• Uncategorized
  • 0

“আমি ও রবীন্দ্রনাথ” বিশেষ সংখ্যায় হীরক বন্দ্যোপাধ্যায়

আমি ও রবীন্দ্রনাথ

এক

আপনার সঙ্গে যখন আমার পরিচয় হলো
তখন থেকেই বুঝেছিলাম আমার
জীবন স্বাভাবিক ভাবে ব ইবে না।বড়ো বেশি চেনা লাগতে শুরু করলো গ্রাম বাড়িঘর
পাঠশালা নদী মফস্বল…
রতনপল্লীর পথ,প্রান্তিক স্টেশন, সুবর্ণরেখার উল্টোদিকে র পাকুড়গাছ,টংরা মাটির উপর
কাঠটগর নক্ষত্রের ফসিল…
তখনও আমি বুঝতে পারিনি
আমার যা কিছু এবার ভেসে যাবে ক্রান্তিকালে
স্বর অবসাদ স্তব্ধতা আদরে অনাদরে
শেষ বিশ্বাসের সোহাগ চন্দন
পাখির শিস শুনলে আমার মনে হয় ফাগুন মাস
হরিণ তার সফল সঙ্গমের পর যেমন
রেখে আসে কস্তুরী নিজস্ব ঠিকানায়
ভোরবেলা নরম রোদ দেখলে মনে হয় আলিঙ্গন করি,মৃদু কন্ঠস্বর শুনলেই মনে হয় ক্লিওপেট্রা…
তারপর অনেক রাস্তা ঘুরে একদিন
সংবেদনশীল স্বেদে আর পুলকে আকাশভরা সূর্য তারায় মুহূর্মুহু রোমহর্ষে কখন যে কবিতার ভেলায় চড়ে বসলাম, দিনে আর রাত্তিরে
আলোয় আর অন্ধকারে নিমজ্জিত সুখ আর দু:খে মানসী,সোনার তরী ,চিত্রা,চৈতালি হয়ে
শরীর মন ভেসে চলল নদীর পর নদীতে
চলন্তযানে ,যত যায় অবগাহনে ততই সংগীত জন্মায় আর সংগীতের কথায় যখন এলো
তখন গীতঞ্জলী আসবে না কেন
সেটাই প্রশ্ন ,সেসব নিজমুখে কী আর বলবো।
কখন যে একটার পর আর একটা রচনা
ঢুকে পড়ে একটার পর একটা গান …মাঝে মাঝে তব দেখা পাই,চিরদিন কেন…
ভাবতে পারা যায় না।শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসে।
আমি তোমার বিরহে রহিব বিলীন…
ঝলমল করে উঠছে শব্দ ও স্পেস ব‍্যবহারের নীরবতা।গলা থেকে উঠে আসে আনন্দ চিৎকার
মনে হয় তখন, চিনতে পেরেছি তোমায়,অথচ বুঝতে তো পারিনি কোনোদিন।
আর আমি তো ধারণ করে আছি শুধু তোমাকেই তখন।কত বৃক্ষ মাথা ঝাঁকাচ্ছে
তোমার গানের ওপারে
কত কত নক্ষত্র নেমে আসতে চাইছে তোমার হাতের নির্দেশে, কত শত ব‍্যালাডে ,অপেরায়,সিনেমা থিয়েটারে
তোমাকে ব‍্যবহার করে লুকিয়ে বসে রয়েছে সুদক্ষ শিল্পীরা,আমি দেখতে পাচ্ছি
রাশিয়ার চিঠি থেকে জীবনস্মৃতি বিস্তারিত শয্যা পাতা।লাইনের এপার আর ওপার
এভাবেই অক্ষর পরিচয় হচ্ছে আমার…

দুই

প্রকৃতির ঐকতান স্রোতে
নানা কবি ঢালে গান নানা দিক হতে…
…রবীন্দ্রনাথ
শূন্যতার শেষ থেকে দূরত্বের দূরতর প্রান্ত থেকে অবশেষে একদিন এই আমি বড়ো হয়ে উঠলাম, যে চার অধ‍্যায় তোমার শেষ উপন্যাস খানাখন্দভরা পথঘাট পেরিয়ে উন্মাদের মতো
সেখানেই ঝাঁপিয়ে পড়লাম, তখনও দুই বোন ,মালঞ্চ আমার অধরা…
বুঝলাম বক্তার মুখ এখন মাইকের সামনে।
আরো পরে বুঝেছি এ রচনা নাটকের বা সাংকেতিক উপন্যাসের কোনো মতেই
হতে পারে না ,এ শুধু প্রেমের, গীতিকবিতার।
আজো অতীন্দ্রের সঙ্গে সহজেই মিল খেয়ে যায়
বাঙালি যুবকের অবর্ণনীয় দাহে।ওই যেখানে গিয়ে বাক নিচ্ছে ,নিজেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী
নিজেই নিজের ঘাতক…
ও:কী সাংঘাতিক!ভাবা যায় না ।
আমার পরাণ যাহা চাই, তুমি তাই তুমি তাই..ই গো….
রবি ঠাকুর হে তুমি তো নিজেই বলেছো
…কবি যদি ত্রিসীমানায় থাকে তাকে চাপা
দেওয়া অসম্ভব….
আমি চাই রেলগাড়ির কাম‍রার পাশের জানলা
যেখান থেকে আকাশ দেখা যায়।দেখা যায়
যেখান থেকে অপরাহ্নের রাঙা রোদ
তাই ক্ষীরো চিরন্তন, উজ্জ্বল রাণী কল‍্যানী নয়
ততোক্ষণে ঘাসে মিশে যাক শিশিরের স্বপ্ন
মধুখালীর বিল,খোয়াই এর অভূতপূর্ব শিরীষ
আমি চাই সামান্য কামিনীর গন্ধে
ঝরে যাক আমার সমস্ত বিহ্বলতা
রবীন্দ্রনাথ হে
কাশফুলের আড়ালে তুমি হ ও
রাঢ়ের বিধাতা ….
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।