• Uncategorized
  • 0

গল্পে তপোব্রত মুখোপাধ্যায়

ছোট্ট বটে

ছোট্ট বলে ঝাড়তে পারো বটে, কামড় খেলে যে ঊর্ধ্বতন চতুর্দশ-পুরুষ মনে পড়ে যায় সেকথা তো মানবে? হ্যাঁ। মানতেই হবে। আজ ছোট তো কি, কোনদিন কি তাদেরও দিন ছিল না ভেবেছ? ছিল ছিল, সব ছিল। এই তোমাদের জায়গা দেবে বলেই না এতো ত্যাগ। বুঝছ না? ও, আগে বলবে তো। খুলেই বলি তবে।
আচ্ছা, এই যে পৃথিবীটা সেই কবে থেকে চলছে, তুমি কি ভাবছ সেসব এমনি এমনি? ভুল জানো। বিজ্ঞান তো অনেক কিছু বলে, কিন্তু এখনও তো এই বলে উঠতে পারল না যে ডিম আগে না মুরগি। তবে? এই বিজ্ঞানের কাছে জিজ্ঞেস করলে পস্তাবে। আসল কথা হল, সেই যখন পৃথিবী এমনি এমনি নেমে এলো সুজ্যি থেকে, তারপর একটু একটু করে ঠাণ্ডা হল, তখন তো কিচ্ছু ছিল না চারদিকে, তখন কেউ কেউ সেইখানে এসেছিল। কারা এসেছিল সেসব পরে জানবে। এইবার, তারা এসে এদিক ওদিক ঘুরে, টিপেটুপে দেখে বেশ কিছু জায়গা-জমি পছন্দ করে ফেলল। সেইখানে তারপর তারা বাড়ি বানাল, গুষ্টিবংশ নিয়ে সংসার বসাল সুখে।
কিন্তু পৃথিবী তো তখন বাচ্চা। সে তো সোজা হয়ে চলতে পারে না। টলমল করে ঘোরে আর নড়েচড়ে পড়ে যায়। তাকে সামলাবে কে? তো, সেই তারা ঠিক করল, আহা, এইটুকু একজন, হোক না সে গ্রহ, বাচ্চা বলে তো কথা। আবার তারা যখন তার উপর থাকছে এসে, তখন তাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে তো না কি? তাই কেউ কেউ করল কি, হেঁটে হেঁটে সেই কোন তলায় নেমে গেল পৃথিবীর। হাত ধরে ধরে হাঁটা শেখাল, ঘোরা শেখাল। তাদের ছিল দুটো হাত আর দু-জোড়া পা। ব্যস। ঐ ধরে ধরে প্রথম চলতে শিখল পৃথিবী। মাঝে মাঝে যখন বেশ শরীর খারাপ হত, মানে ধর তোমাদের এই শীতকালের সর্দির মতন, জল পড়ছে তো পড়ছেই – আসলে, পৃথিবীও ছোট কিনা, তখন ধর বৃষ্টিতে ভিজল, সেইসব সময় তারাই বেশ করে পিঠে নিয়ে পৃথিবীকে পাকের পর পাক ঘুরিয়ে চলত।
তারপর হল কি, একদিন খুব করে বেশ হাওয়া-টাওয়া দিল, হাওয়া-রা তখন নতুন এসেছে আর কি… তো, সেইসব হাওয়া এসে খুব করে জমিয়ে বসে-টসে কিছু প্রস্তাব রাখল। বলল যে, এইবার বেশ কিছু খুচখাচ বাগান সাজালে কেমন হয়? এতদিনের বাসিন্দাদের বেশ মনে ধরল কথাখান। তারা গোল গোল মুণ্ডু আর দাঁড়া নেড়ে বলল “বেশ হয়, বেশ হয়”।
কিন্তু কথা হল, রাখবে কোথায়? এই যে এত্তোবড় দাঁড়াওলা-মুণ্ডুদের কারবার, এর মাঝে সেই বাগান-টাগান থেবড়ে পিষ্টে গেলে? হুম, চিন্তার বিষয়। সব মুণ্ডু তখন জমা হয়ে বসল বিশেষ মিটিং-এ। পৃথিবী, দাঁড়ামুণ্ডু আর হাওয়ার মিটিং শেষে ঠিক হল, দাঁড়ামুণ্ডু নিজেদের আকার ছোট্ট ছোট্ট করে দেবে। তারা ঢুকে যাবে সেইখানে যেখানে পৃথিবীর মেশিন-পত্তর চলছে। সেখানে কত কাজ, মেশিনে তেল দাও রে, এদিক-ওদিক করে সব ঠিকঠাক রাখো রে, আরও কত কি। কাজের কি শেষ আছে? তো তারা ওইসব দেখবে, আর উপরের ভাগে থাকবে ঐ আগান বাগান সব। মাঝে মাঝে চাইলে তারাও সেসব বাগান দেখতে আসবে বটে।
তারপর সেসব দাঁড়ামুণ্ডু একএক করে ঢুকে গেল পৃথিবীর পেটে। পৃথিবীও বেশ খুশি খুশি হয়ে গেল। সেই থেকে ঐ দাঁড়ামুণ্ডুওলারা ওখানেই আছে। কত কাজ তাদের। এখন মাঝে মাঝে আসে উপরে। সেই যে প্রথম প্রথম পৃথিবীর হাত ধরে ঘুরতে শেখাতো, সে অভ্যেস এখনো যায়নি। এখনও নতুন নতুন ছোটরা এলে বড়রা তাদের সেসব শেখায়। কি জানি, বলা যায় না আবার কোনদিন দরকার পড়ে। এখন তাই তাদের দেখতে পাবে এই কখনও মাটির ঢ্যালা, কখনও অন্য কিছু পিঠে নিয়ে চলেছে। এখন অবশ্য তাদের এই এত্তোটুকু দেখতে। কিন্তু ঐ দাঁড়ায় একবার চেপে ধরলে……
এ কি! হাসছ এখনও। বললাম না হাসবে না! বিশ্বাস না হলে ডেকে ডেকে জিজ্ঞেস করে দেখ সমস্ত পিঁপড়ে কে, দেখি কেমন এসে বলে যায় গোটাখানাই মিথ্যে?
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।