• Uncategorized
  • 0

গল্প কথায় রাজদীপ ভট্টাচার্য

পুটুস নামের তারা

কি হল কি! এই ভরসন্ধেবেলা মশার মধ্যে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছ কেন? ঘরে এস–
স্ত্রী সংগীতার পাশে গিয়ে দাঁড়ায় প্রশান্ত। তখনও পূর্ব আকাশের দিকে নির্বাক চেয়ে আছে সংগীতা। আসলে পুটুস চলে যাবার পর থেকেই ও এইরকম। যদিও জন্মের ঠিক পরেই ধরা পড়েছিল রোগটা। একটা ভয়ঙ্কর জেনেটিক ডিসঅর্ডার নিয়েই ছেলেটা পৃথিবীতে এসেছিল। ডাক্তারবাবুরা বলেই দিয়েছিলেন, বড়জোর তিন চার বছর। চোখের সামনে রোজ সন্তানের কষ্ট দেখতে দেখতে ভিতরে ভিতরে ক্ষয়ে যাচ্ছিল সঙ্গীতা। আর শেষে একদিন সুতো ছিঁড়ে উড়ে যাওয়া ঘুঁড়ির মতো ভেসে গেল পুটুস। একদিকে সন্তান হারানোর এক অতলান্তিক শোক আর অন্যদিকে তীব্র ডিপ্রেশনে ডুবে যাওয়া স্ত্রী। প্রশান্তর কাছে তখন একটা দিশেহারা অবস্থা। একটু থিতোতেই ডাক্তারের পরামর্শ মতো দ্বিতীয় ইস্যুর দিকে ঘুরে তাকানো।
পুটুস চলে যাবার পরে তা বছর দুয়েক কেটে গেছে। এদিকে পেটের মধ্যে হাত-পা ছুঁড়তে শুরু করেছে আরেকজন। তবু এখনো প্রতিটি মুহূর্ত সংগীতা পুটুসকে সাথে নিয়েই বাঁচে।
— কি হল! ঘরে চল এবার
— আর একটু থাকি
— আর একটু থাকলে কি উপকারটা হবে শুনি?
— পুটুস ফুল ফুটবে।
— মানে? কি বলছ কি উল্টোপাল্টা!
— সত্যি! যেদিন ও চলে গেল সেদিন বিকেলে আমি প্রথম দেখলাম।
— কি দেখলে?
— একটা তারা, আকাশে নতুন এসেছে।
— এই শোনো, ডাক্তার তোমাকে বারবার বলেছেন ভুলভাল দুশ্চিন্তা না করতে।
— এটা দুশ্চিন্তা নয়, ওকে দেখলে আমার মন ভালো হয়ে যাবে।
— এটা কোনো কথা হল। ওই তারা বিগত হাজার লক্ষ বছর ধরে ওখানেই আছে। হয়ত পৃথিবীর অনেক আগে থেকে আছে।
— তাহলে তুমি বল, একজন মানুষ মৃত্যুর পরে কোথায় যায়? কি করে?
— দূর বোকা, মৃত মানে জড়। তাই সেই শরীর আবার মিশে যায় মাটি, জল, বাতাসে। এভাবেই মানুষের দেহ ছড়িয়ে পড়ে প্রকৃতির মাঝে। আবার তা থেকে জন্ম নেয় নতুন প্রাণ।
— আচ্ছা, তাহলে যে আসছে তার মধ্যেও পুটুস আছে!
— আছে গো, নিশ্চয়ই আছে, থাকতেই হবে।
সংগীতার কাঁধে হাত রেখে দিগন্তের দিকে তাকায় প্রশান্ত। ঠিক তখনই পূর্ব আকাশে টুপ করে জ্বলে ওঠে একটা তারা। সংগীতা উথলে ওঠে, “ওই দেখ, আমাদের পুটুস! ” প্রশান্ত চেয়ে দেখে একটা স্নিগ্ধ নীলাভ তারা। সত্যিই, আগেতো কখনো দেখেনি একে!
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।