তা বললে হয় না,ছোটদি আমাদের ঘরের মেয়ে,এ গ্রামে জন্ম নাহলেও,এ গ্রাম তার কর্মভূমি,বিশ্বের দরবারে এ গ্রামকে…থাক,থাক সুভাষ,উত্তেজিত সুভাষকে থামিয়ে দিলেন হরিহরবাবু ,তোর কথাগুলো আমাদেরও মনের কথা,ওনার জন্যেই শুধু এ গ্রামের নয়,আরো পাঁচটা গ্রামের মেয়েরা সাবলম্বী হয়েছে,কিন্ত্ত এ অবস্থায় তাঁর মরদেহ হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসা সম্ভব নয়।হরিহরবাবুর কথায় সুভাষ থেমে গেল।ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মানুষজন চোখের জল মুছছে।তাদের ঘরের মেয়েরা অনেকেই,ছোটদির ‘আনন্দ নিকেতনে’ কাজ শিখে রোজগার করে।বাহাত্তর বছর বয়স হয়েছিল ছোটদির,এখনও সমান কর্মক্ষম ,হাসিখুশি ছিলেন।কাজ আর কাজ।পাঁচ দশক আগে শিক্ষকতা করতে এসে এখানেই থেকে গেলেন।সংসার পাতলেন না,হাসতে হাসতে বলতেন,বিয়ে করার সময় পেলাম না।নিজের অর্থ দিয়ে গড়ে তুললেন আনন্দ নিকেতন।নারি মুক্তির স্বপ্নে জড়িয়ে রইলেন এ গ্রামের মাটির সাথে।
তোমাকে ছাড়া আমরা বাঁচবনা ছোটদি,বার্ষিক অনুষ্ঠানের শেষে মেয়েরা ঘিরে ধরছে তাঁকে।শোন আমি চলে গেলেও তোরা ঠিক কাজ চালিয়ে যেতে পারবি।মরতেতো একদিন হবেই।আমার মৃত্যুর পর,সারাদেহ ফুল দিয়ে সাজিয়ে,চন্দন মাখিয়ে,বেশ ঘটা করে..শোন,ছদ্ম রাগ দেখিয়ে অনিমা চুপ করালো ছোটদিকে,এসব বলার জন্যে আজ রাতে তোমার খাওয়া বন্ধ,আর যদি কোনদিন শুনেছি,অনিমা আঙুল তুলছে ছোটদির দিকে আর ছোটদি না রেগে হাসতে হাসতে জড়িয়ে ধরলেন অনিমাকে।মঞ্চের মাইক খুলতে খুলতে এ দৃশ্য দেখে সুভাষের চোখে জল।
চোখের জল মোছ সুভাষ বাড়ি যা।সারা পৃথিবী আজ থেমে আছে,মরদেহ আনা সম্ভব নয়,সব ঠিক হয়ে গেয়ে আমরা স্মরণসভা করব,সবাই বাড়ি যাও সাবধানে থাকবে,হরিহরবাবু বাড়ির পথ ধরলেন ,বাকিরাও।সুভাষ একা দাঁড়িয়ে আছে হাটতলায়।হাসপাতাল থেকে ফোনটা পেয়েই দুয়েকজনকে ডেকে এনেছিল এখানে।ছোটদির সাথে তাঁর আত্মিয় স্বজনদের তেমন সম্পর্ক নেই।এ গ্রামের মানুষ তাঁর আপনজন।কিন্তু মরদেহ আনা গেল না।অসহায় সুভাষ ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠল।
আওয়াজটা পেতেই ঘুম ভেঙে গেল।ফোনটা বাজছে, বাইরে ভোরের আলো।শুভ জন্মদিন ছোটদি,অনিমার ফোন।তখনও ঘামছেন ছোটদি।হ্যাঁ আজ তার জন্মদিন।সারাজীবন দিনের আলোর মত স্বপ্ন ছড়িয়েও,রাতের স্বপ্নে কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না মানুষের।জানলা দিকে তাকালেন ছোটদি,মাঝ চৈত্রে ভোরের আলোয় অশোক ফুলগুলো কি হেসে উঠলো! ফোনের ওপাশে অনিমা হাসছে।দুঃস্বপ্নের শেষে ছোটদিও হাসার চেষ্টা করলেন।