• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক কোয়ার্কো ধারাবাহিক উপন্যাসে সুশোভন কাঞ্জিলাল (পর্ব – ২৪)

চব্বিশ

সন্ধ্যেবেলায় হঠাৎ আর্যমার ফোন এল। আমায় জানালো যে আমার কথা এবং ওদের তদন্তর সূত্র ধরে
রামের মার্ডার কেসের প্রধান অভিযুক্ত জগা ওরফে জগন্নাথ সাউকে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও পাওয়া যায়নি। সে পলাতক। আমিও সুযোগ বুঝে আর্জমাকে ডঃ চোঙদারের মার্ডার কেসের ব্যাপারে কোনো তথ্য জানা আছে কিনা জিজ্ঞাসা করলাম। কিন্তু ও বলল কিছু জানেনা। লোকাল থানায় খোঁজ নিয়ে জানাবে। আর কিছু কথা হল না। শুধু বোঝা গেল যে তদন্ত কিছুই আর এগোয়নি। ফোন রেখে দিলাম। ফোন ছাড়ার পর মনে হল যে ডাকাতদের মধ্যে বিদেশি ছিল সেটা বলা হল না। তথ্যটা হয়তো ওদের কাজে লাগতে পারে বিদেশিদের ব্যাপারে আমি কোনো কেরামতি দেখাতে পারবো না। ঘন্টা দুয়েক পর আর্জমা আবার ফোন করল। বলল যে লেক থানায় একটা মিসিং রিপোর্ট লেখানো হয়েছে কয়েকদিন আগে। কিন্তু মার্ডার কেসের কোনো রেকর্ড নেই। আর্জমা আরও বলল যে শুধু ডঃ চোঙদার না ওনার সঙ্গে ওনার অ্যাসিস্ট্যান্ট মিঃ বিজয়নের মিসিং রিপোর্ট লেখানো হয়েছে। ওদের দুজনকেই পাওয়া যাচ্ছে না। তারা এক সঙ্গেই বেরিয়েছিলেন কোনো একটা কাজে। রিপোর্টটা লিখিয়েছেন রিসার্চ অ্যাসিস্টান্টের স্ত্রী। রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট ও তার স্ত্রী ডঃ চোঙদার বাড়িতেই থাকতেন। তারপর তদন্ত আর এগোয়নি। আমি এবার ওকে ব্যাংক ডাকাতির তথ্যগুলি দিয়ে দিলাম। ওর গলা শুনে মনে হল ও বেশ খুশি হয়েছে। আমরা দুজন দুজনকে অনেক ধন্যবাদ দিয়ে কথা শেষ করলাম।
শ্রেয়ান ঘরে নেই। কোথায় যেন বেরিয়েছে। বাল্মীকিও মুদির দোকানে গেছে কেনাকাটা করতে। তাই বিরক্ত হওয়ার সুযোগ কম বুঝে ভাবনার সাগরে ডুবে দিলাম। বার্মিংহোমে আমি বছর দশেক ছিলাম। পড়াশোনায় ভালোই ছিলাম। কিন্তু খুব ইন্ট্রোভার্ট হওয়ার জন্য সোশ্যাল লাইফ সেভাবে ছিল না বললেই হয়। আমি একা নিজের মতোই থাকতাম পড়াশোনা আর বিভিন্ন বিষয়য়ের গল্পের বই নিয়ে। হ্যাঁ, মেনসার ব্যাপারটা একটা বড় অ্যাচিভমেন্ট ছিল। তার ফলে স্কুলে জনপ্রিয়তাও পেয়েছিলাম। কিন্তু আমি সেসব এড়িয়ে চলতাম। এখনকার যেসব ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটছে তার জন্য আমার পূর্ব জীবন দায়ী হতে পারে না। মা বিদেশে একটি স্কুলে টিচারি করত আর অনেক কম সময়ই ওখানে ছিল। তারপর বাবার সঙ্গে ডিভোর্সের পর দেশে ফিরে এসে কলকাতায় একটি স্কুলে পড়াত। বিয়ে করেনি আর। তবে এখন বুঝি হয়তো জয়ন্ত আঙ্কেলই মার বয়ফ্রেন্ড ছিল। কিন্তু মার সঙ্গেও এইসব ব্যাপারে যোগ থাকার চান্স নেই। তার মানে বাবাই যুক্ত কিন্তু কিভাবে? বাবা তো রসায়নের রসে ডুবে থাকতেন অথবা ব্যস্ত থাকতেন ধর্মের আবহে ধ্যান ও আধ্যাত্মিক চর্চায়। কিন্তু এটাও ঠিক যে ওনার আত্মহত্যার কারণ আমরা কেউই জানি না। আমি যে বাবাকে চিনতাম তিনি নির্ঝঞ্ঝাট এবং আপনভোলা। তেমন মানুষের আত্মহত্যা করার সম্ভবনা খুব ই কম। তার মানে বাবার ব্যাপারে আমি অনেক কিছুই জানিনা। তাই ভেবে লাভ নেই। তবে জানার চেষ্টা করতে হবে। ডঃ চোঙদার আমায় কিছু জানাতে চান। যে ব্যাপারে এবার বিদেশি কোনো জার্মান লোকের ইন্টারেস্ট আছে। ব্যাপারটা খুব সাধারণ নয় সেটা দুটো খুন আর প্রকাশ্য ডাকাতির ঘটনা থেকেই বোঝা যায়। আচ্ছা এমনও তো হতে পারে আমার বাবাকেও খুন করা হয়েছিল। ভেবে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। শ্রেয়ান ঢুকলো নিজের চাবি দিয়ে দরজা খুলে। আমি ড্রয়িং রুমেই বসেছিলাম, ঢুকেই আমাকে দেখে গান গেয়ে উঠল -“গুম হো কিসিকে ইয়াদ মে সুভা সাম “। ওর এনার্জি লেভেল দেখলে সত্যি হিংসা হয়। আমি বললাম, ” কাল সকালে ফ্রি থাকলে ডঃ চোঙদারের বাড়ি যেতে পারিস আমার সঙ্গে। “

ক্রমশ… 

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।