দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ৫৯)
by
·
Published
· Updated
পর্ব – ৫৯
১৫৮
শ্যামলীকে জড়িয়ে ধরে আদর করে অনসূয়া তাকে নিয়ে চললেন উপরে। সিঁড়ির মাথায় দাঁড়িয়ে ছিল তাঁর কাজের লোক।
ও দিদি, তোমার অপদেবতাকে ধরে এনেছি দ্যাখো।
চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে থাকে কাজের মেয়ে।
অনসূয়া বলেন, দিদি, দ্যাখো এ হল শ্যামলী। ওরা কিন্তু খুব বড়লোক। এইটুকু মেয়ে একটা কারখানার মালিক।
মুখ বাঁকায় বয়স্কা কাজের মেয়ে। ভিতর থেকে আদৌ বিশ্বাস করতে চায় না অনসূয়ার কথাটা।
আর জানো তো, লেখাপড়ায় খুব ভাল।
কাজের মেয়ের মুখ দেখে বোঝা গেল, একটা কথাও সে বিশ্বাস করে নি।
অনসূয়া শ্যামলীকে বসালেন। বললেন, জানিস, তুই এসেছিস, আমার খুব ভাল লাগছে। আজ আমার তোকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছিল।
আপনার কাছে একটা দরকারে এসেছি দিদি। শ্যামলী বলল।
আচ্ছা, সে বলবি এখন। আগে বল্ তো, কোথা থেকে আসছিস? বাড়ির সবাই ভাল আছেন তো?
অনসূয়ার প্রশ্নের উত্তরে শ্যামলী সম্মতিসূচক মাথা নেড়ে বলে, কলেজ থেকে আসছি।
আহা রে, ওইজন্যে মুখটা তোর শুকিয়ে গিয়েছে। ও দিদি, ঘরে মিষ্টি আছে, এখানে আনো তো। যা শ্যামলী, ওখানে বেসিন আছে, মুখে চোখে জল দিয়ে আয়।
শ্যামলী মুখে চোখে জল দিচ্ছে, এমন সময় শুনতে পেল অনসূয়া কাজের মহিলাকে বকাবকি করছেন।
শ্যামলী মুখ চোখ ধুয়ে আয়নার মধ্যে দেখতে পেল তার ঠিক পিছনে ধবধবে শাদা তোয়ালে নিয়ে অনসূয়া দাঁড়িয়ে আছেন।
শ্যামলী বসলে তিনি নিজের হাতে মিষ্টির প্লেট নিয়ে এসে দাঁড়ালেন। নামী দোকানের থেকে আনানো বেশ অনেকগুলি মিষ্টি।
মিষ্টিগুলোর সাইজ ও সংখ্যা দেখে শ্যামলী অবাক হয়ে বলল, এতগুলো মিষ্টি আমি খাব কি করে?
খা তুই। আজ সকালেই দোকান থেকে পছন্দ করে আনিয়েছি।
আপনাদের এই বাড়িতে কে কে থাকেন দিদি?
কেউ তো আর নেই। এই দিদি আমাদের সংসারের সঅব দেখাশুনা করেন। আর রান্না করে একজন। বাজার হাট করা আর বাইরের কাজ সামলাতে দুজন আছে। আর ড্রাইভার। আর বাগান দেখাশোনার একজন লোক আছে।
দিদি, বাইরের নেমপ্লেটে যাঁদের নাম দেখলাম?
অনসূয়া হেসে উঠে দেখালেন, ওই যে, ওঁরা ছবিতে। বাবা, জ্যাঠামশায় দুজন। কাকামণিও আর নেই। কাকিমা জ্যেঠিমারা সব দাদাদের কাছে। বয়সের ভারে ক্লান্ত।
দাদারা কোথায় থাকেন?
নিজের মায়ের পেটের ভাইবোন তো আমার নেই। এক দাদা দিল্লি হাইকোর্টের জজ সাহেব। আরেক দাদা বম্বেতে সিনিয়র লইয়ার। আমাদের বাড়ির লোকজন বেশিরভাগ আইনের পেশায় সারা ভারতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
এত বড় বাড়িতে আপনি একা থাকেন?
কি বোকা মেয়ে রে তুই? একা থাকা যায়? এই দিদিরা সবাই আছে। ওই দ্যাখ, গ্র্যাণ্ড ফাদার ক্লক। আমার দাদুর বাবার আমলের। বুড়ো হাড়ে এখনো ভেলকি দেখাচ্ছে। চ, আমাদের লাইব্রেরিতে চ।
সাজানো লাইব্রেরিতে বাঁধানো বইয়ের বহর দেখে শ্যামলী হতবাক। এই এত বই আপনি পড়েন?
তা এক একটা এক এক সময় নাড়াচাড়া করি বই কি!
এত মোটা মোটা বইয়ের কোথায় কি আছে মনে রাখেন কি করে?
অনসূয়া তার কথার উত্তর না দিয়ে বললেন, অক্সফোর্ড ডিকশনারি আছে তোর?
শ্যামলী বলল, আছে। মাধ্যমিক পরীক্ষায় জেলার মধ্যে খুব ভালো ফল করায় স্কুল থেকে দিয়েছিল।
কত মোটা বইটা ? অনসূয়া জানতে চাইলেন।
শ্যামলী তার হাতের তালুদুটি ইঞ্চি চারেক তফাতে রেখে বইয়ের চেহারা বোঝায়।
পড়িস ওটা?
শ্যামলী হেসে ফেলে বলে ডিকশনারির পিছনে অ্যাপেনডিকস থাকে। সেটা আমি গল্পের মতো করে পড়তে ভালবাসি। আগে আমার এ টি দেবের ডিকশনারি ছিল।
তার চিবুকে আঙুল ছুঁইয়ে একটু আদর করে দেন অনসূয়া। তারপর বলেন, তোর কাছে যেটা আছে, সেটা অ্যাডভান্সড লারনারস। আর এই দ্যাখ, এই হল আসল অক্সফোর্ড ডিকশনারি।
অনসূয়া বললেন, ডিকশনারি ঘাঁটাঘাঁটি করিস যখন, তুই ভাল ভাবেই জানিস, কি করে একটা শব্দের অর্থ খুঁজে বের করতে হয়।
শ্যামলী বলল, হ্যাঁ, অ্যালফাবেটিক্যালি সাজানো থাকে।
অনসূয়া বললেন, সে তো প্রথম কথা। তারপর শব্দের নাড়ী নক্ষত্র বোঝার জন্য নানা কায়দা কেতা আছে। তেমনই আইনের বই পড়ার কায়দা কেতা আছে। ওটা শিখে নিলে, সব সহজেই পাওয়া যায়।