• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে সীমন্তি চ্যাটার্জি (পর্ব – ৮)

স্রোতের কথা

পর্ব ৮

মিরান্ডা ম্যাম?

প্রফেসর হাসানের ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনাটা এতটাই দ্রুত ঘটলো,যে আমি অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া কি করবো কিছুই বুঝতে পারলাম না। অবশ্য কি করতে পারতাম, তাও জানি না। ঘটনার অভিঘাতে বিস্ময়ে ও ভয়ে আমি যেভাবে কুঁকড়ে গেছিলাম…আমার যে কি করা উচিত কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। আমার মনে হচ্ছিল আমি ই কি এর জন্য কোনোভাবে দায়ী??… তবে সবকিছু ছাপিয়ে আমার মনে প্রশ্নের পর প্রশ্ন ঢেউ তুলতে লাগলো। এ কি আজব পাওয়ার দেখলাম রে বাবা”!এসব তো শুনেছি সুপারম্যান,স্পাইডারম্যান উইজার্ড বা অবতারদের থাকে…হাসান কি বলে গেলেন?আমার ও এসব পাওয়ার আছে? কই আমি তো কিছু টের পাচ্ছি না…ভাবতে ভাবতেই, বলবীরের ছিটকে পড়া…প্রনীতা ম্যামের উড়ে যাওয়া…এই সব মনে পড়ে গেলো। যাক, নিজেকে নিয়ে পরে ভাববো… কিন্তু তার আগে এখন যে সিচুয়েশনে আছি তার প্রেক্ষিতে ভাবতে হবে …. কে এই অনিন্দিতা?!যার নাম শুনে মিরান্ডা ম্যাম ও প্রফেসর হাসান দুজনে দুভাবে ওভাররিআ্যাক্ট করলেন?! আর….আর মিরান্ডা ম্যাম!!… আমি ওনাকে প্রথম দেখার অসীম মুগ্ধতা এখন অন্ততঃ কিছু টা কাটিয়ে উঠেছি…এখন‌ আমার মন বলছে মিরান্ডা ম্যামকে যা দেখে মনে হয়…তার থেকে আরো আরো অনেক কিছু ওনার ভিতরে লুকিয়ে আছে…উনি যে অসম্ভব পাওয়ারফুল, সুন্দর এবং আভিজাত্যের শেষ কথা…তা নিয়ে কোনো সন্দেহই কারোর কখনো থাকতে পারে না… কিন্তু তার সাথে কর্তৃত্বের দম্ভ, ক্ষমতার অহঙ্কার…নাঃ সেটাও হয়তো খুব ই স্বাভাবিক… আমি সেভাবে না বুঝলেও ওনার উপরে যে বিরাট দায়িত্ব রয়েছে তাতে হয়তো এই কঠোরতা বা কর্তৃত্বের প্রদর্শনের প্রয়োজন…কিন্তু… কিন্তু এছাড়াও একটা কিছু রহস্যময়তা ওনার ভিতরে রয়েছে যা আমাকে ভীষণ অস্বস্তি দিচ্ছে বা প্রকারান্তরে ভয়…হ্যাঁ আমি ওনাকে কেন জানি না ভীষন ভয় পেতে শুরু করেছি। প্রফেসর হাসান বরং অনেক কাছের মানুষ…ওনার সাথে কথা বলতে বা কমিউনিকেট করতে আমার কখনোই কোনো অসুবিধা হয়না… কিন্তু এখন যখন উনি এইভাবে…আর এই এতবড় জায়গায় আমি আর মিরান্ডা ম্যাম একা…ভাবতেই আমার হাত পা ঠাণ্ডা হতে শুরু করলো। প্রফেসর যাবার সঙ্গে সঙ্গে যেন সব উষ্ণতা বিদায় নিয়েছে…আমিও এখন এখান থেকে যেতে পারলে বাঁচি।
**এসো স্রোত আমরা আমাদের বাকী কথা শেষ করি…
আমি কাঠের পুতুলের মতো টেবিলে গিয়ে বসলাম মিরান্ডা ম্যাম হাতে একটা গ্লাস তুলে তাতে একটা বোতল থেকে গাঢ় লাল তরল ঢেলে তাতে একটা চুমুক দিলেন।…এখন ওনাকে দেখে কেউ বুঝবে না একটু আগে কি ভয়ঙ্কর এক দৃশ্য উনি রচনা করেছিলেন…আমি আমার অজান্তেই নিজের চেয়ার টা একটু সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলাম…মিরান্ডা প্রিস্টলির ডাক কে না বলার ক্ষমতা এই ইউনিভার্সে কারোর আছে বলে মনে হয়না। কিন্তু আমার খুব ভয় করছে যে…..
** ওখানে নয়… তুমি আমার পাশে এসে বোসো। স্রোতস্বিনী,তুমি লন্ডনে জন্মালেও তোমার অরিজিন ইন্ডিয়ান….তাই আমি চাইবো তুমি ইন্ডিয়ার ইসপ্যামা তে যাও। ওটাই সবচেয়ে বড়….বলতে পারো হেড্ ইসপ্যামা। আবহাওয়ার দিক থেকে লন্ডন ও কলকাতা একই রকম…অবশ্য সব ইসপ্যামার ই টোটাল এরিয়ার আবহাওয়া এক ই…প্রিস্টেস রাই সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করেন। যাই হোক…
ওখানে তোমাকে পাঁচ বছর থাকতে হবে…এরপর ইচ্ছে করলে তুমি ওখানে ই কোনো কাজে যোগ দিতে পারো…বা প্রিস্টেস হওয়ার যোগ্যতা থাকলে তাও….অবশ্য তোমার ইচ্ছে শুধু হলেই হবে না….সে অনেক পরের ব্যাপার….আর না হলে তখন তুমি এই ওয়ার্ল্ডের যেকোনো প্রফেশন… তোমার ইচ্ছে মতো নিতে পারো।
আমি না থাকতে পেরে বললাম…যে কোনো প্রফেশন ম্যাম?ধরুন আমি যদি ডক্টর বা এন্জিনিয়ার বা রকেট সায়েন্টিস্ট হতে চাই?? আমি কিভাবে পারবো?
** পারবে… এক থেকে দুঘন্টার মধ্যে তোমার মেমারিতে সব নলেজ স্টোরড্ হয়ে যাবে।আর এই ওয়ার্ল্ডের যেকোনো ইনস্টিটিউটের রেলেভেন্ট ডিগ্রি তোমার হাতে চলে আসবে। তবে তোমার যদি এবিলিটি থাকে…তাহলে তুমি এমন কিছু এবং এত কিছু জানবে আর করতে পারবে বা করতে চাইবে যে তার কাছে এসব ওয়ার্ল্ডলি জ্ঞান বা প্রফেশন অতি তুচ্ছ…চরম অবজ্ঞা ও তাচ্ছিল্যের সাথে কথা গুলো বললেন মিরান্ডা…
** তবে তুমি যদি পাঁচ বছর পরে সত্যি ই এই পৃথিবীর সাধারণ মানুষের পেশা কেই বেছে নিয়ে তাদের মধ্যেই থাকতে চাও…তবে তখন তোমার ম্যাজিকাল পাওয়ার কিন্তু তুমি ইসপ্যামা র অনুমতি ছাড়া কোনোভাবেই সাধারণ মানুষের সামনে ইউজ্ করতে পারবে না…যদি এই রুল কেউ ভাঙ্গে… তাহলে…
কিন্তু ম্যাম আমি….মানে আমি ঠিক কি?নির্বাচিত হওয়া মানে কি….আমি অবতার? না সেরকম ই কিছু….
স্পষ্ট দেখলাম অবতার কথাটা উচ্চারণ করার সাথে সাথেই মিরান্ডা সামান্য শিউরে উঠলেন…তারপর সঙ্গে সঙ্গেই সামলে নিয়ে কঠিন গলায় বললেন….ওসব কথা এখন থাক….ওসব বলার যোগ্যতাও এখন তোমার হয়নি….তবে তুমি ঠিক কি…….স্রোত এসো তো আমার কাছে এখানে….
তোমার দিনের বেলা দেখতে সমস্যা হচ্ছিল তাই না?? আর নিঃশ্বাসের কষ্টও হচ্ছিল….তাই তো?? ওক্কে তুমি এটা একটু খাও তো….এই বলে তিনি একটা বোতল থেকে সেই লাল তরল পানীয় টা একটা ওয়াইন গ্লাসে ঢেলে আমার দিকে বাড়িয়ে ধরলেন…
ভয়ে ভয়ে চুমুক দিতেই যেন মনে হল একটা অমৃতের স্বাদ আমার গোটা সত্ত্বা কে আচ্ছন্ন করে দিল…কি অপূর্ব স্বাদ… আমার ভিতরের এতদিন ধরে চলে আসা যাবতীয় অস্বস্তির পাহাড় যেন এক নিমেষে গলে গলে পড়তে লাগলো…. আমি সাগ্রহে আবার চুমুক দিলাম।
‌ ** এবার এক কাজ করো ….এই দেওয়াল টা বেয়ে উঠতে চেষ্টা করো।
আমি হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম….এই সুন্দরী কি পাগল নাকি?? আমি কি টিকটিকি নাকি রে বাবা
**কি হোলো?? চেষ্টা করো স্রোত….করো…..করো
শেষ ‘করো’ টা এক অসম্ভব জোরের সাথে উচ্চারণ করলেন মিরান্ডা….আর মরিয়া হয়ে আমি দেওয়ালে চড়ার ভঙ্গি করলাম……আর অবাক হয়ে দেখলাম একটা বিশাল টিকটিকি র মতো অনায়াসে যে ভাবে মাটিতে হাঁটি ঠিক সেই ভাবেই আমি দেওয়াল বেয়ে সড়সড় করে ছাদের দিকে উঠে যাচ্ছি।
**এবার ঐ ভাবেই নেমে এসো।
আমি দেওয়ালের উল্টো দিকে বেয়ে বেয়ে একই ভাবে মাটিতে নেমে এলাম। অবাক হতেও ভূলে গেছি !!! এ কি অদ্ভুতুড়ে কান্ড…. আমি…. আমি দিম্মার আদরের সার্সী…… দিম্মা যদি এই দৃশ্যটা দেখতো !!!!!!
**স্রোতস্বিনী মন দিয়ে শোনো…. আমার স্টাডি বলছে তুমি একজন ভ্যাম্পায়ার এবং উইচ্ ও। এই দুরকম এবিলিটিই আমি তোমার মধ্যে আছে বলে বুঝতে পারছি…খুব অন্যমনস্ক ভাবে মিরান্ডা বললেন। সাধারণত এই কম্বিনেশন খুব কমই দেখা যায়। যাক, আরো অনেক কিছু জানা বোঝা বাকি আছে সেগুলো ইসপ্যামা তে গিয়ে সময়ের সাথে সাথে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হবে। এখন তুমি ফিরে যাবে। আর এই বটল্ টা সঙ্গে নিয়ে যাও… এর ভিতরের এই ড্রিংক টা প্রতিদিন একটু করে পান করবে আর চেষ্টা করবে সূর্যের আলো যতটা সম্ভব এ্যাভয়েড করতে। ঠিক সাতদিন পর ইসপ্যামার স্পেশাল প্রাইভেট জেট তোমাকে ইন্ডিয়ার ইসপ্যামা তে পৌঁছে দেবে। চাইলে তোমার একজন গার্ডিয়ান তোমার সঙ্গে যেতে পারেন। কিন্তু যেহেতু তিনি একজন নর্মাল মানুষ….তাই ইসপ্যামার ভিজিটর্স এরিয়া পর্যন্তই তিনি যেতে পারবেন, কিন্তু ভিতরে ঢুকতে পারবেন না, সেটাই রুল্ আর হ্যাঁ আজ তোমার সাথে যা যা হোলো…. তুমি যা যা জানলে তা তুমি কারো সাথে শেয়ার করতে পারবেনা।….মনে রেখো স্ট্রিক্টলি এটাই রুল….কারো সাথে মানে তার মধ্যে তোমার গ্র্যানী ও আছে…..কি যেন…..ভূমিসূতা……তাই না???
অপার তাচ্ছিল্যের সাথে দিম্মার নাম টা উচ্চারণ করলেন মিরান্ডা…… আমি কোনো কথা না বলে ঘাড় নাড়লাম
** আর এই ড্রিংক টাও লুকিয়ে রেখো। কারণ রক্ত পান করাটা এখনও সাধারণ মানুষ ভালো চোখে দেখে না….. মৃদু হাসলেন মিরান্ডা
**ওক্কে…তাহলে সাতদিন পরে তোমার সাথে ইন্ডিয়াতে দেখা হবে।। তারমধ্যে তোমার এই কলেজের সব ফর্মালিটি কমপ্লিট হয়ে যাবে। তুমি গিয়ে তোমার রিলিজ সার্টিফিকেট টা নিয়ে নিও….ওটা ইসপ্যামা তে লাগবে।।
ম্যাম একটা কথা ……এই প্রিস্টেস….হাই প্রিস্টেস…..এরা….মানে এনা রা মানে… কোন গড বা গডেসের প্রিস্টেস ….মানে….
** সব কিছু কি আজ ই জানবে স্রোতস্বিনী?? না জানলেই বুঝবে?? সময় আসুক, যেগুলো তোমার জানার প্রয়োজন সব ই জানবে।…. ওক্কে তাহলে… গুডবাই,… ভালো থেকো, সাতদিন পর দেখা হবে।
মিরান্ডা প্রিস্টলি, বিরাট ডাইনিং হল টা তে আমাকে একা দাঁড় করিয়ে রেখে ভিতরের দরজার দিকে এগিয়ে দরজাটা হাতের এক ঈশারায় খুলে ভিতরে চলে গেলেন….. আমার দিকে একবার ফিরেও তাকালেন না….
দরজা টা নিজে নিজেই বন্ধ হয়ে গেল।

‌ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *