ক্যাফে গল্পে শ্বেতা পোদ্দার

নতুন জামা

“মিলির আজ খুব মন খারাপ । কিছুদিন পরেই দূর্গা পূজো । অথচ ওর একটাও নতুন জামা হয়নি ।আজ যদি ওর মা, বাবা থাকতো তাহলে নিশ্চই ওকেও জামা কিনে দিতো সবার মতো। মিলির মা, বাবা কে তা মিলির জানা নেই । বস্তিতেই ওর বড়ো হয়ে ওঠা । “

“বছর সাতের ছোট্ট মিলি চোখের জল মুছে এগিয়ে চললো বড়ো মাঠের দিকে ।মাঠের কাছে আসতেই দেখতে পেলো কাওকে গোল করে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে কিছু ছেলেমেয়ে।”

“আচ্ছা ওরা ওখানে অমন দাঁড়িয়ে আছে কেন গিয়ে দেখি তো । “

“সামনে গিয়ে দেখতে পেলো একটা মেয়ে সবাইকে কেক খাওয়াচ্ছে ।আর সবাইকে চকলেট, একটা করে কিসের যেন প্যাকেট দিচ্ছে ।”

“তুমি ওমন দূরে দাঁড়িয়ে কেন??? মেয়ে টা এবার বলে উঠলো মিলিকে দেখে ।”

“মিলি এতক্ষন দূরে দাঁড়িয়ে থেকে সবটা দেখছিলো । এবার মিলি এগিয়ে যায় মেয়েটার কাছে।”

“তোমার নাম কি দিদি??তোমার বুঝি আজ জন্মদিন… মিলি হাসিহাসি মুখে কথাটা বলে ওঠে ।”

এবার মেয়ে টা বলে….” উমম আমার নাম পাখি। হ্যাঁ তো আজ আমার জন্মদিন। “তোমার নাম কি শুনি???….

“আমার নাম মিলি ।”

“বাহ্ খুব সুন্দর নাম তো তোমার । এই বলে মিলির সামনে কেকের টুকরো তুলে ধরে পাখি । “

“মিলির চোখ টা কেমন জলে ভোরে ওঠে ।চোখ মুছে কেকটা হাতে নেয় মিলি।”

“মিলির হাতে দেয় চকলেট, আর একটা প্যাকেট । প্যাকেট টা খুলে দেখে ওতে একটা সুন্দর জামা রয়েছে ।”

পছন্দ হয়েছে মিলি???
হ্যাঁ পাখিদিদি খুব সুন্দর এটা।

“মিলির মুখে হাসি দেখে পাখিও হেসে ফেলে । আর সেইসময় সব বাচ্চারা একসাথে বলে হ্যাপি বার্থডে পাখিদিদি ।”

“আজ যে পাখির ও খুব আনন্দের দিন । ওর কাছে এটাই ওর সেরা জন্মদিন । নিজে টিউশন করে জমানো টাকা দিয়ে সবকিছু কিনেছিলো । হ্যাঁ হয়তো বেশি জনকে ও এতকিছু দিতে পারেনি, কিন্তু এই দশ জন এর মুখে ও হাসি ফোটাতে পেরেছে এটাই ওর কাছে অনেক ।”

সবাই নতুন জামা, চকলেট পেয়ে খুশি মনে এগিয়ে চললো ওদের বস্তির দিকে ।

“আর মিলি সে তো আনন্দে চিৎকার করে বলতে বলতে যাচ্ছে দেখো গো সবাই আমরাও নতুন জামা হয়েছে । “

“পাখির জন্মদিনের সেরা উপহার ও পেয়ে গেছে ।প্রতি বছর জন্মদিনে অনেক দামি দামি উপহার পেলেও এই বাচ্চাগুলোর হাসি টাই পাখির কাছে খুব দামি । আর এই হাসি যে কোনো উপহারকেই হার মানাতে বাধ্য।”

“পাখিও দেখতে পেলো মিলিও ক্রমশ বস্তির রাস্তার দিকে এগিয়ে চলছে।

“পাখির চোখের কোণে কি জল চিকচিক করছে হয়তো তাই ।এটা যে আনন্দের জল।”

“পাখিরও ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো । ও ওর সাইকেল নিয়ে এগিয়ে চললো ওর বাড়ির পথে । “

“আজ মিলির মুখে হাসি, পাখির মুখে খুশির ঝলক, বাচ্চাগুলোর হাসিখুশি মুখ সবাই সবার আনন্দের ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে ।”

আর এই সুন্দর মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে রয়ে গেলো এই প্রকৃতি ।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।