• Uncategorized
  • 0

দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ১০৩)

পর্ব – ১০৩

রাত সাড়ে নয়টা নাগাদ শশাঙ্ক পাল ছেলেদের নিয়ে ফিরলেন। আশ্রম থেকে উকিল পাঠিয়ে বেল পাওয়া গিয়েছে।
সবিতা পিসি গরম জল করে ওদের স্নানের ব‍্যবস্থা করলেন। বাসন্তীবালা শ‍্যামলীকে বললেন, শোন্, কি হয়েছে, না হয়েছে, কোনো কিছুই জিজ্ঞাসা করবি না।
শ‍্যামলী ম্লান হেসে মায়ের দিকে চাইল।
রমানাথ ফোন করলেন। বললেন, ভাল ভাবে পৌঁছে গিয়েছি। জানতে চাইলেন, তোমাকে থানায় ডেকে পাঠাল কেন?
শ‍্যামলী বলল, আপাতত আমি বাড়িতে। এই মুহূর্তে কিছু বলার মতো সমস্যা নেই।
 রমানাথ বললেন, আমায় কি বলতে কোনো অসুবিধা আছে?
শ‍্যামলী বলল, আপনি আমার শুভানুধ্যায়ীদের অন‍্যতম। আপনি আমাদের পরিবারেরও একজন। তবু কোনো কোনো কথা থাকে, যা না জানতে চাইলে ভাল হয়।
রমানাথ বেশ অবাক হয়ে বললেন, থানা পুলিশ শুনলে আমার এখনো বেশ অস্বস্তি বোধ হয়। কথায় বলে, বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা, আর পুলিশে ছুঁলে ছত্রিশ ঘা।
শ‍্যামলী বলল, সেই দিক দিয়ে আমি সৌভাগ্যবান। আমি দুজন পুলিশকে দেখে ফেলেছি, যারা যথেষ্ট ভদ্রলোক।
রমানাথ বললেন, ঠিক আছে। ভাল থেকো।
শ‍্যামলী ভাবল, রমানাথ কি তার থানায় যাবার কারণ শুনতে চেয়ে স্বাধিকার লঙ্ঘন করলেন? তখনই তার মনে হল, সেও তো তাঁর বাবা নকুড়বাবুর ঠিক কি হয়েছিল, আর তাঁর কি কি ব‍্যবসাপত্র এ ব‍্যাপারে জানতে চেয়েছিল। ক‌ই, তিনি তো তাতে কিছু মনে করেন নি। সহজভাবেই সব বলেছেন। শ‍্যামলী নিজেকে জিজ্ঞাসা করল, আমি তাহলে এত অস্বস্তিবোধ করছি কেন?
বাবা কাছে এলেন। শ‍্যামলীর ঘরে চেয়ার টেনে বসলেন। ধুতির খুঁটে চোখ মুছে ধরা গলায় বললেন, সমাজে আর মুখ দেখাতে পারব না রে। তুই আমায় ঘুমের ওষুধ এনে দে। আমি মুঠোখানেক খেয়ে শুয়ে পড়ব। আর উঠব না।
শ‍্যামলী বলল, এসকেপিজম বলে একটা কথা আছে বাবা। পলায়নবাদ। আমি পালিয়ে গেলাম। তারপর কি হবে, তোমরা বোঝো গে। আমি কোনো দায় নেব না।
 দ‍্যাখ শ‍্যামলিমা, তোর ভাল পড়াশোনার জন্য সকলে কত সুখ‍্যাতি করে। আমার গর্ব হয়। কিন্তু ওরা যা করল, আমি অসুস্থ মানুষ, তুই আমাকেই ঠেলে পাঠালি থানায়। আমার আর মুখ দেখাবার জো থাকল না।
শ‍্যামলী তার আলমারি থেকে পাল অটোমোবাইল এর চেকব‌ই আর পাশব‌ই বের করে বাবাকে বলল, তুমি রাখো, এখন তোমার টাকা দরকার হবে।
শশাঙ্ক পাল বললেন, হলে তুই টাকা তুলে এনে দিবি।
শ‍্যামলী বলল, বাবা, আমাকে তোমার কারবার চালিয়ে দেবার দায়িত্ব দিয়েছ, এতদিন আমি সে কাজ করে চলেছি। কিন্তু কারবারের কাজ ছাড়া আরো কাজ যদি তুমি চাপাও, সে আমার স‌ইবে না।
বাসন্তীবালা ঘরে ঢুকে বললেন, ওরা শুয়ে পড়ল। এবার তোমরা খেয়ে নাও। তোমার উপর তো কম ঝক্কি গেল না।
 শশাঙ্ক পাল স্ত্রীর দিকে বিরক্তিভরে তাকিয়ে বললেন, তুমি আমার ঝক্কির কথা আর ভেবো না। তুমি আজ বলেছ তোমার ঠাকুরের তোশকের নিচ থেকে টাকা উধাও হয়ে গিয়েছে। তোমাকে স্টিলের আলমারি কিনে দিয়েছি কি ঠাকুরের তোশকের নিচে টাকা রাখার জন‍্যে?
বাসন্তীবালা রেগে গিয়ে বললেন, আমি টাকা যেখানেই রাখি না কেন, সে টাকায় আমাকে না বলে কেউ হাত দেবে কেন?
শশাঙ্ক বললেন, তুমি দিনের পর দিন আমাকে সব কিছু থেকে আড়াল করে করে এই অবস্থা পাকিয়ে তুলেছ। ওরা তনুর বাড়িতে গিয়ে টাকা চুরি করে মদ খেয়েছিল আমায় বলেছ?
বাসন্তীবালা বললেন, তোমার শরীর খারাপ। কারবার দেখতে পারছ না, তোমাকে বলা না বলা তো সমান?
শশাঙ্ক বললেন, সমান তো আজ এই অসুস্থ লোকটাকে ঠেলে পাঠালে কেন?
শ‍্যামলী বলল, বাবা, তুমি চাও বা না চাও, একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে। কোনোভাবেই আর সেই ঘটনাকে মুছে ফেলা যাবেনা। তার ফল তোমাকে আমাকে সবাইকে নিতেই হবে।
সবিতা ঘরে ঢুকে শ‍্যামলীকে চোখ পাকিয়ে বললেন, তুই থামবি? ছেলেদুটো সবে ঘুমিয়েছে। এখন চুপ করে খেয়ে নে। বৌমণি, তুমি চলো তো, নিচে ছিষ্টির কাজ পড়ে আছে।
শ‍্যামলী অভিমান ভরে বাবাকে বলল, বাবা, আমার উপরেই সবাই চোটপাট করে। বাবা আমি কি তোমার কুড়িয়ে পাওয়া মেয়ে?
শশাঙ্ক পাল চমকে উঠে তাকালেন। বললেন, একথা বলছিস কেন?
বলছি এই কারণে, তোমার যখন মন খারাপ হবে তুমি তখন আমার কথা ভাববে। তোমাকে যখন কেউ খারাপ কিছু বলবে, তুমি আমার কথা ভাববে। এই নাও বাবা, তোমার চেকব‌ই রাখো। তোমাকে নিজের টাকা নিজেই সামলাতে হবে।
আমি কি আর পারব রে মা?
না পেরে উপায় নেই বাবা। তোমাকে নিজের টাকা নিজেকে গুছিয়ে চলতে হবে। কাকে কি দেবে, কতটা দেবে, তোমার ভাল মন্দের কথা তোমাকে ভাবতে হবে।
শশাঙ্ক বললেন, উকিল কি অনেক টাকা নেবে রে?
শ‍্যামলী বলল, বাবা, আমি একটু কিপটে গোছের। তাই তোমাকে টাকা দিয়ে রাখা। বেল দেবার সময় উকিল অনেক টাকা খিঁচে নেয়। আমি সহ‍্য করতে পারব না বাবা। বড্ড কষ্টের রোজগার কি না।
শশাঙ্ক বড় মায়াভরা চোখে মেয়ের দিকে তাকালেন।
সবিতা এসে দরজায় দাঁঁড়িয়ে বলল, নাও, এবারের মতো খেয়ে উদ্ধার করে দেবে এসো।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।