“আমি ও রবীন্দ্রনাথ” বিশেষ সংখ্যায় শর্মিষ্ঠা সেন
by
·
Published
· Updated
আমার রবীন্দ্রনাথ
ঘরে আছে দিস্তে দিস্তে কাগজ
এক দোয়াত সুলেখা কালি , ঝর্ণা কলম গোটা পাঁচ ছয় ;
কালো রেক্সিনে বাঁধানো পাঁচ বাই আট নোটবুক,
বাংলা অভিধান, সাহিত্যের ইতিহাস…
শোকেস ভর্তি সার সার দাঁড়ানো রচনাবলী , গদ্য ,পদ্য,
স্বদেশী এবং ভিনদেশী পেপারব্যাক ও বোর্ড বাঁধাই ৷
আয়োজনের খামতি নেই ! অথচ
লিখতে বসলেই –
শব্দেরা গঁদের আঠার মতো চিটচিটে হয়ে জট পাকায় ৷
আমার প্রতি অন্তহীন আনুগত্যে অক্ষর ,যতিচিহ্ন পরপর পরপর
কবিতার কেরানী হয়ে আঙুল বেয়ে নামতে থাকে ৷
বিস্বাদ মুখে সেসব একসময় জড়ো হয় নোংরা ফেলার ঝুড়িটায় ৷যার পোষাকী নাম ‘ওয়েষ্ট পেপার বাস্কেট’ !
কিন্তু এমন তো কথা ছিল না গুরুদেব !
আমি কী আজন্মকাল তোমার মুখ চেয়ে চলিনি ?
পরীক্ষা দিতে যাবার আগে তোমাকেই মনে করে বলিনি,
” ঠাকুর , আমি আসি ৷ দেখো তুমি!”
হ্যাঁ,তোমার কবিতার খোকাদের আমি হিংসে করেছি বরাবর !
মেয়েদের কি তলোয়ার হাতে নিয়ে মা কে বাঁচাতে নেই ?
কেন শুধুই বীরপুরুষ ?
খুকি আর মায়ের রূপকথা কি লিখতে নেই , বলো?
বালিকা বেলায় গভীর মমতায় চন্দন পরিয়ে মালা দিইনি তোমায় ?
কৈশরের প্রেমে অপ্রেমে শুধুই তুমি !
হরষে-বিষাদে ,আনন্দে -বেদনায় তোমারই আশ্রয়ে ৷
“রবি কিরণের ছিটেফোঁটাও যদি আশীর্বাদী পেতাম !” এমন আশা করা কি খুব দোষের ?
এসব আসলে শুধু গল্পেই হয় ৷
ভক্তেরা নিভৃৃৃতে কাঁদে না পাওয়ার যন্ত্রনায় ৷ আর
মহাপুরুষেরা ঝড় ঝঞ্ঝা তুচ্ছ করে শতাব্দীর পর শতাব্দী বেঁচে থাকেন হেলায়, আলোকবর্তিকা হয়ে৷
কবির সেই সৃষ্টি ভেঙেই মানুষের বেঁচে থাকা, জীবন যাপন,
শিল্প নির্মাণ, তর্ক বিতর্ক, পেয়ালায় তুফান ৷
দ্যাখো ! পৃথিবীর নির্জন কোণে , এক অতি সাধারণ নারী, আলগোছে অক্ষর নিয়ে কাটাকুটি খেলি !
“একসময় যদি কিছু একটা দাঁড়ায় ” এই ভেবে ৷
হয়তো এভাবেই ছুঁয়ে থাকা ……
এভাবেই সংগোপনে অস্ফুটে অন্তহীন কথোপকথন ৷
চোখ তুলে দেখি, কাঁচের আড়াল থেকে তোমার স্নেহমাখা মুখখানি অভয় দেয়৷
হৃদয়ে থেকো রবীন্দ্রনাথ ৷ আমৃত্যু ৷