কবিতায় তাপসকিরণ রায়
প্রেম ভ্রম হয়ে উড়ে যাচ্ছে
ভালোবাসা হতে না হতে কামনার ফুল ফুট ছিল–
তোমারও প্রসাধনী ঠোট গলে চা-পেয়ালার উষ্ণতা ভরছিল।…
চুমুক দিতে গিয়ে মনে হল শুরুর চুমুটা দেওয়া বাকী রয়ে গেছে
আলতো স্পর্শ ছোঁয়ায় কি কামগন্ধ থাকে ?
সেখানে কামিনী গন্ধ ছিল, রাতের নেশা ছিল,
প্রেম জন্মাতে জন্মাতে আমি তোমার নিষিদ্ধ এলাকায়,
অন্ধকারে কল্পনা বড় হয়ে ওঠে, জলজ্যান্ত তুমি তো আছো
অথচ তোমার ছবি সাজাতে হচ্ছে–
আমার স্পর্শগুলি ক্রমশ তোমায় জাগিয়ে তুলছে।
এবং একটি প্রেম ভ্রম হয়ে ধোঁয়ার মত উড়ে যাচ্ছে।
আমি উঠে এলাম, তোমার ওপর নিচ. জিহ্বা, মুখমণ্ডল,
নাভিমূল ক্রমশ বন্ধুর-ভূমি–ছুঁয়ে ছুঁয়ে একান্ত এলাকায়।
ধর্ষণের সংজ্ঞাগুলি খুলতে খুলতে ব্যাস এক জায়গায় এসে থেমকে দাঁড়ালো–
দেহ সিদ্ধিতে কি প্রেম লোপাট হয়ে যায়?
তবু সে পবিত্র নদী
পাঁক আসলে মনের গভীরে
প্রতিটা জন্মের আগে উত্তেজিত মুহূর্তে
চাই প্রপ্ৰপাত।
তারপর সে বীজ ফুঁড়ে ওঠে
সবুজ লমলমে চেহারায় একটি শিশু।
সে জঠর ভেঙে যোনিপথ বেয়ে
বিস্ফোরিত হয় এবং মা, বলে ডেকে উঠে।
তাই বলি, সঙ্গমের অন্তঃস্থলে
সহস্র কামনা-বাসনা রয়ে গেছে–
তবু সে পবিত্র নদী
গঙ্গা নর্মদা সেখানেই বয়ে চলে….
স্বপ্ন
স্বপ্নগুলি মুছে গেলে
জানবে, তুমি থেকেও নেই।
একটা সময় আসে যখন
স্বপ্নগুলি শ্বেত-শ্যাম হয়ে যায়,
তুমি তাতে কিন্তু
রং লাগাতে ভুলে যেওনা, বন্ধু !
প্রতিবিম্ব
তোমার প্রতিবিম্বে ভালবাসা ধরে রাখা আছে–়
যেখানে বিরহ আছে, জেনো, ভালবাসাও আছে।
নতুবা উড়ন ছু–ভালবাসা উড়ে যেতো আকাশে-বাতাসে।
পরিয়ারী পাখিদের মেলা আবার উঠে আসবে–
আবার রঙ সাগরের গোধূলি এসে তোমাতেই মিশে যাবে !
হাজার সহস্র টুকরোগুলো আবার এসে মিলে যাবে,
আবার তুমি উঠে আসবে, তেমনি ভাবে তুমি উঠে আসবে।
সংক্রামিত দুঃখগুলি
দুঃখ গুলি বড় ছোঁয়াচে ভরা–
অনায়াসে তা সংক্রমিত হয়ে যায়–
কি দুঃখে তুমি নির্বাক বল ?
বিরহ তবু সয় সখী,
প্রেমের ব্যর্থতায় বুঝি তুমি বাকহীন !
সুখগুলি দেখো ক্রমশ দুঃখস্রোতে মিশে যাচ্ছে।
দুঃখ থেকে শোকতাপ, ত্রাস-সন্ত্রাস,
অঢেল দুঃখে বুঝি তুমি নির্বাক হয়ে গেলে।
নির্বাক অন্ধকার
আকাশটা তোমার কাছে কত অচেনা দেখো !
রাতের আকাশ তুমি যেন কখনো দেখনি–
আজ দেখো বেলা শেষের অবসরে
তোমার মাথার উপর একটা অবাক আকাশ !
তুমি সকালের মিষ্টি রোদ কখনো মেখেছো কি গায়ে ?
সবুজের বড় কাছাকাছি যে আত্মীয়তা বেঁধেছে তোমাতে
তা থেকে কতকাল ছিল তোমার অজ্ঞাত বাস ?
পড়ন্ত বেলার হলুদ রোদের খাম খুলে শুধু তোমায় পেয়েছিলাম।
আনন্দমুখর দিনগুলি কত তাড়াতাড়ি দেখো সময় পেরিয়ে যায়,
তোমার এক ঢাল চুলের মাঝে কালো মেঘ কতবার ডাক দিয়ে গেছে–
আর রিমঝিম বর্ষা এসেছে, ভিজে ছিলাম আমরা দুজন।
আজ স্মৃতিরা কুয়াশা–শ্রাবণ ডেকেছে আকাশে
ঝড়ের দাপটে নদী ফুঁসে ওঠে–
প্লাবনে ভেসে যাওয়ার একটাও কবিতা লেখা হল না যে আর !
এখন তুমি স্মৃতি, কাল্পনিক ছবির ভাঙা-গড়া চলে মনে,
দূরে যেতে যেতে ক্রমশ ভেঙে যাচ্ছো তুমি,
মাটির প্রলেপ থেকে উঠে আসছে শুধু কাঠামো–
স্মৃতি সতত সুখের হতে পারে না জানি–
দুঃখকে প্রবল বেগে ভেঙে দিতে গিয়ে দেখি
সেখানে অন্ধকার, এক নির্বাক অন্ধকার।