঠিয়ে দেবো…  কণ্ঠে পরে নিও… যখনই এ কবিতা মনে পড়বে, তখনই কণ্ঠহারে সে সুর ঝিকমিক করে উঠবে।
বলবে না, “ এ মণিহার আমায় নাহি সাজে”!…  এ তোমাকেই সাজে।
কিন্তু, ঋতুবদলের আভাস যে পৌনঃপুনিকতা দোষে দুষ্ট…  হে কুহকিনী!! সে বিষয়ে সচেতন থাকা দরকার! 😊
মোঃ :  😊😊
অর্কঃ:   দ্যাখো, যা বলছিলে… কাছে থাকা বা আইনী স্বীকৃতি মানেই যে পাওয়া নয়,  সে তুমি আমি এবং প্রায় সকলেই আমাদের জীবন দিয়েই বুঝি। সেখানে তুমি ঠিক। কিন্তু দুঃখ হবে না — এটা ঠিক নয়। না-পাওয়ার দুঃখ না থাকলে, পাওয়ার আনন্দেই বা চোখে জল আসবে কেন?  সামলে রাখতে পার না ? 😊
আসলে, সামলে না রাখতে পারার মধ্যেই তো আকর্ষণের সার্থকতা! মনে মনে অশান্ত হয়ে ওঠা  না থাকলে তো শান্ত হওয়ার পথ খুঁজতে হ’ত না! আর, সে পথ যদি আমার পথে এসে শেষ হয়, তবে, তোমায় অভ্যর্থনা জানাতে একটি প্রদীপ তো জ্বেলে রাখতেই হয় সে পথে!
জানো, সবার ক্ষেত্রে তা পারিনি। কারো কারো ক্ষেত্রে মনেহয়েছিল, প্রদীপ জ্বেলে দিলে আমার আঁধার আরো বেড়ে যাবে। তোমার ক্ষেত্রে তেমন মনেহয়নি। যেমন বলেছিলে, এ যেন চোখ সোহাগী অন্ধকার !!
কিন্তু, ওই যে, ছোটবেলা থেকেই ভাবসম্প্রসারণ করতে হয়েছে, “ যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই….”!
আমার মনেহয়েছে, চাওয়াটা যে সবসময় ভুল থাকে, তা নয় বোধহয়… পাওয়াটা সেই চাওয়ার সঙ্গে relate করে না। মেনে নেওয়া গেল তো ভাল, নয়তো আবার অন্য পথ খোঁজা!!
কাল, তোমার ভিডিওটা (গান: মাঝে মাঝে তব দেখা পাই…) বহুবার দেখেছি। শুতে যাবার সময় হঠাৎ খুব আদর করতে ইচ্ছে করছিল। বুকের কাছে তোমার মাথাটা রাখায় ক্রমশঃ অশান্ত হৃদয়টা শান্ত হয়ে এল।
আমাকে পাওয়ার আনন্দে তোমার চোখের আনন্দাশ্রুটির ভিডিও পেলে আরো ভাল হত। সেই জলটা যদি আমার বুকে ফেলতে পারতে!!! ❤
মোঃ :  💘💘 আমায় যে এবার যেতে হবে… 🙂… আবার, যেতেও মন চাইছে না…
এটি জমা রইলো…  আনন্দ হয়ে… কাজ সেরে ভালো করে পড়ে উত্তর দেবো…  🙂
মোঃ : আহা…  সেই গানটা মনে এলো…
” আমি যত বলি তবে…  এবার যে যেতে হবে…
দুয়ারে দাঁড়ায়ে বলে.. না..  না… না… “
আহা…  এই টান না থাকলে বেঁচে থেকে লাভ কি…!?  🙂

ক্রমশ… 

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।