সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে সিদ্ধার্থ সিংহ (পর্ব – ৩৪)

 

সেটা বুঝতে পারি না। বুঝতে চাইও না। কিন্তু কথা হচ্ছে, যেখানে নতুন খাতা হয়েছে তিন মাসও হয়নি, বলতে গেলে প্রায় নতুনই রয়েছে, সেখানে ফালতু ফালতু এতগুলো পয়সা খরচ করে এগুলো পালটানোর মানে কী! হোক গোটা রাজ্যের সমস্ত স্কুল। তাতে কত খাতা সরবরাহ করার বরাত দিতে পারবে ওরা! কত টাকা কাটমানি পাবে! সামান্য ক’টা টাকা পাওয়ার লোভে ওভারটাইম বাবদ যে কত টাকা সরকারি তহবিল থেকে বেরিয়ে যাবে, সেটা একবারও ভেবে দেখেছে! তা ছাড়া, যাঁরা ওভারটাইম করেছেন, তাঁরা তো সবাই আর তাঁদের দলের লোক নন। নাকি অন্য দলের লোককেও এই ভাবে টাকা পাইয়ে দিয়ে নিজেদের দিকে টানার অদম্য চেষ্টা!
কী জানি! এই সব খেলা বুঝি না বাপু! নিজের মনেই বিড়বিড় করলেন জবালা।
এত দিন নিতে নিতে খাতাটা এত পরিচিত হয়ে গিয়েছিল যে, তাঁকে আর খুঁজতে হত না। কিন্তু নতুন খাতাগুলির চেহারা এবং রং প্রায় একই রকমের হওয়ায় তাঁকে ধন্দে পড়তে হল। সেলফে পর পর দাঁড় করিয়ে রাখা বাঁধানো লম্বা খাতাগুলির ভেতর থেকে একটা একটা করে টেনে বার করে মলাটের উপরে লেখা যে ক্লাস নিতে যাবেন, সেই ক্লাস আর সেকশন দেখে তার পর নাম ডাকার খাতাটা নিয়ে উনি ক্লাসে চলে এসেছিলেন।
কিন্তু এ কী! রোল কল করতে গিয়ে দেখলেন, রোল নম্বরের আগে ছাত্রছাত্রীদের নাম আছে ঠিকই, কিন্তু নামের পাশে কারও কোনও পদবি লেখা নেই। তা হলে কি তড়িঘড়ি করে করতে হয়েছে দেখে সময়ের অভাবে আপাতত শুধু নামটাই লিখেছে! পদবিগুলো পরে সময় নিয়ে ধীরেসুস্থে লিখবে!
হতে পারে। কিন্তু… শুধু নাম লিখলে কী করে হবে! তার এই ক্লাসে যে একই নামের তিন জন ছাত্রী আছে। দেখি তো তাদের আলাদা করার জন্য কর্মকর্তারা কোন পন্থা নিয়েছেন…
জবালা সেটা দেখতে গিয়ে দেখলেন, প্রথম জনের নামের পাশে কিছু লেখা নেই ঠিকই, কিন্তু দ্বিতীয় জনের পাশে ব্র্যাকেট দিয়ে লেখা— ‘অ’। আর তৃতীয় জনের পাশে ওই একই ভাবে ব্র্যাকেট দিয়ে লেখা— ‘আ’।
ও, তা হলে ‘অ’, ‘আ’, ‘ই’ করে পৃথক করা হয়েছে একই নামের ছাত্রছাত্রীদের! সব সেকশনেই কি এই ভাবে করা হয়েছে! দেখতে হবে তো…
ঘণ্টা পরার পর টিচার্স রুমে গিয়ে জবালা দেখলেন সব শিক্ষক-শিক্ষিকাই এই নিয়ে আলোচনা করছেন। কিন্তু সেই আলোচনায় তিনি যোগ দিলেন না। সোজা ওই সেলফের কাছে গিয়ে একটা একটা করে নাম ডাকার খাতা খুলতে লাগলেন আর দেখতে লাগলেন অন্যান্য ক্লাস বা সেকশনের একই নামের ছাত্রছাত্রীদের কী ভাবে আলাদা করা হয়েছে।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।