• Uncategorized
  • 0

“আমি ও রবীন্দ্রনাথ” বিশেষ সংখ্যায় সবর্ণা চট্টোপাধ্যায়

সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়

১.

যতদিন যায়, সন্ধ্যা গড়িয়ে নামে, খাদে।
এক বদ্ধ উন্মাদ গান গায়, ‘ ডুবতে রাজি আছি আমি, ডুবতে রাজি আছি।’ রাতের একতারা বাজে।
শ্রোতাহীন সভা, মিটিমিটি হাসে।
লিখতে থাকি…
বুঝে পাই না শব্দের ক্রম। দুঃখের পরে আঘাত, নাকি আঘাতের পর দুঃখ!
লিখতে লিখতে ভিজে যায় ভারী শরীর।
পাগলটা দুহাত তুলে গান গেয়ে ওঠে।
কারা ওর পিছু নেয়। ঢিল ছোঁড়ে।
মাথা ফেটে যায় হঠাৎ…
রক্তে ভেজা এক একটা অক্ষর জড়ো হয় বুকের ভেতর।
তুমি কি আজও শুনতে পাওনা?
দেখতে পাওনা, আমি জ্বলছি, একা?
একটা পাগল আর আমি…
দুজনে মিশে যাচ্ছি একই ছবির মতো
সন্ধে গড়িয়ে আসে।
ক্লান্ত রাস্তায়, আমরা হাঁটতে থাকি
ছোটগল্পের একই চরিত্র হয়ে!

২.

পাশের বাড়ি থেকে শাঁখের আওয়াজ এলে বুঝি—
আলো কমে এসেছে পৃথিবীতে। এক অদ্ভুত আঁধার ঘিরে ধরবে আবার। কুচো কাগজের মতো উড়ো শোক জড়ো হবে পায়ের তলায়।
হলুদ টেবিলল্যাম্প ধুঁকবে একপাশে। চোখাচুখি নেই কতদিন। কতদিন ঘাড়ের পাশে স্থির হয়না তোমার নিঃশ্বাস। তবু ভাবতে থাকি, আমরা কত সুখী। বিষাদ দিনের বেজে ওঠা ব্লুটুথ ডিভাইস!
পাশের বাড়ি থেকে রেওয়াজের সুর। ক্লাস নাইনে পড়া এক মেয়ে, রবীন্দ্রনাথকে বুকে নিয়ে ভাবে, সেও একদিন প্রেমিকা হয়ে উঠবে ঠিক। তাকে স্বপ্নে দেখেছি বহুবার। বহুবার তার এলোচুল থেকে সরিয়ে দিয়েছি বাসি ঘ্রাণ।
রান্নাঘরে হুইসিল পড়ে— প্রেসার কুকারে সেদ্দ হয় চাল। আর জ্যোৎস্নায় ঢলে পড়া চাঁদ ভাবে, আজ তার কালরাত্রি শেষ। গভীর আঁধার। মাদুরে শুয়ে শুয়ে শুনতে পাই, ধুলো পড়া হারমোনিয়ামের শব্দ….মা গেয়ে উঠছেন ঘুমপারানিয়া গান!

অলিখিত জার্নাল

১.

উড়ে আসা পাতার মতো কিছু মুখ
সন্ধের আলো খুঁজে ভিড় করে চৌরাস্তায়,
কত আনন্দ, শোক
আজকাল মনে আসে না আর কিছুই।
রূপোলি আলো চকচক করে
রূপকথার ট্রেনে এসে থামে। তৈরী না হওয়া একটা ব্রীজের পাশ দিয়ে হু হু করে ছুটে যায় বিগত আট ন বছর ধরে।
ততদিনে মারা গেছে মা। স্তন বাদ পড়ার সময় শুধু একবার কেঁদেছিল আয়না দেখে। তারপর থেকে
আটমাস চাঁদের দিকে তাকায়নি আর।
আমার বাংলা টিচার বুঝিয়েছিল,
খুব শীতে থমকে যায় নদী।
তুমি তখন বসন্তে নুইয়ে পড়া মালতীলতা…
শালিখের মতো একলাফে জানলায় এসে বসেছিলে।
রোদ পড়েছিল, উড়েছিল চুল,
ট্রেনটা থেমেছিল হঠাৎ ব্রীজের পাশে।
গোটানো হাত, বাড়িয়ে দিলে।
চেয়েছিলাম,
আবার নাম না জানা সুড়ঙ্গপথে হু হু করে ছুটে যাব।
ভেঙে গেল চশমার কাচ। কত ধুলো,
জড়ো হওয়া শুকনো পাতা। বারান্দায় অমবস্যা রাত।
শুধু দূর থেকে ভেসে আসা একটা অদেখা ট্রেনের শব্দ…
মিলিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ, ছুঁয়ে ফেলার আগেই!

২.

আজ আবার জড়ো হল ঘনঘটা। শুকনো পাতার ভেতর পুরোনো অপমান। যে কথাগুলো হারিয়ে ফেলার ভ্রমে খুশি হয়েছিলাম, সামান্য কটা দিন, আবার রঙ চড়ল আগের মতো।
বারবার নিজেকে ফেলনা ভাবতে বড়ো লাগে। কোথায় যে
লাগে, টের পাই না। শুধু এক গভীর খাদের ভেতর থৈ থৈ করে জল। স্থির অথচ অস্থির। বুঝে পাই না এত শীত করে কেন?
কেন কেন আর কেন’র এই প্রশ্নে শেষ হয় সময়। ততদিনে আবার হয়ত ভুলে গেছি অসংঙ্গতি। রবিঠাকুরকে নিয়ে, জলের ভেতর। খুলে যাচ্ছে নন্দনকানন।
কাপড় তুলতে যাওয়ার ভান করে খোলা ছাদে দুদন্ড নিঃশ্বাস নিই। কবিতা আসে। মনে মনে দেখা হয়। ঠিক যেমন কৃষ্ণার সামনে আসতেন কৃষ্ণবাসুদেব!
দেখতে পাই, দীর্ঘছায়ার আড়ালে সূর্য ওঠে, অস্ত যায়। দিন কাটে, পোড়া নিঃশ্বাস হয়ে। প্রশ্ন করি তাকে, কেন? কিকরে?
কিকরে মনে মনে এতটা নারী হয়ে উঠেছেন তিনি?
উত্তরে মৃদু হাসেন, চিরপ্রেমিক, তরুন এক পাখি !
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *