প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধা
আজ বিশ্ববিশ্রুত তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর প্রয়াণ দিবস। ১৯৭৪ সালে আজকের দিনে আশি বৎসর বয়সে তাঁর দেহাবসান হয়। কণাপদার্থবিদ্যা ও অতি পরমাণুর চলন ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিশ্বমানের গবেষণায় তিনি অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বসু লক্ষ্য করেন যে অতিপারমাণবিক স্তরে কণাগুলি ম্যাক্সওয়েল বোলটজম্যান ডিস্ট্রিবিউশন নীতি অনুসরণ করে না। বরং হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা সূত্র দিয়ে তাদের চলন বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করা যায়। তিনি তাঁর গবেষণা লব্ধ ধারণা অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের কাছে পাঠিয়ে দিলে আইনস্টাইন মুগ্ধ হন এবং ত্রিশ বছর বয়সী ভারতীয় গবেষকের “প্ল্যাঙ্ক’স ল অ্যাণ্ড হাইপথেসিস অফ লাইট কোয়াণ্টা” প্রবন্ধটি জার্মান ভাষায় অনুবাদ করে বিশ্ববিখ্যাত জার্মান জার্নালে প্রকাশ করেন। সেটা ১৯২৪ সাল। এই গবেষণা লব্ধ প্রতীতিকে আইনস্টাইন আরো বিকশিত করেন। এই সূত্রে পদার্থের এক অভিনব অবস্থা তাঁদের নজরে আসে। একে আমরা বর্তমানে বোস আইনস্টাইন কনডেনসেট বলে জানি।
সুরেন্দ্রনাথ বসু ও আমোদিনী রায়চৌধুরীর এই সন্তান প্রথমে কলকাতার হিন্দু স্কুল, ও পরে প্রেসিডেন্সী কলেজে পড়াশুনা করেন। কলেজে তিনি আরেক বরেণ্য ভারতীয় বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহাকে সহপাঠী হিসেবে লাভ করেন।
১৯১৬- ১৯২১ এই সময়ে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে লেকচারার হিসেবে কাজ করেন। পরে ১৯২১ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রীডার হিসেবে কাজ করেন। তাঁর জ্ঞানের গভীরতার কারণে তিনি মারি কুরি ও অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের সাথে গবেষণা করার সুযোগ পান। ফেলো অফ রয়্যাল সোসাইটি সম্মানলাভ করেন।
এপ্রিল ৩, ১৯৫২ থেকে এপ্রিল ২, ১৯৬০ অবধি তিনি ভারতীয় পার্লামেন্টে রাজ্যসভার সাংসদ পদে বৃত ছিলেন। ১৯৫৪ সালে বিজ্ঞানে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি দিতে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মবিভূষণ সম্মান দিয়েছেন। ১৯৫৬ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে এমেরিটাস প্রফেসর হিসেবে কাজ করতে বলেন। ১৯৫৯ সালে তিনি জাতীয় অধ্যাপক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।
তিনি একসময় শান্তিনিকেতন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৭৪ সালে এই বরেণ্য বিজ্ঞান সাধকের মৃত্যুর বারো বৎসর পর ১৯৮৬ সালে তাঁর স্মরণে কলকাতার সল্টলেকে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে মৌলিক বিজ্ঞান গবেষণার জন্য একটি জাতীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।