• Uncategorized
  • 0

“নারী-দি-বস” উদযাপনে শুভশ্রী সাহা

আজকের খবর

ভোর না হতে হতেই উনুনে কয়লা মারে কমলা, ইস্টিশনের পাশেই তার চা র দোকান। তিনটে কুড়ির বনগাঁ লোকাল ঢুকলে তাকে একার হাতেই কার মা কার মা করতে হয়। গনগনে আগুন উঠলে বসায় চাএর ডেকচি। কোলের দুটি এখনো স্কুল যায়। তাই ফাঁক পেলেই অন্য উনুনটায় চাপায় ভাত। বেশি নয় দুটো আলু ফাঁক করে কেটে দেয় ভাতে।  আট টা নাগাদ ভাত খেয়ে এখান থেকে রওনা দেয় ইস্কুলে। ততক্ষণে বার দশেক চা আর গোছাখান রুটি নামিয়ে ফেলেছে উনুন থেকে কমলি, গামলায় সেদ্ধ হচ্ছে ঘুগনী। ক্ষিপ্র হাতে মুছে ফেলল ঘাম।  যোগেন টিপিন করতে এলেই সেই ফাঁকে করে নেবে বাজারটুক! নাহ! বসার সময় কই। কমলার, এত গুলো মুখ, চালাতে হবে তো!
মিলি বড় একটা জুটের ব্যাগে খাতাগুলো গোছাচ্ছিল। আজ থেকে মাধ্যমিক শুরু সাথে বড়মেয়ের আই সি এস সি।অনেকবার সি এল এর জন্য আবেদন করেছিল কিন্তু গোবিন্দবাবু নাকচ করে দিয়েছেন।  মিলি জানে হেডস্যার তাকে পছন্দ করে না, কারণ হেড স্যার আলুবাজ জেনে গেছে মিলি। শুধু কলিগ রাই নয়, ক্লাস টেনের মেয়েগুলোর সাথে পর্যন্ত ল্যাবে গেলেই ছুঁই মুঁই খেলে। মিলি  টেনের ক্লাস টিচার, সেও ঠিক করে নিয়েছে কি করতে হবে।যে কোন ছুতোতেই হেড স্যার মেয়েদের ডাক পাড়লেই সেও ক্লাসের ডাকাবুকো স্পোর্টসের প্রাইজ পাওয়া মেয়ে গুলোকেই পাঠায়। লম্বা চওড়া মেয়েগুলোর সামনে চামচিকেটা গুটিয়ে যায় কেমন। চওড়া পাঞ্জার ভয় আছে তো! মিলি বলেই পাঠায়, বন্ধ ঘরে কিন্তু হিসেব বরাবর করে আসবি! সবাই কে   না পারলেও, চুয়ান্ন জন মেয়ে কে সুরক্ষা শিখিয়ে দিয়েছে!
সুলতা আজকাল চোখে দেখতে পান না ভালো। আগের দিন আটা তে চুল পড়েছিল বলে বউমা খুব রাগারাগি করেছে। বউমা চাকরী করে, সকালে উঠে  সুলতাই টিফিনের রুটি পরোটা তরকারী করে রাখেন। রাঁধুনী আসতে আসতে দেরী হয়। সুলতার স্বামী বেসরকারী চাকরী করতেন মেয়ের বিয়ে ছেলের প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং করিয়ে এই বাড়িটুক ছাড়া কিছুই রাখতে পারেন নি। সুলতা এখন সংসারে বিনা মাইনের ঝি। মেয়ের বাড়ি যাবার উপায় নেই, মেয়ের শাশুড়ীর চরম তেঁতো মুখ। সুলতার মন খারাপ হয় সময় সময় প্রবল। বেশ রাতে সবাই ঘুমোলে খোকা টা এসে কোলে মাথা দিলে সব রাগ জল হয়ে যায়। খোকা টা বড্ড নরম, ছেড়ে যাবেনই বা কি করে! মা তো!
তাড়াতাড়ি করো! অভীক তাড়া দিল, অহনা কে।
–আমি আজ যাব না, শরীর ঠিক নেই। তা ছাড়া সন্দীপদার চোখ ভাল না অভীক!
— সন্দীপ দা আমার ইমিডিয়েট বস অহনা!
— তোমার বস! আমার নয়! আমার বাবা খরচাপাতি করে তোমাকে যোগ্য ভেবে বিয়ে দিয়েছিল! সন্দীপের সাথে সেটেলমেন্ট কোথা থেকে এলো
— উফফ অহনা সন্দীপ দা তোমাকে পছন্দ করে,তাইসামান্য একটু টাইম পাসের খেলা খেলবে!
— আমি বউ হয়ে এসেছি, প্লেয়ার হয়ে নয়! বলো তো সন্দীপের
সাথে বরাবরের সেটেলমেন্ট করি!
— সোয়াইন! বিচ!
— তুমি আর তোমার খানদান! ভেবে নাও কি করবে! অবলার কনসেপ্ট আমার পড়া নেই!
পম্পা ভালো করেই বুঝেছে অভিজিত আজকাল অন্য রকম ব্যবহার করছে। এই বাহান্ন বছর বয়েসে সেন্ট,রঙ্গিন জামাপাল্টানো শনিবারেও গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া! পম্পা কি বোঝে না! ওর সরলতা, নিজের নিয়ে থাকা, উদাসীনতা, নাকি আসলে ওর মেনোপজ যৌন আকর্ষণ হীনতাই আসল কারন!
কি বুঝিয়েছে তনুশ্রীকে! নিশ্চয় পম্পা কতদুর দায়িত্বজ্ঞান হীন স্ত্রী, তার জন্য ওর কত কষ্ট, ও কত সহনশীল তাই সহ্য করে পম্পা কে এই তো! আবার বাড়ি ফিরে পম্পাকে পম্পার মত করে রাখা!  বাহ! অসাধারণ,কিন্তু এই টিকে আরো অসাধারণ করা যায় তো, যদি তনুশ্রীকে সোজাসুজি বলা যায়! সত্যি কি তনুশ্রীও জানে! ওর আগে কে, ওর পরে কে! সত্যি বলবে,
কিন্তু তনুশ্রীর কাছে ছোট হবে কি করে! নারী হয়ে অন্য নারীর কাছে! ছি: কি লজ্জা! তার থেকে চুপ করে যাই! যাইহোক লোকটা সংসার টাকে তো প্রাণ দিয়ে দেখে। পুরুষ মানুষ সোনার আঙটি! দোষ হয় না!
কাল রাতে তনুশ্রী নিজেই দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছে অভিজিত কে। পম্পা হাসলো নিজের মনে। নাহ! তার আর রাগ নেই তনুশ্রীর উপর! অভিজিত আর কোথাও হাত বাড়াতে পারবেনা!
দাঁতে দাঁত চিপল কেকা!  কি আশ্চর্য এত সাহস মেয়েটার হয় কি করে! আশ্রমে থাকে, সাতকুলে কেউ নেই! প্রতিবাদী!
ভাত গিলছিস কার পয়সায়!
— তুমি যাও নির্মাল্য! আমি দেখছি। আমি সেমিনারে আছি
কাল বাদে পরশু নারী দিবস জানো তো!
— কিন্তু  সাবিত্রিরে কি করি দিদি!
— অমন সতীত্ব অনেক দেখেছি নরেন। আমায় যেতে দাও শুধু।
চাবকে সিধে করবো!
– সাবিত্রী চাবকেও সিধে হলো কোথায়, সে সবাইকে বাঁচাতে  গিয়ে উপায় না পেয়ে মরে গিয়ে খবর হয়ে গেল। মিসেস কেকা রায়ের  এন জিও র উপর এখন মামলা চলছে।
সব নারীর উত্তরণ খবর হয় না। জানতেও পারে না কেউ তাদের কথা– তারাও জানেনা নারী দি বস এর খবর হতে হয় কি করে, তাদের কাছে রোজের জীবন ই উত্তরণ, বড় খবর, আগামীর উড়ান।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *