বসন্ত ঋতুর নিশি, নির্মল আকাশ
ধীরে ধীরে বহিতেছে মলয় বাতাস
বলিলেন নারায়ণ, কহ দেখি প্রিয়া
কী বা অসন্তোষ তব, কাঁদে কেন হিয়ে।
অনেক কুটিল কীট, বাহির ও ঘর
ওড়ে আর বসে যায় পুরুষ অন্তর।
তখন বৈকুণ্ঠ হতে লক্ষ্মী নারায়ণ
মানুষের যত খেলা দেখেন দিয়া মন।
কমলা কহেন ‘দেব , এ কেমন লীলা?
ধরাধামে নারী জাতি সত্য অবলা’।
লক্ষ্মী বলিলেন, ‘প্রভু, অভিধানে কয়
সতী ও অসতী-বাস নারীতেই রয়।
তাই তো বিধান লিখি, নারী শান্ত হলে,
লক্ষ্মীও অচঞ্চলা, থাকি তেলে জলে। ‘
হেনকালে নারদ আসি ঘর্ম মুছিল
চংক্রমণের শেষে ঢেঁকিটি নামিল।
কমলা কহিলেন, প্রতি বৃহস্পতিবারে
চিত্ত আকুল শংখ ধ্বনি শুনিবারে।
কাষ্ঠহাসি নারদের, ‘দেবি, ঘরে-ঘরে
লক্ষ্মীমতি রমণীরা ক্রন্দন করে।
বাংলা ব্যান্ডে আমার বীণা বিক্রি করেছি
এই তো সংবাদপত্র , মর্তে কিনেছি।’
লক্ষ্মী নারায়ণ তামা তুলসী লয়ে হাতে,
শুনিতে বসেন তাহা, খবর আছে যাতে।
মর্ত্যলোকে, আইনত, পুলিশ সুরক্ষায়,
কিন্তু তরুণী পুলিশ হলে তাঁরও বাঁচা দায়।
স্বামীরা স্বেচ্ছায় করে একাধিক বিয়ে
অরাজি প্রথমাকে মারে বালিশ চাপা দিয়ে।
একা মেয়ে রাত অনেক, যাতায়াতকাল
শেয়াল কুকুর সম পুরুষের পাল
ছিঁড়ে খায়। ছোট ভাই আসি, বাধা দেন
কী ফল হইল? তার অবাধ নিধন
অসুস্থ পুত্র সহ জননী হাঁটেন,
তাকেও মদ্যপ যৌন লালসায় কাটে।
যে নারী ভিন্ন জাতের কারও গাড়িতে চাপে
বিবস্ত্রা ঘোরান হয় অমন পাপে
প্রথমে ধর্ষণ আর তার পরে খুন
মর্তের আকাশে সদা চিল ও শকুন।
আরো আছে নিগ্রহের নানা প্রকরণ।
আগুনে পোড়ানো, বিষ, অ্যাসিডে জ্বলন। ‘
জলে ভাসে লক্ষ্মী সরা , ব্ল্যাক অ্যান্ড ওয়াইট
ছবি দেখে শুধোন বিষ্ণু, ‘হোয়াট ইজ ইট?’
নারদ মুনি দীর্ঘশ্বাসে , অস্ফুটে কন
সদ্যোজাত শিশুকন্যা, হত্যা আয়োজন।
এ পর্যন্ত শুনে লক্ষ্মী কানে হাত দিয়া
কহেন , ‘ পাঁচালি গাই, নতুন করিয়া।
যে সংসারে লক্ষ্মীমন্ত পুরুষ না রবে
সেই ঘর ধনে জনে নির্বংশ হবে।
নারী নিগ্রহ ধোও, লয়ে ঝাঁটা ও বুরুশ
লক্ষ্মীর প্রদীপ জ্বালো যতেক পুরুষ।
শংখ বাজাইবে, স্বাদু রন্ধন করিবে
আপিস ফেরত গৃহিণীকে পত্নীসেবা দিবে
এই মত চলো ‘ – বাধা দেন নারায়ণ
‘থাক দেবী , এখন তব ঘরে প্রয়োজন’
কমলা শুধোন , এ কি পিতৃতান্ত্রিকতা?
জিভ কাটিলেন দেব, ‘সে ত মর্ত কথা’!
অকস্মাৎ মূর্তিমান নারদ প্রবেশ
একটি রসের কেচ্ছা ছাড়ি অবশেষ
যদ্যপি নারীর অসম্মানই রেওয়াজ
তথাপি নারীদিবস, জেনো, আটই মার্চ।
কেহ শোনে কেহ পড়ে কেহ না দেয় মন
চৈতালী চট্টোপাধ্যায় শুধু করে নিবেদন