• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক প্রকল্পশ্রীরিয়্যাল ধারাবাহিকে প্রকল্প ভট্টাচার্য (পর্ব – ৮ ।। দ্বিতীয় ভাগ)

নাম: পরিমলবাবুর পরিবারকথা

পর্ব ৮: যন্ত্র না  

(আগে যা ঘটেছেঃ সারাদিন পাওয়ার কাট থাকার জন্য পরিমলবাবুদের দৈনন্দিন কাজ আটকে যাচ্ছে।)
(দরজায় শব্দ)
প্রীতি- আসছি !!
পরিমল- এখন কে এলো, প্রিয়ম ফিরল নাকি!
(প্রিয়ম আর জুঁইয়ের প্রবেশ)
প্রিয়ম- দাদু! আমাদের ছুটি হয়ে গেল! ইয়েয়েয়েয়েয়ে!!
পরিমল- জানিস, তোর বাবা আর পিসি যখন ছোট ছিল, সন্ধ্যেবেলা পড়তে বসলেই কারেন্ট চলে যেত, আর ঠিক তোর মতো আনন্দ করতো পড়তে হবে না বলে!
প্রিয়ম- হিহিহিহিহি!! তাই, পিসি?
প্রীতি- আমি না মোটেই। তোর বাবা করত। ফাঁকিবাজ ছিল।
প্রিয়ম- ফাঁকিবাজ মানে কী পিসি? বাজপাখি?
প্রীতি-হিহিহিহি! ওয়েল সেইড!
জুঁই- না, ফাঁকিবাজ মানে হচ্ছ যে কাজ না করে ফাঁকি দেয়। যেমন, তুমি। স্কুল থেকে ফিরে ড্রেস বদলানো নেই, কিছু নেই, শুধু গল্প করে যাচ্ছো!
প্রিয়ম-তাহলে মা আজ সব টিচাররাও ফাঁকিবাজ, ক্লাশ নিচ্ছেনা কেউ!
পরিওমল-হাহাহাহা! ঠিক ঠিক!
পরমা- তা ভালো হয়েছে, সবাই বাড়ি ফিরে এসেছে। এখন আমার ছেলেটা ফিরলেই হয়। ও বৌমা, দেখো না ফোন করে!
জুঁই- অনেকবার চেষ্টা করলাম মা, ফোন সুইচ অফ!
পরিম্ল- মিটিং-এ আছে বোধহয়।
পরমা- মিটিং কতক্ষণ বা চলে! বৌমা তো বলছে অনেকক্ষণ সুইচ অফ!
পরিমল- আরে এত টেনশন করো কেন!
পরমা- হ্যাঁ, সত্যি কথা বললেও টেনশন করা, না?
প্রীতি- দাঁড়াও মা, আমি একজনকে ফোন করে দেখি।
পরিমল- কে, তোর ঐ বন্ধু আনন্দকে?
প্রীতি- ওঃহো বাবা, তোমার কি ধারণা আমি সবসময় আনন্দকেই ফোন করি শুধু! না, ইনি দাদার কলিগ। সৈকতবাবু। ভালো লোক।
জুঁই- হ্যাঁ হ্যাঁ, সৈকতবাবু খুব ভালো মানুষ। প্রিয়মের জন্মদিনে ক্যাটারিঙের ব্যবস্থা তো উনিই করে দিয়েছিলেন!
প্রিয়ম- সেই ভিডিও গেম গিফট দিয়েছিলেন যিনি? খুব ভালো আঙ্কল!
পরিমল- হাহাহাহা! যার যা ধান্দা, মনে রেখেছে!
প্রীতি- হ্যালো, সৈকতবাবু, আমি প্রীতি বলছি। হ্যাঁ, হ্যাঁ, আপনার বন্ধু প্রসূনের বোন আমি। হ্যাঁ, সবাই ভালো আছি। আপনারাও ভালো তো? আসলে একটা দরকারে ফোন করলাম। দাদা কি অফিসে… ওহো, তাই? আচ্ছা। না না ঠিক আছে। হ্যাঁ, দেখছি। জানাব আপনাকে, অবশ্যই। ভালো থাকবেন। আচ্ছা।
পরমা- কী বলল রে?
প্রীতি- বলল আজ ওদের অফিসও ছুটি দিয়ে দিয়েছে সকালেই। দাদাও ঘন্টাদুয়েক আগেই বেরিয়ে গেছে।
পরিমল- বেরিয়ে কোথায় গেছে? এতক্ষণে তো বাড়ি পৌঁছে যাওয়ার কথা!!
পরমা- কী হল, এবার কে টেনশন করছে শুনি?
পরিমল- না, ঠিক টেনশন না, তবে চিন্তা হচ্ছে।
পরমা- বোঝো!
প্রীতি- আচ্ছা, মা, বাবা, তোমরা ঝগড়া পরে কোরও। এখন দাদার খোঁজ কোথায় করা যায়! বৌদি, তোমার কাছে আর কোন বন্ধুর নাম্বার আছে?
জুই-না। ওর অফিসের নাম্বার আছে, কিন্তু অফিস তো বলছে ছুটি হয়ে গেছে…
প্রীতি- ওক্কে, রিল্যাক্স। আর একটু দেখি।
পরমা- কীই যে করে না ছেলেটা! এইসময় কেউ ফোন বন্ধ রাখে!
পরিমিল- আরে, এমন করছে যেন বাইরে যুদ্ধ হচ্ছে! ঠিক চলে আসবে, ধৈর্য ধরো। আচ্ছা, আমি বাইরে গিয়ে দাঁড়াই একটু।
পরমা- দেখেছ, চিন্তাটা কার বেশী হচ্ছে!
প্রীতি- বাবা, রিল্যাক্স! দাদা যখন হোস্টেলে থাকতো, ছুটিতে বাড়ি ফিরত ট্রেনে। ফিরে গিয়ে খবর দিত পোস্টকার্ডে লিখে, সেটা পাক্কা এক সপ্তা বাদে এসে পৌঁছত। তখন না ছিল মোবাইল, না ফোন। কই, তখন তো তোমাদের এত টেনশন করতে দেখিনি?
পরিমল- কী করব, এই যে একটু আগেই বলছিলাম, এখন আমরা যন্ত্রের ওপর এত নির্ভর করতে শুরু করেছি, যে অভ্যাস খারাপ হয়ে গেছে!
পরমা- ঠিক বলেছ। এই যন্ত্রই হচ্ছে যন্ত্রণা!!
প্রীতি-ওয়াও!! মা, কী দারুণ বললে!
পরিমল- আরে, হবেনা! কার বৌ দেখতে হবে তো!
প্রীতি-অমনি নিজে ক্রেডিট নেওয়ার তাল তাই না!
পরমা- অমনিই করে ও সবসময়! হিংশুটি!
প্রিয়ম- মা, হিংশুটি মানে কী? হিং আর মটরশুঁটি?
জুঁই- তোমাকে কে এখানে দাঁড়িয়ে বড়দের মধ্যে কথা বলতে বলেছে? যাও ঘরে যাও! কতক্ষণ আগে বলেছি ড্রেস বদলে নাও, কথা কানে যাচ্ছে না, তাই না?
প্রীতি-আহা বৌদি, ওকে বকছ কেন… বুঝতে পারছি, দাদার জন্য চিন্তা হচ্ছে, কিন্তু…
(দরজায় ধাক্কা) ঐ বোধহয় এল! যাই দেখি।
প্রসূন-উফফ, কী অবস্থা! পাওয়ার নেই তাই রাস্তার সবকটা সিগনাল বন্ধ, আর প্রচন্ড জ্যাম!!
পরমা- আর আমরা এদিকে চিন্তা করে মরি আর কি! একটা খবর দিবি তো!!
প্রসূন- আরে, মোবাইলটার কী হয়েছে জানিনা, চার্জ হচ্ছে না কিছুতেই। অফ ই হয়ে গেল।
প্রীতি-দাদা, আর কোনও মোবাইল থেকে খবরটা তো অ্যাট লিস্ট পাঠাবি!!
প্রসূন- স্যরি রে, মাথায় ছিল না যে তোরা সবাই বাড়ি ফিরে আসবি আর আমার অপেক্ষা করবি। ভাবলাম একেবারে বাড়ি পৌঁছেই বলব সব। কীগো, খুব চিন্তা করছিলে?
প্রীতি-আহা! আবার বৌদিকে সোহাগ করে জিগ্যেস করা হচ্ছে!
জুঁই- আচ্ছা, ফ্রেস হয়ে নাও। আমরা সক্কলে তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। লাঞ্চ করব একসাথে।
পরিমল- জানিস, তোরা মা একটা কথা বলল, যন্ত্রই আসল যন্ত্রণা।
প্রসূন- ব্রিলিয়ান্ট!! মা, দারুণ বলেছ! কিন্তু একটা প্লাস পয়েন্টও আছে। এই যে হঠাৎ একটা ছুটি পেলাম সবাই, একসঙ্গে লাঞ্চ, বিকেলে সবাই মিলে বেড়াতে যাবো, মোবাইল বন্ধ তাই চাইলেও কেউ বিরক্ত করতে পারবে না… 
প্রিয়ম- আমরা আজ বেড়াতে যাব বাবা!! ইয়েয়েয়েয়েয়ে!!
প্রসূন- যাবোই তো! টিভি চলবে না, তাহলে মহিলারা সন্ধ্যে থেকে বাড়িতে বোর হবে, ওদের আর তো কাজ নেই…
পরমা- হ্যাঁ, মহিলাদের টিভি দেখা ছাড়া আর কোনো কাজ থাকে না, তাই না? দাঁড়া!
প্রিয়ম- বাবা পালাও, ঠাম্মা তোমায় ধরলে কিন্তু তোমার যন্ত্রণা!!
(সকলের হাসি!

সমাপ্ত

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।