• Uncategorized
  • 0

স্মরণে শক্তি চট্টোপাধ্যায়

শক্তি চট্টোপাধ্যায়                 

জন্ম – ১৯৩৩ সালের ২৫ নভেম্বর
মৃত্যু – ১৯৯৫ সালের ২৩ মার্চ

“অবিনশ্বর থাকবে কেবল পা দুখানি “

লিখেছেন – অমিতাভ দাস 

‘ যেতে পারি কিন্তু কেন যাবো ‘ বলেও চলে গিয়েছিলেন তিনি। আসলে সকলকেই চলে যেতে হয় । চলে যেতে হবে– এই যে প্রকৃতির নিয়ম । আজ কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিন ।
কিছু আগে নির্দেশ এলো কবির সম্পর্কে কিছু লেখার । ভজন দত্ত ভালোবাসার মানুষ । তাঁর নির্দেশ উপেক্ষা করি কীভাবে ? তবে লিখতে গিয়ে বারবার ভেবেছি আমি কী পারবো, তাঁর সম্পর্কে দু’চারটি কথা লিখতে । দেখা যাক ।
যেহেতু ছোটবেলায় আবৃত্তি শিখতাম,শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাই পরিচয় হয়েই গিয়েছিলো বলা যায়।
তিনি আমার অন্যতম প্রিয় কবি ছিলেন, আছেন, থাকবেন । শক্তি চট্টোপাধ্যায় নামটি উচ্চারিত হলেই মনে পড়ে তাঁর কবিতা । না , আমি তাঁকে দেখিনি সামনা-সামনি কখনো । আজো তাঁর কবিতা পড়ি প্রবল মনখারাপের দিনে। ভেতরে ভেতরে কেমন যেন আনন্দ হয় ; আবার কেমন যেন কষ্টও হয় । বুঝতে পারি , এখন বুঝতে পারি, বিজয়া দশমী কেন এত শারীরিক ? কে বা কারা যেন দুঃখের পিঁড়ি পেতে রেখে গেছে উঠানের কোণে। সেখানে ছায়া আছে , মায়াও আছে হয়ত । অথচ সে পিঁড়িতে এসে যাঁর বসবার কথা ছিল সে এসে বসেনি কখনো । এইটেই নিয়তি । এই যে যন্ত্রণা , এই যে বিরহের তুমুল বাতাস ছড়িয়ে পড়ল —- হু হু চরাচর কাঁপানো বিষাদ…আমি তাঁকে অনুভব কবি । যন্ত্রণাগুলো ছোঁয়ার চেষ্টা করি । ” মানুষ বড় কাঁদছে”– বুঝতে পারি কেবল আমি নই , কেবল কবি নন , আরো অনেক মানুষ বড়ো কাঁদছে । তাঁদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে হবে । তাঁদের চোখের জল কে মোছাবে ? আবার মানুষ-ই ফাঁদ পাতছে— সন্দেহ , ঈর্ষা, দ্বেষ , লোভ । আমরা ভালো নেই , ভালো নেই । কীভাবে ভালো থাকতে পারি,তা মরমী কবিই আমাদের দেখিয়েছেন । কবি শক্তির কবিতায় মানসিক আশ্রয় পাই , যেমন আশ্রয় পাই রবীন্দ্রনাথের গানের ভিতর । উল্লেখ্য যে , আমি যেবার মাধ্যমিক দিই সেবার কিছু টাকা সরিয়ে তিনটে বই কিনেছিলাম । দুটো জীবনানন্দের , একটি শক্তি চাটুজ্যের ” কোথাকার তরবারি কোথায় রেখেছে “। দাম ছিল মাত্র আট টাকা । সেই প্রথম আমার শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার বই পড়া । তারপর থেকেই তাঁর কবিতার মায়া-অঞ্জন চোখে বুলিয়ে দিয়েছেন তিনি । তখন পড়ে চমকে উঠেছিলাম ” আসলে কেউ বড় হয় না , বড়র মতো দেখায় । সত্যিই তো গাছের কাছে গিয়ে দাঁড়ালে বোঝা যায় ” দেখবে কতো ছোট ” । আমি তখন সবে মাত্র লেখা শুরু করেছি , এমন সব পংক্তি মাথার ভিতর থেকে গিয়েছিল । আজো এত বছর পর লেগে আছে অমলিন স্মৃতির পাতায় । তিনি সহজ করে বলতেন ভালোবাসার কথা । আলো-আশার কথা । সমুদ্র-ভ্রমণে গিয়ে মনে পড়েছে ” সমুদ্রের কাছে এসে বসে আছো বিড়ালের মতো ” । তাঁর সমূহ উচ্চারণ আমোঘ । অভিযোগ তিনি অনেক কবিতা লিখেছেন । না লিখলেও চলত এত বা মাত্র চারটি বই লিখলেই হ’ত । আমার সে’সব মনে হয় না । আমি তাঁর কবিতা পড়ে আনন্দ পাই— আশ্রয় পাই । যে ভালোবাসা হারিয়ে গিয়েছে তাও খুঁজে পাই । তিনিই বলেছেন ” মনে রেখো , ভালোবাসা বাঁচায় ও মারে ” । আমরা যাঁরা ভালোবাসা খুঁজি নিরন্তর , আমরা এই বেঁচে থাকা আর এই মরে যাওয়া দু’টোই নিরন্তর অনুভব করি । তাই হয়ত কবি শক্তির মতো বলতে ইচ্ছে করে — “ভালোবাসা পেলে সব লন্ডভন্ড করে চলে যাবো “। অথচ , কী আশ্চর্য — বলতে পারছি কই ? মনে হয় ভুল সময়ে এসে পড়েছি । এই ভুলজন্ম এই বেদনার ভিতর দাঁড়িয়ে চিৎকার করে তাঁর ‘জরাসন্ধ ‘ কবিতার মতোই বলতে ইচ্ছে করে ” আমাকে তুই আনলি কেন , ফিরিয়ে নে ।” আবার মনে হয় ” কোমল বাতাস এলে ভাবি , কাছেই সমুদ্র ” । এই তো নশ্বর জীবন । আনন্দ-বেদনার বেলাভূমি । এই তো অনুভব । এই তো ” অবসর এখানে মাঠ অবসর এখানে গাছপালা ।”
তাঁর’ চাবি ‘কবিতাটি আমার বড় প্রিয় । তা থেকে দু’চার পংক্তি লিখে শেষ করবো আজ আমার এই শ্রদ্ধা নিবেদন :

” চাবি তোমার পরম যত্নে কাছে
রেখেছিলম , আজই সময় হলো—
লিখিও , উহা ফিরৎ চাহো কিনা ?

অবান্তর স্মৃতির ভিতর আছে
তোমার মুখ অশ্রু-ঝলোমলো
লিখিও , উহা ফিরৎ চাহো কিনা ?”
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।