• Uncategorized
  • 0

দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ৩১)

পর্ব – ৩১

৩০
ক্যাশবই আর স্টক রেজিস্টার নিয়ে মেলাতে বসল শ্যামলী। হেড মিস্ত্রী দিনের পর দিন আসছে না। গত সপ্তাহেও তার সংসার খরচ বাবদ কিছু টাকা পাঠিয়েছে সে। কিন্তু মিস্ত্রী অসুস্থতা কাটিয়ে উঠতে না পারলে মালিক পক্ষের তরফে কি করবে সে নিয়ে একটা ভাবনা খচ খচ করছে তার মনে। কাল পরশুর মধ্যেই মহাজনের কাছ থেকে মোটর পার্টস আনতে হবে ভেবে ক্যাশবুকে আরো গভীর ভাবে ডুব দিতে চাইল শ্যামলী । এমন সময় বাচ্চা মিস্ত্রীটা এসে বলল “ ছোড়দি, একটা লোক তোমার সঙ্গে দেখা করতে চায়।“
বলতে বলতেই অফিস ঘরে ঢুকে পড়লেন অরিন্দম । চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললেন “তোমার সাথে অনেকদিন দেখা হয় না। কথাও হয় না। তাই না বলে কয়েই চলে এলাম। বসতে না বললেও বসবো।“ মুখে জোর করে হাসি টেনে এনে শ্যামলী বললো, “ও মা, সে কি, বসতে বলবো না কেন? আর কারবার নিয়ে বড্ডো ব্যস্ত থাকি, তাই সময় পাই না। আপনার জন্যে চা বলি?”
“না শ্যামলী, তোমার নিজের হাতে বানানো চা ছাড়া তোমার সামনে আমি অন্য কোনো চা খাবো না।“
ম্লান হেসে শ্যামলী বললো “কিন্তু এখানে সে ব্যবস্থা কোথায়? এখানে তো সব দোকান থেকে কিনে আনা চা। ওতেই আজকের মতো চালিয়ে নিতে হবে।“
অরিন্দম বললেন, “শোনো শ্যামলী, আপ্যায়ন নিয়ে ব্যস্ত হোয়ো না, সে পরে হবে এখন, কিন্তু তুমি কি ভেবেছ বলো তো?”
শ্যামলী কিছু একটা আন্দাজ করে শক্ত হল। বললো “সংসারী লোকে তো নানা রকম জিনিস নিয়ে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী ভাবে। আমিও নিজের সাধ্য মতো ভেবে ভেবে আমার কাজটুকু করছি।“
চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে অরিন্দম বললেন, “শ্যামলী, আর কেউ হলে আমি এভাবে নাক গলাতাম না, কিন্তু তোমার ব্যাপার বলে বলতেই হচ্ছে, যা খুশি একটা কিছু করে ফেলা তোমায় শোভা পায় না।“
শ্যামলী মাথা নিচু করে বললো “অরিন্দম বাবু, দেখুন, আমার কাজটা আমাকেই নিজের বোধ বুদ্ধি মত করতে হয়। আমি যেটা ভাবছি বেশ ভেবে চিন্তে বুঝে শুনে করা, ঠিক সেটাই হয়তো আপনার শিশুসুলভ মনে হতে পারে, এমন কি অপরাধ বলেও মনে হতে পারে। তবু, শেষ অবধি মানুষ নিজের বিচারধারা মেনেই কাজ করে, পরের বিচারধারা দিয়ে কাজ করতে গেলে, সেটা আর কাজ থাকে না, হয়ে ওঠে হুকুম তামিল। নিজের কাজ নিজে যে করে তার ভুল হলেও, এমন কি সেই ভুলের মাশুল দিতে হলেও একটা সান্ত্বনা থাকে যে, এ আমি নিজের বিবেচনায় করেছি। অন্য লোকে আমায় নিয়ে পুতুল খেলে নি।“
“তাহলে শ্যামলী, আজ তুমি যেটা করেছ, সেটা বেশ ভেবে চিন্তে বুঝে শুনে একেবার নিজের বিচারধারা মেনেই করেছ, তাই না?” কথা কটা বলে অরিন্দম সোজা হয়ে বসেন।
তাঁর চোখের দিকে সরাসরি তাকিয়ে শ্যামলী জবাব দেয় “হ্যাঁ, আমি তো আমার কথাটা আপনাকে বলেছি। যেটুকু করি, আমার বোধ বুদ্ধি অনুযায়ী করি। আর তার দায়িত্ব নেবার মানসিক প্রস্তুতি আমার আছে।“
“তুমি আমাকে এভাবে বলতে পারলে শ্যামলী? তোমার কিসে ভাল হয়, সেটা ছাড়া আমি অন্য কিছু ভাবি না, সেটা তুমি বুঝতে পারো না? তোমার বিপদের দিনে আমরাই তো তোমার পাশে দাড়িয়েছিলাম, আবার বিপদ দেখা দিলে আমরা তো পালাতে পারবো না। তাহলে তুমিই বা আমাদের সাথে আলাপ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে না কেন?”
শ্যামলী চুপ করে রইল। বললো “চলুন, আপনাকে আমাদের বাড়ি নিয়ে যাই। এখানে কারখানার পরিবেশে মজুরেরা শুনে কি না কি ভাববে।“
“দ্যাখো শ্যামলী, একটা খবর শুনে উদ্বিগ্ন হয়ে ছুটে চলে এসেছি, জবাব দেবে কি না দেবে, সে তোমার ইচ্ছে, এখন আর কোথাও যাব না।“
“চলুন। আপনাকে আমি নিজের হাতে তৈরি চা খাওয়াবো।চলুন তো !” বলে এক রকম জোর করেই অরিন্দমকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো শ্যামলী। অরিন্দমের গাড়িতে উঠে পড়ে ড্রাইভারকে হুকুম দিল নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।