• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক কোয়ার্কো ধারাবাহিক উপন্যাসে সুশোভন কাঞ্জিলাল (পর্ব – ২৫)

পঁচিশ

কাল অনেক রাত পর্যন্ত মগজ যুদ্ধ চালিয়েছি সি. ডি -র ধাঁধা উদ্ধারের বৃথা চেষ্টায়। অ্যালার্ম দুবার স্নুজ করে শেষে বিরক্ত হয়ে উঠে গেলাম। আজও যোগব্যায়াম হবে না। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ব্যায়াম করে লাভ নেই। আজ ডঃ চোঙদারের বাড়ি যেতে হবে। শ্রেয়ানকে টেনে হিঁচড়ে ঘুম থেকে ওঠাতে হবে। ঠিক নটায় আমরা দুজনে বাইকে করে বেরোলাম। ঠিকানা আর্জমার দেওয়া রিপোর্টেই ছিল। ডঃ চোঙদারের বাড়ি পৌঁছে দেখলাম বাড়িটা দোতলা। একতলায় তালা ঝুলছে কোলাপ্সিবল গেটে। লেটার বক্সে ডঃ চোঙদারের নাম। তার পাশে আরেকটি লেটার বক্সে নাম লেখা মিঃ ডি. বিজয়ন ও মিসেস এল বিজয়ন। বুঝলাম ওরাই চোঙদারের অ্যাসিস্ট্যান্ড এবং তার স্ত্রী। লেটার বক্সের পাশের কলিং বেলটা বাজালাম। অনেক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পর বাড়ির ডানপাশে একটি অ্যাসবেস্টসের চালওয়ালা খালি গ্যারাজের দিক থেকেই একজন ছিপ ছিপে যুবতী ভদ্রমহিলা এসে বললেন, “ইয়েস?” আমি নমস্কার করে বললাম, “আমরা থানা থেকে আসছি, ডঃ চোঙদারের মিসিং -এর ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করতে। ভদ্রমহিলা আমাকে ও শ্রেয়ানকে আগাগোড়া মেপে নিলেন। আমাকে দেখে পুলিশ মনে হলেও শ্রেয়ানকে দেখে ওনার বোধহয় পুলিশ বলে মনে হয়নি। খুব স্বাভাবিক। কলকাতার পুলিশের হাতে ট্যাটু, কানে দুল আর ঘাড় ঢাকা চুল কল্পনার বাইরে। ভদ্রমহিলা তাঁর রি-অ্যাকশন কয়েক মুহূর্তেই পাল্টে ফেলে বললেন, “প্লিজ কাম।” বলে ঘুরে গ্যারাজের দিকে হাঁটা শুরু করলেন। ভদ্রমহিলা যে বুদ্ধিমতী তা বোঝা গেল। ভদ্রমহিলার ফিগার খুব সুন্দর। ছিপ ছিপে কিন্তু আকর্ষণীয়। তাছাড়া টানা টানা বড় বড় দুটি চোখে গভীর আবেদন। নিজেকে শাসন করলাম। একেই বলে সঙ্গদোষ। শ্রেয়ানের মতো আমিও এক অপরিচিতার দেহ সৌষ্ঠব নিয়ে ভাবা শুরু করেছি। ভদ্রমহিলার পিছু পিছু বাড়ির পিছন দিকে গেলাম। সেখানে অন্য একটা দরজা দিয়ে ঢুকে সিড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে গেলাম। বুঝলাম দুটো তলা একেবারে সেপারেট। ভদ্রমহিলা একটি ঘরে ঢুকে আমাদের চেয়ার দেখিয়ে বসতে বললেন। বসার ঘরটা খুবই সাধারণ ভাবে সাজানো। উনিও বসে বললেন, “বলুন” কথায় দক্ষিণি টান। আমি বললাম, “আপনার হাজব্যান্ডও তো মিসিং। ঘটনাটা একটু ডিটেলে বলবেন?” উনি বললেন, ‘আমার স্বামী ডঃ চোঙদারের সঙ্গে অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে কাজ করতেন গত দুমাস ধরে, স্যার পেপারে অ্যাড দিয়েছিলেন, সেই সূত্রে আমার স্বামী স্যার এর সঙ্গে দেখা করেন এবং স্যার এর পছন্দ হওয়ায় কাজ শুরু করেন। আমার জন্ম কলকাতায়, আমরা আসলে অন্ধ্রের লোক। স্যার আমাদের থাকার ব্যবস্থা ওনার বাড়িতেই করেন। তাই আমার হাজব্যান্ড আমাকে ও আমাদের চার বছরের ছেলেকে নিয়ে এসে এখানে থাকতে শুরু করেন। গত সতেরো তারিখে স্যার ও আমার হাজব্যান্ড কি একটা কাজে স্যার এর গাড়ি নিয়ে বেরোন। স্যার নিজেই ড্রাইভ করতেন। কিন্তু তারা দুজনেই আর ফিরলেন না। বার বার ফোন করেও যোগা যোগ করতে পারিনি। কারণ দুজনেরই ফোন সুইচড অফ ছিল। আমি খুব হেল্পলেস ফিল করছি।” আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “ওনারা কি নিয়ে রিসার্চ করছিলো জানেন?” উনি ঘাড় নেড়ে বললেন, ‘না সেটা জানিনা। কিছু মনে করবেন না। আমায় একটু বেরোতে হবে। ছেলেকে স্কুল থেকে নিয়ে আসতে হবে।” আমি আর শ্রেয়ান উঠে পড়ে নমস্কার জানিয়ে বেরিয়ে এলাম। শ্রেয়ান বাইক স্টার্ট দিতে দিতে বলল, “খাসা জিনিস বস! পুরো ইডলি সুন্দরী!” আমি বললাম, “হ্যাঁ কিন্তু রংটা একটু চাপা” আসলে আমি শ্রেয়ান কে ফুল সাপোর্ট দিলে ও মুখ একেবারে আলগা করে দেবে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে। শ্রেয়ান অ্যাকসিলেটারে চাপ দিয়ে বলল, “একেবারে ছাই চাপা আগুন!” আমি ওর পিঠে চাপড় মেরে বললাম ‘চল, ভাট বকিস না।” শ্রেয়ান বললো, “চলো আনোয়ার শাহের ভুনা পরোটা মেরে বাড়ি ফিরি।”

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।