আগে যা হয়েছে: আরগি ৬৭ র কাছ থেকে রাজপুত্র বাকুদের জীবন যাত্রা সম্পর্কে আরো বেশি করে ওয়াকিবহাল হয়। রাজপুত্র জানতে পারে বাকুদের নিত্যকার রুটিন তিনটি পর্যায়ে চলে আসছে এবং সেই রুটিনের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে বাকুরা কিছু সমস্যায় পড়ছে যার জন্য রাজপুত্রকে বাকুদের দরকার।
আলমারির কথা অগ্রাহ্য করবার জায়গা যে নেই সেটা রাজপুত্রকে আলাদা করে বলে দিতে হল না। রাজপুত্রের ঘর থেকে বেরিয়ে প্রায় অদৃশ্য চাকার ওপর ভর করে আলমারি টুকটুক করে এগোতে থাকলো নিজের নির্ধারিত গন্তব্যে। আর এদিকে আসন্ন বাকু সভা যাবার নেমন্তন্ন পেয়ে রাজপুত্রের ভেতরে ভেতরে একটু একটু গর্ব মেশানো কৌতূহল-ও হচ্ছে। গর্ব কারণ সত্যি কথা বলতে কি রাজপুত্রের কাছে আজ অব্দি কেউ সেরকম শলা পরামর্শ চায় নি। রাজার ছেলে হবার সুবাদে তার চারপাশের লোকজন যেটা করে এসেছে সেটা আলগা সমীহ। বাবাও ছেলেকে নিজের ব্যাবসা বানিজ্য শাসনের প্যাঁচ পয়জারে সেভাবে ঢোকানোর চেষ্টা করেনি। রাজপুত্র এক রকম ছাড়া গরু হয়েই এতদিন জীবন কাটিয়ে এসেছে তাই আলাদা করে রাজপুত্র কে যে সমস্যা সমাধানের জন্য ডাকা হতে পারে, এই ব্যপারটা জেনে রাজপুত্রের একটু পুলক লাগলো, হোক না তা ভিনগ্রহী রাক্ষসদের সমস্যা তাতে কি? কেউ তো রাজপুত্রের বুদ্ধির মর্যাদা দেয়। রাজপুত্র যদিও খুশি চেপে রেখেই আলমারির পেছন পেছন হাঁটা দিলো। মিমাসে নামবার পর এই প্রথম রাজপুত্র একটু নিশ্চিন্তে চারপাশে নজর দিতে পারলো। রাস্তাঘাট সম্পূর্ণ বাকুশূন্য হওয়ার জন্য সম্ভবত আরও বেশি করে। রাজপুত্রের এই সময়টাতে একটা সিগারেট ধরাবারও ভীষণ ইচ্ছে হলো। গাম্বাট দৈত্যগুলো তার স্পেসশিপটাকে কোথায় কিভাবে রেখেছে কে জানে। একবার স্পেস শিপের ভেতর যদি ঢোকা যেত, সিগারেটের কিছু প্যাকেট জোগাড় করে নেওয়া যেত। এইসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে আলমারিটার পেছন পেছন রাজপুত্র বাকুদের স্টেডিয়ামে এসে পৌঁছালো। বাকুদের দেরা সভা নিয়ে রাজপুত্র যেরকম আশা করেছিল তার বেশ কিছুটা মিলেও গেল, স্টেডিয়াম ভর্তি বাকু আর আরগি ৬৭ র মতন দেখতে বেশ কিছু আলমারি এক জায়গায় জটলা করছে। রাজপুত্র স্টেডিয়ামে ঢুকতেই জটলা টা থেমে গেল। ভিড়ের মধ্যে বাকু মোড়ল কে ঠাওর করতে রাজপুত্রের অসুবিধা হল না তার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে সবগুলো কালচে বেগুনী রঙের বাকুদের মধ্যে একমাত্র বাকু মোড়লের গায়ের রং ঘন নীল!
“উটকো মানুষ তোমাকে স্বাগত। আশা করি তুমি এখন বুঝতে পেরেছো কেন তোমাকে আমাদের প্রয়োজন” রাজপুত্র একটু কাছে আসতেই বাকু মোড়ল রাজপুত্রকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল।
“পুরোটা নয়। নিজেদের ভেতরে আপনাদের কিছু সমস্যা হচ্ছে এইটুকু জানতে পেরেছি কিন্তু সমস্যাটা কি সেটা আমি এখনো জানি না” এই অব্দি বলেই রাজপুত্র বেশ অবাক হল নিজের গলায় অচেনা একটা রাশভারী এফেক্ট চলে আসাতে। মনে মনে নিজেকে একবার ছোটো করে তারিফ করলো রাজপুত্র।
“তুমি জানো আমরা খুব সাধারণ ভাবে জীবন কাটাই। জটিলতা আমাদের পছন্দ নয়। মহান বিজান্টারের কাছে আমরা চির কৃতজ্ঞ। কিন্তু এই দেরা চলাকালীন আমরা লক্ষ্য করছি আমাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মত বিরোধ হচ্ছে। বাকুরা এক জাতি এক প্রাণ একতা। মত বিরোধ বাকুদের মানায় না। আমরা মহান বিজান্টারের কাছে এতদিন প্রার্থনা করে এসেছি উনি যেন এই জটিলতার থেকে আমাদের মুক্তি দেন। বিজান্টার নিজে আসেননি কিন্তু তোমাকে পাঠিয়েছেন”
একটানা কথা শেষ করে বাকু মোড়ল হাত তুলে ইশারা করাতেই বাকিরা যন্ত্রের মত যে যার নিজের জায়গায় বসে পড়ল। শুধু রাজপুত্র, বাকু মোড়ল আর আলমারিগুলো দাঁড়িয়ে। রাজপুত্র নিজের মাথার চুলে একটু হাত বুলিয়ে চারপাশের বাকুদের দিকে তাকিয়ে আবার মোড়লের দিকে নিজের দৃষ্টি ফেরালো কিন্তু কি উত্তর দেবে বা দাঁড়িয়ে থাকবে কিনা সেটা না বুঝতে পেরে নিজের মুখ বন্ধ রাখলো।
রাজপুত্রের ভ্যাবাচাকা খেয়ে যাওয়াটা সম্ভবত টের পেয়ে বাকু মোড়ল বসে থাকা বাকুদের দিকে তাকিয়ে একটা হাত আকাশের দিকে তুলে সামান্য উঁচু স্বরে কিছু বলল যেটার অনুবাদ রাজপুত্রের কাছে থাকা বোতাম করতে পারলো না। তবে বসে থাকা বাকুদের মধ্যে থেকে দুজন বাকু উঠে এসে মোড়লের দু পাশে দাঁড়ালো।
“এ হচ্ছে তেতাল্লিশ এ হচ্ছে একতিরিশ।“ বাকু মোড়ল নিজের দুদিকে দাঁড়িয়ে থাকা বাকুদের দেখিয়ে বলতে শুরু করলো “ কালকের দেরা চলাকালীন তেতাল্লিশ আর একতিরিশ একসাথে রান্না করতে অস্বীকার করে। তেতাল্লিশের বক্তব্য একতিরিশ তাকে রান্না করতে বাধা দিচ্ছে তারপর নিজেদের মধ্যে সেই নিয়ে মত বিরোধ হয়। আমরা ঠিক করি আজকের দেরা তে তোমার সামনে বিষয়টা তুলবো সমাধানের জন্য“
রাজপুত্র হাসবেনা খিস্তি করবে সেটা ঠিক করে উঠতে পারলো না। দুপিস আধ দামড়া গোদা রাক্ষস, শালাদের নিজেদের মধ্যে রান্না নিয়ে বাওয়াল আর পঞ্চায়েতি করবো আমি? রাজপুত্র নিজের ঘিলুকে ঠাণ্ডা করে একটু গলা খাঁকারি দিয়ে বলল “বেশ। তেতাল্লিশবাবু আর এক তিরিশ বাবুর কথা তাহলে আলাদা আলাদা করে শোনা হোক কিন্ত তার আগে ইয়ে …… আমার একটু সিগেরেট লাগতো, প্লিজ কাউকে পাঠান না স্যার, আমার স্পেস শিপের চেয়ারের পাশেই রাখা আছে”