অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত বাংলা আধুনিক কবিতার আলো অন্ধকার আয়ুু …এক অলৌকিকযান….
কবিতা কি বা কবিতা কেন ,কবিতা দুর্বোধ্য হবে
না সহজবোধ্য হবে,এসব তর্কে না গিয়ে বরং কবিতার কাছাকাছি গিয়ে দাড়ানো যাক …
…এখন লিখতে গেলে সমগ্র স্নায়ুতরঙ্গ কাঁপে /
এখন বন্ধুর সঙ্গে কথা বলতে গেলে মনে হয় /
তার দিকে ত্রুটি ছিল …/আর তাই ,/এসব বলতে চাই ,বলা হয় না ,/তবুও আমার /বকুলপিসির সঙ্গে বচসা ,মথুরা প্যাসেঞ্জারে ..
কী অদ্ভুত এই ঐশ্বর্যমন্ডিত কবিতাটি যা এক আত্মীয়তার সম্পর্ক রচনা করে অতি সহজেই !
এই বকুলপিসিকে আমরা চিনি ,তার ছেলেরা
প্রতিষ্ঠিত,তাই তারা বউ ছেলে মেয়ে নিয়ে থাকে অন্যত্র,ফ্ল্যাটবাডিতে …বকুলপিসি একা থাকে
তার একটাই সাধ অন্তত একবার মথুরা বন্দাবন
তীর্থ করে আসা ,একবার মুখ ফসকে বলেওছে সে কথা আমাকে …কবিতার এই আমি হলাম তার পডশি…আমিতো সেররম কিছু করি না
সকালে দুটো টিউশ্যনি ,বিকেলে ক্লাব ,অফুরন্ত সময় ! যাই না ,একবার বকুল পিসিকে তীর্থ করিয়ে আনি ,কবিরা কত কিছু জানেন …
এই সামাজিক ঘটনাটুকুও তার চোখ এডালো না…
এই কবি এখন থাকেন জার্মানে ,কিন্তু বাংলা ভাষায লেখা তার কবিতাগুলিকে আমরা কি ফেলতে পারব কখনো …
…মাকে আমি আজ হাত ধরে ধরে এ পথ করাবো পার ,/মা আজ আমার শিশু,/সতর্কহাতে ঢাকি দুএকটি রুপালি চুলের গুছি/
আপাতত এই ক্ষুধিত পথের ক্ষুরধার চক্রান্ত /কাম ক্রোধ মোহ মোহান্ত ব্যবসায়ী /পার হয়ে যাই /মা কিছু জানে না ,/মা আজ আমার শিশু……../….
এত নিঁখুত বর্ণনা ,শ্বাসরূদ্ধ হয়ে আসে এই সব কবিতা সামনে এলে সত্যি বাংলা কবিতার ঐশ্বর্য বলতে উদাহরণস্বরূপ উল্লেখিত করার মহিমা বর্তায়…মায়া ভালবাসা সম্পর্কের ,যে ছবি পূর্বতন কবিরা এঁকে গেছেন তাকেই সমর্থন করে …মা আজ আমার শিশু…
কিন্তু এ কথাও তো ঠিক যদিএই বিশ্ব না থাকতো ,তাহলে?তাহলে কোথায় থাকতো এই সম্পর্কের বিশ্বাস? ছিলএবং নেই ,হয়তো ঠিককথা আবার আছেও তো ,..পঞ্চাশেরই এক কবি শঙ্খ ঘোষ বলেছেন সেকথা :ছিল,নেই -মাত্র এই
আট মাত্রায় ধরা চারটি শব্দ জীবনের সবকিছু যেন বলে দিল …
এ প্রসঙ্গে অলোকরঞ্জনের যুক্তি নামে একটি কবিতার কিছু অংশ উল্লেখযোগ্য:
……স্টেশন মাস্টার,আপনি দয়া করে এই /
লোকটিকে ছেডেদিন ,বুডো লোকটার / ত্রিসংসারে কেউ নেই …/
একজন আছে বটে ,দূর সম্পর্কের ,সেও টিকিটবিহীন /খুডো বলে ডাকা সেই সৌদসের ছোট্ট ছেলেটা ,/খুডো বলে কেন ডাকে ঈশ্বর জানেন ! খুব ক্ষীণ ,
আরো একজন আছে ,হয়তো দূরতর সম্পর্কের ,/অথচ আত্মীয় ওর ,আমি সেইজন ……..
#
এমন চিরন্তন জাগ্রত করার কবিতা এর আগে কোথাও পেয়েছি কি আমরা ?
#
সুনীল গাঙ্গুলি তার এক কবিতাতে লিখেছিলেন :
রৌদ্রে এসে দাঁডিয়েছে রৌদ্রের প্রতিমা /এ যেন
আলোরই শস্য ,দুপুরের অস্থির কুহক …..
এমন এক অবিনাশী শব্দমালা ,চাপা বেদনাবোধ এবং সর্বোপরি সঠিক ছন্দে গ্রোথিত পঞ্চাশের কবিরা,প্রোথিত করেছে এবং সম্পূর্ন করেছে বাংলা আধুনিক কবিতার পাঠ …
অলোকরঞ্জনের ফাইন আর্ট সুকুমার চিত্রকল্পের জাগরণ ঘটায় !
কবিতা হয়ে ওঠে জীবনের মুক্ত সংগীত যেন …
এই সব কবিতা আজকের তরুণ কবিদের কাছে এক একটি মাইলস্টোন ,এই অল্প পরিসরে অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তকে ধরা খুব কঠিন…নিশ্চয়ই একদিন সুযোগ পাবো তার রচনার পূর্নাঙ্গ আলোচনার…
জয় হোক বাংলা কবিতার