শ্রেয়ান তো পাঁচটা পরোটা সাঁটালো। আমি কেবল দুটো। কোনোকিছুতেই আমার বাড়াবাড়ি একেবারে সয়না। শ্রেয়ান ঠিক তার উল্টো। ঘন্টা দেড়েক পর যখন আনোয়ার শাহের শেষ প্রান্ত থেকে ফিরছিলাম, সাউথসিটির সামনের সিগনালে আমাদের বাইকটা দাঁড়িয়েছিল। হঠাৎ ডান দিক থেকে কারোর ডাক শুনতে পেলাম। “শুনছেন? হ্যালো হ্যালো” আওয়াজ লক্ষ্য করে ডান দিকে ঘুরে তাকিয়ে দেখি মিসেস বিজয়ন। একটি বছর পাঁচেকের বাচ্চার হাত ধরে আমাকেই ডাকছেন। আমি শ্রেয়ানকে বাইকটা সাইডে দাঁড় করাতে বললাম। ভদ্র মহিলা কাছে এসে বললেন, “ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড, আপনার ফোন নাম্বারটা পাওয়া যাবে? আমি অভ্যাসবশত পার্স খুলে ভিসিটিং কার্ডটা বের করতে যাচ্ছিলাম। শ্রেয়ান সেটা লক্ষ্য করে ভদ্রমহিলার অলখ্যে আমাকে কনুই দিয়ে একটা গুঁতো মারলো। আমার খেয়াল হল। আমি তখন একটা অপ্রয়োজনীয় কাগজের টুকরো বের করে নিজের নাম্বারটা লিখে দিলাম। ভদ্রমহিলা বললেন, “থ্যাঙ্ক ইউ। আমি কিন্তু মাঝে মাঝে আপনাকে ফোন করে খোজ নেবো,ইনভেস্টিগেশন কিছু এগোল কিনা”
আমি ঘাড় নেড়ে আচ্ছা বলে বাইকে এ উঠে পড়লাম। বাচ্চাটার গলাটিপে আদরও করলাম বাইকে এ ওঠার আগে। বাচ্চাটাকে দেখে মায়া হয়। ওর বাবাও হয়তো মৃত। বাবা হারানোর কষ্ট আমি তো বুঝি। শ্রেয়ান বাইকটা একটু যাওয়ার পর টিপ্পনি কাটলো “বাচ্চাটাকে দেখলে? বাচ্চাকে দেখলে বাপের জিওগ্রাফি বোঝা যায়। কি সুন্দর মহিলার হুমদো জাম্বুবান স্বামী। দেখ, এবার হয়তো ওনার ভাগ্য ফিরল।”বিরক্ত হয়েই বললাম, “আচ্ছা তোর শ্লেষের খোঁচা থেকে কেউ কোনোদিন ছাড় পাবে না? ওনার ভাগ্য ফিরবে মানে? কথাটার মানে বুঝলাম না, ওনার স্বামী ফিরে আসার কথা বলছিস?”শ্রেয়ান খিক খিক করে হেসে বলল, “তোমার দিকে যা চাউনি দিচ্ছিলো!”
ওর পিঠে জোরে একটা চাপড় মেরে বললাম, সবসময় ফাজলামি, চলত।
আমাদের বাইক এগিয়ে চলেছে। হঠাৎ একটা ঘটনা ঘটল। একটা গাড়ি আমাদের পেছন থেকে এসে বিশ্রী ভাবে আমাদের বাঁ দিকে চেপে দিয়ে বেরিয়ে গেল। শ্রেয়ান ব্যালেন্স হারিয়ে পরে যাচ্ছিল। কোনোরকমে ও পড়ার হাত থেকে বাঁচলো। আমি চট করে বড় গাড়ির পিছনে বসা লোকটার ফেরানো মাথা পেছনের কাঁচ দিয়ে দেখলাম। বিদেশি মনে হল। হঠাৎ ইনটিউশন বলল, ওরা জার্মান ডাকাত নয়তো? আমি সঙ্গে সঙ্গে শ্রেয়ানকে বললাম, “শ্রেয়ান যে গাড়িটা আমাদের ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করছিল তাকে ফলো করো।”অনেক ক্যাট এন্ড রাট চেজের পর গাড়িটার পেছন পেছন আমরা রাজার হাতের ভিতর পৌছে গেলাম। ওরাও বুঝেছে যে আমরা ওদের ফলো করছি। কিন্তু আমরাও ডেসপারেট। চারিদিক বেশ ফাঁকা। আমরা এখন একটা শুনশান রাস্তায়। চারিদিকে কেউ কোথাও নেই। মেন রোড থেকে গাড়িটা ভেতরের রাস্তায় ঢুকেছে। হঠাৎ গাড়িটা ভীষণ জোরে ব্রেক কষে দিলো। গাড়ির স্পিড খুব বেশি ছিল। হঠাৎ ব্রেক কষায় গাড়ির চ্যাকা স্কিড করে গেল, সেই স্কিডকে কাজে লাগিয়ে গাড়িটাকে 180 ডিগ্রি।ঘুরিয়ে আমাদের বাইকের দিকে মুখ করে দাঁড়াল। শ্রেয়ানও ততক্ষনে ব্যাপারটা আন্দাজ করে ব্রেক কষে বাইককে দাঁড় করিয়েছে।সামনের গাড়ি থেকে কিন্তু কেউ নামলো না। পেছনের দরজা খুলে একটা লোককে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হল। আমরা দুজন বাইকে বসেই ওদের কার্যকলাপ দেখছি। শ্রেয়ান মাটিতে পা রেখে সাপোর্ট নিয়ে আছে। আমাদের বাইক আর ওদের গাড়ির মধ্যে দূরত্ব বেশি নয়। মনে হল গাড়ির ভেতর জনা তিনেক লোক আছে। তারা সকলে মুখোশধারী। লোকটাকে ফেলেই গাড়িটা স্টার্ট নিল। গাড়ির আওয়াজ শুনেই বোঝা যাচ্ছে গাড়িটা হঠাৎ খুব স্পিড বাড়াতে চাইছে। আমাদের বাইকের দিকে গাড়িটা তীর বেগে এগিয়ে আসছে। বুঝতে পারলাম ওরা আমাদের আক্রমণ করতে চাইছে।
শ্রেয়ান আমাকে বলল, “অর্কদা ক্যুইক আমায় ভালো করে চেপে ধর। “তারপর কয়েক সেকেন্ডে শ্রেয়ান এমন একটা স্টান্ট দিল যা বলিউডকে হার মানাতে পারে। শ্রেয়ান আগুয়ান খুনি গাড়িটার ধাক্কা থেকে অদ্ভুতভাবে আমাদের বাইক ও শরীরকে বাঁচিয়ে নিলো। মাটিতে ডান পায়ের চাপে বাইকের পেছনের চাকা শূন্যে তুলে বাইকের মুখটা নিমেষের মধ্যে ঘুরিয়ে নেয়। অল্পের জন্য আমরা বেঁচে যাই। আর খুনি গাড়িটা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে ফেলে আসা রাস্তা ধরে রকেটের গতিতে দূরে মিলিয়ে যায়। গাড়িটা মিলিয়ে যাওয়ার পর আমি যেন সম্বিৎ ফিরে পেলাম। আবেগের বশে শ্রেয়ানকে জড়িয়ে ধরে বললাম, “সাবাস, শ্রেয়ান বাহাদুর ছেলে তুমি। “শ্রেয়ান উত্তেজনায় হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, ”ফেলে যাওয়া লোকটাকে দেখ। মেরে ফেলে গেল হয়তো। “