• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে পূর্বা দাস (অন্তিম পর্ব)

অমরত্বের আগে

অন্তিম পর্ব

“বল বুড়িমা, তোমার আর কি কি অসুবিধা? কোন ব্যথা, বেদনা – আমাকে বল। আমি ডাক্তার,  জানো তো!  আমি দেখছি। “
“থো ….ই…বা…. থোই…..বা… তুমি দীর্ঘজীবী হও। আমার বংশের মুখ উজ্জ্বল করেছ তুমি।”  ধীরে ধীরে থারো তার সুদর্শন প্রপৌত্রের  পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়।
” নিশ্চয়ই বুড়িমা,  নিশ্চয়ই। আমার মিষ্টি বুড়িমা। আমি একদম বিশ্বাস করি না লোকে তোমার সম্বন্ধে যা সব বলে।”
” আমি জানি ওরা আমায় ডাইনি বলে ।আমি নাকি মানুষের আত্মাকে চুরি করে আনি। আমি শয়তানি।” থারোর চোখে আবার বন্যার জল বাঁধ ভাঙ্গে।
“ওরা বড্ড ওভাররিয়াক্ট করে বুড়িমা। ছাড়ো তো ওসব। আমি তোমার সব রকম ক্লিনিক্যাল টেস্ট করাব। হয়তো তোমার কিছু দৃষ্টিবিভ্রম হতে পারে। তোমার বয়সে সেটা খুব স্বাভাবিক। আমি তোমার সবকিছু পরীক্ষা  করিয়ে তারপর সবাইকে বলব, যে তুমি আদতেই একজন খুব স্বাভাবিক মানুষ। শুধু তোমার বয়সটা একটা আশ্চর্যের। আর হু..হু.. বাবা,  বলা যায়না তোমার ওপরে রিসার্চ করে আমি প্রাইজ টাইজ ও পেয়ে যেতে পারি হয়ত।” থোইবার খোলা গলার হাসিতে ঘরের আসবাব গুলো ও যেন অবাক হয়ে চেয়ে থাকে।
“আমি কোনদিন কাউকে দুঃখ দিতে চাইনি থোইবা।” অ্যাবক থারো কান্না জড়ানো গলায় বলে। “সেই সাথে নিজেকেও না।”
“সেই.. সেই.. সেই জন্যই তো আমি এসেছি বুড়িমা। তুমি একদম কষ্ট দেবে না নিজেকে। আমি তোমার চিকিৎসা করব। তোমার সব সমস্যা একটা একটা করে সারিয়ে তুলব।”
” থো ইবা…. সোনা আমার….” থারোর স্বরে কি হাহাকার মিশল!
থোইবা চলে গেছে ঠিক এক সপ্তাহ হল। গ্রীষ্মের সোনালী রোদ্দুরে গাছপালায় এখন স্বাস্থ্যের  দ্যুতি। গ্রামের ভাঙাচোরা রাস্তায় আবার পা টেনে টেনে চলেছে ঈষৎ ঝুঁকে পড়া অমর দেহটি। ডানহাতে আজ একটি লাঠি, গাছের ডাল কেটে বানানো। বা হাতে  দোমড়ানো কিন্তু টাটকা খবরের কাগজ।  সামনের  দীর্ঘ সোজা রাস্তাটি একদম ফাঁকা। মাথার উপর ছোট ছোট কয়েকটা পাখি উড়ে উড়ে নিজেদের ভাষায় কিসব বলছিল । থারো একটুক্ষন দাঁড়ালো। চারপাশ দেখে নিয়ে কাগজটা দলা পাকিয়ে ছুঁড়ে দিল রাস্তার ধারের ঝোপে। হাওয়ায় নাচতে নাচতে খবরের কাগজ টা একটু এদিক-সেদিক করল তার পরে একসময় একটু একটু করে ভাঁজ খুলে যেন নিজেকে মেলে ধরল ছোট্ট মাঠটার ঠিক মধ্যিখানে।  মাঝখানের পাতায় এক সুদর্শন যুবকের ছবি। তার সাথে বড় করে শিরোনাম, “তরুণ প্রতিভাবান ডাক্তারের আত্মহত্যা। গতকাল সন্ধ্যায় নিজের ফ্ল্যাটে তাকে সিলিং এর সাথে ঝুলন্ত অবস্থায়……”

সমাপ্ত

[মণিপুরের অসংখ্য উপজাতিদের মধ্যে সংখ্যাহীন উপকথা এখনও কানাকানি হয়। মূল লেখিকা Linthoi Chanu বলেছেন, এই গল্পের প্রেরণা এরকমই কোন উপকথা, ছোটবেলাতে শোনা।  তার সাথে মিশেছে কল্পনার প্রতিচ্ছবি। কোন ঘটনার সাথে সুদূরতম মিল থাকলেও তা অনিচ্ছাকৃত। ]
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।