সাপ্তাহিক প্রকল্পশ্রীরিয়্যাল ধারাবাহিকে প্রকল্প ভট্টাচার্য (পর্ব – ৫ ।। দ্বিতীয় ভাগ)
by
·
Published
· Updated
নাম: পরিমলবাবুর পরিবারকথা
পর্ব ৫: কাজের মানুষ
(আগে যা ঘটেছেঃ পরিমলবাবুদের পুরনো কাজের লোক কাজ ছেড়ে দিচ্ছেন, তাই বদলি লোকের সন্ধান চলছে। প্রমীলা পাশের ফ্ল্যাটে কাজ করেন, তিনি আজ এসে কথাবার্তা বলবেন বলেছেন।) পরমা– নাও নাও, ব্রেকফাস্ট হলো সকলের? চটপট উঠে পড়ো, ঘরদোর পরিষ্কার করতে হবে। প্রসূন– কেন মা? প্রীতিকে কেউ দেখতে আসছেন নাকি! প্রীতি– ও কাম অন দাদা! ব্যাড জোক। পরমা– দেখতেই আসছেন, তবে সকলকেই। আর এই দেখাটা কোনো মজার ব্যপার নয়, খুব জরুরী। পরিমল– ওহো, সেই তোমার প্রমীলাবাহিনী আসছেন বুঝি? পরমা– তুমি ঐ বসে বসে মস্করাই করো, আর আমরা খেটে মরি! প্রসূন– মা, এত টেনশন কেন করছ! প্রিয়ম– ঠাম্মা, চাপ নিও না! জুঁই– এই, তুই আবার বড়দের কথার মধ্যে কথা বলছিস কেন রে? প্রীতি– আহা বৌদি ওকে বকছ কেন! ও তো ঐ টিভির অ্যাডটার নকল করছে! জুঁই– তা ভালো কিছুর নকল করেনা কেন, বলতে পারো? দিনরাত শুধু টিভি আর আইপ্যাড নিয়ে পড়ে থাকে! একটা যদি কাজের কাজ করত! প্রসূন– আরে, তোমার আসল কাজের মানুষ তো আসছে! ঐ যে বেল বাজল। (প্রমীলার প্রবেশ) প্রমীলা– দিদি আসব? পরমা– হ্যাঁ হ্যাঁ এসো। তোমার অপেক্ষাই করছিলাম আমরা। প্রমীলা– নমস্কার সবাইকে। প্রীতি– উরিব্বাস, আপনি হেব্বি মডার্ণ মহিলা তো! প্রমীলা– তা দিদি, আপনাদের সঙ্গে থাকতে থাকতে মডার্ণ হয়ে গেছি! পরমা– আচ্ছা, শোনো। আমরা বাড়িতে এই ক’জন থাকি। ইনি আমার স্বামী, এ আমার ছেলে প্রসূন… প্রমীলা– আমি আপনাদের সবাইকে চিনি, আপনাদের সম্পর্কে সব জানিও। প্রসূন– এই সর্বনাশ! কী করে জানলেন! প্রমীলা– কেন, সন্ধ্যাদির কাছ থেকে! ও তো আমাদের পেসিডেন, আমি সেকেটারি! প্রীতি– পেসিডেন মানে! প্রেসিডেন্ট! কিসের!! প্রমীলা– দিদি, আমাদের তো ইউনিয়ন আছে গো! পরমা– তা বেশ। তাহলে কী কী কাজকর্ম করতে হবে, তাও নিশ্চয়ই জানো! প্রমীলা– হ্যাঁ, জানি। কিন্তু আমার কিছু শর্ত আছে। প্রীতি– মানে! কাজ তো তুমি করবে আমাদের বাড়ি, তাহলে শর্ত তো আমাদের হওয়া উচিৎ! পরমা– আহা, আগে শুনিই না কী কী শর্ত! প্রমীলা– আমি দুধ চিনি দিয়ে চা খাই, ঐ সব গ্রী্নটি মিন্টি আমার পোষাবে না। পরিমল– হাঃ হাঃ হাঃ, এইটে ভালো বলেছ! আমারও, জানো তো, ঐ গ্রীণ টি একদম সহ্য হয়না। পরমা– উফ, একটু চুপ করো তো! আচ্ছা, তারপর? প্রমীলা– আমি ওবাড়ি কাজ সেরে এবাড়ি আসব। তাই দেরী হচ্ছে কেন বলে ফোন করবেন না। আমার সময়ে আসব আমি। জুঁই– কিন্তু তাহলে রাতের বাসনগুলো মাজা… প্রমীলা– সকালে যেটুকু না হলেই নয়, আপনারা মেজে নেবেন নাহয়, বাকিটা আমি এসে মাজব। প্রীতি– আমরা মেজে নেব! প্রমীলা– দেখুন, আমিও যে রোজ আসব তা তো নয়। যেদিন আসব না, আপনাদেরই তো সামলে নিতে হবে! জুঁই– রোজ আসবেন না মানে! প্রমীলা– মানে আমার রবিবার ছুটি। ফ্যামিলি ডে! প্রসূন– অসাম! আর আমরা, মানে আইটি কুলিরা ফ্যামিলি কাকে বলে ভুলতে বসেছি! প্রীতি– দাদা, এঁর কাছে শেখ! তুই যদি এরকম কণ্ডিশন করে তারপর চাকরি জয়েন করতিস… পরমা– আচ্ছা, সেটা ভেবে বলছি। আর কিছু? প্রমীলা– আর আমি প্রতিদিন দুটো সিরিয়াল দেখি। শ্রীময়ী আর নকসী কাঁথা। ও দুটোর সময়ে আমাকে ব্রেক দিতে হবে আর টিভি চালিয়ে দিতে হবে। পরিমল– নেতাজী দেখো না? রানী রাসমনী? প্রমীলা– রাস্মনী দেখি বাড়ি ফিরে, আর দেখি দিদি নামবার ওয়ান। একবার তো গেস্লুম ওদের ওখানে, ফাস্ট পেরাইজ পাইনি যদিও। দেখেন নি বুঝি? প্রিয়ম– ওয়াও! আন্টি তুমি টিভি আর্টিস্ট!! প্রমীলা– হ্যাঁ বাবা, তবে আমাকে ওইসব আংটি মাংটি বোলো না, দিদি বোলো। পরমা– ব্যস এই তো? প্রমীলা– আসলটাই তো বলিনি! পয়লা বৈশাখে আমাকে একটা শাড়ী দিতে হবে। ওইসব শস্তা প্রিন্ট শাড়ী নয়, তাঁতের শাড়ী। আমি পরবো সেটা। আর পুজোর আগে একমাসের বোনাস দেবেন। ব্যস। পরমা– এতসব একটু বেশীই হয়ে যাচ্ছে আমাদের পক্ষে। আমরা ভেবেচিন্তে কাল জানাবো, ঠিক আছে? প্রমীলা– আচ্ছা মা। তবে কালই জানাবেন। সেইমতো আমি শিডুল করব। প্রীতি– কী ডুল? প্রমীলা– শিডুল গো, শিডুল। মানে আমার রূটিন! আচ্ছা, তাহলে চলি। (প্রস্থান) প্রসূন– উফফ, প্রমীলাবাহিনীই বটে! যেন ঝড় বয়ে গেল! পরিমল– তবে আমার ভালই লাগল। স্পষ্ট কথাবার্তা। পরমা– কথাবার্তার জন্যেই তো চিন্তা! এত খরখরে, সামলাতে পারব তো! প্রীতি– কাম অন মা, দিনকাল বদলাচ্ছে। এখন নারীমুক্তি নিয়ে এত চিন্তাভাবনা হছে, শোনোনি! পরমা– কেন শুনব না! তবে যা বুঝছি, নারী বলতে শুধু তোরাই। আমাদের আর মুক্তি হল না। জুঁই– কেন মা এমন বলছেন! পরমা– তা কী আর বলি বলো! হেঁশেল ঠেলে গোটা জীবন গেল, এখন কাজের মানুষ এসে শর্ত দিচ্ছেন তিনি যখন খুশী আসবেন, কাজ আমাদেরই করে নিতে হবে। তা মুক্তিটা ঠিক কোথায় বলতে পারো? পরিমল– আহা, আগেই তো বললাম… পরমা– থামো তো! তোমার ঐ ডিস ওয়াশার, তো? পরিমল– আরে না না, বলছিলাম যে আমরা সবাই হাত লাগিয়ে ওটুকু কাজ করে নেব, তারপর ইনি এলেই… পরমা– বাঃ! মানে আমরা সব কাজ সেরে রাখব রোজ, আর মহারাণী এসে তত্ত্বাবধান করবার জন্য মাসে মাসে টাকা নেবেন! প্রিয়ম– ঠাম্মা, মহারাণী কে গো? দিদি? পরিমল– না দাদু, এই বাড়ির মহারাণী একজনই ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। তোমার ঠাম্মা। পরমা– যাও, আর রঙ্গ করতে হবে না! প্রীতি– মা, কিন্তু আর কোন উপায়ও তো নেই, লেটস কনফার্ম হার। জুঁই– ঠিক মা, একজনকে তো দরকার আমাদের। প্রসূন– তাহলে আগামীকাল থেকে আমাদের পরিবারে আর একজন সদস্য বাড়ছে আর কি! জুঁই– সদস্য নয়, সদস্যা। পরিমল– তাও যে সে নন, একেবারে সেক্রেটারি! পরমা– তারমানে সকলে রাজী? বেশ, তাহলে আমার আর কী! জানিয়ে দিই গে।
(কিছুদিন পর) পরমা– তা প্রমীলা, তোমার কাজকর্ম তো ভালোই, কিন্তু বড্ড তাড়াহুড়ো করে কাজ করো। এটা আমার পছন্দ নয়। প্রমীলা– কী করব মা, আরো তিনবাড়ি কাজ করতে হয় আমাকে! জুঁই– আরো তিন বাড়ি! মানে, পাঁচটা বাড়িতে কাজ করো তুমি প্রতিদিন! প্রমীলা– হ্যাঁ দিদি, ওইজন্যেই তো রবিবার ছুটি নিই। বাড়িতে কত্তা, দুটো ছেলে, ওদেরকে দেখতেই পাইনা সারা সপ্তা… প্রীতি– তুমি বাড়ি ফেরো কখন? প্রমীলা– তা রাত আটটা বেজেই যায়। আবার সকালে ছটায় বেরোই কাজে। প্রীতি– কিন্তু তাহলে তোমার বাড়ির কাজকম্ম? ছেলেদের ইস্কুল? প্রমীলা– (হেসে), ওইজন্যেই তো সন্ধ্যাদিকে রাখা! আমি পাঁচবাড়ি কাজ করলে আমার বাড়ির কাজ কে করবে, সন্ধ্যাদি ছাড়া! আর সেই কাজ সামলাবার জন্যেই তো তোমাদের কাজ ছেড়ে দিল সন্ধ্যাদি, বলেনি বুঝি? প্রীতি– বোঝো!!