• Uncategorized
  • 0

“নারী-দি-বস” উদযাপনে অমিতাভ দাস

মুক্তগদ্য

|| নারীকে যে রূপে দেখেছি ||

নারী নিয়ে যখন লিখতে বলা হল আমি কেবল ভেবেছি কী লিখব ! কোথা থেকে শুরু করব ? পারব লিখতে ? কেননা তিনিই তো জগৎ প্রসবিনী মায়া– বিদ্যা এবং অবিদ্যা স্বরূপিনী । তিনি কালকে কলন করেন । তিনি আদ্যাশক্তি মহামায়া । তিনি সর্বভূতে বিরাজ করেন । আমরা তাঁর সন্তান । এসব কী যে লিখছি — পাগলের প্রলাপ । হতে পারে প্রলাপ , তবু তাঁর কৃপা না পেলে তাঁর কথা লিখি কেমনে ? তিনি যেটুকু বলাবেন আমি সেটুকুই বলব ।যেটুকু দেখাবেন  সেটুকুই দেখব । তাঁর ইচ্ছে ছাড়া পাতাটুকু নড়ে না– এই সত্য কী বুঝিনি এতদিনে !
তিনি আমাকে মায়াতে আবদ্ধ রেখেছেন । আপনাকেও রেখেছেন । আমরা মায়াবদ্ধ জীব । কামিনী কাঞ্চনে আসক্ত । অর্থ- পদ- যশের কাঙাল । তাই তাঁর কাছে প্রার্থনা করতে হয় , মা গো আমার মায়া কাটিয়ে দাও । ওই যে অবিদ্যা মায়া– পাখিপ্রেম । শরীরে শরীরে টুংটাং । কামনার সিম্ফোনি । বেদনার নীল । বিষাদের বৈভব । ওষ্ঠের মধু ।আঙুলের কথালাপ । কপট কলহ । সব মায়া — অবিদ্যা মায়া । তবু সে নারী । আমার প্রেয়সী অথচ তাঁকে আমার মা মা মনে হয় । কেন মনে হয় ? একটা চন্দন গন্ধ — একটা আশ্রয় পাই যেন তাঁর বুকের গোপনে । মনে হয় দেবী । ভালোবাসার কাঙাল । নিজের হাতে পরিয়ে দিই নুপূর । সেই নুপূর-নিক্কন , সেই অলক্ত-রঞ্জিত পদে সে হেঁটে চলে বুকের ওপর দিয়ে । মাঠ-ঘাট পেরিয়ে যায় । দিগন্ত প্রসাদিত ব্যাপ্তি । যেন অলীক মায়াতে সে আচ্ছন্ন করে সমূহ চরাচর । আমার লেখাগুলিকেও যেন গ্রাস করে ।আমি আধিভৌতিক ঘোরের ভিতর তাঁকে লিখি । লিখতেই থাকি । খুঁজি , পাগলের মতো খুঁজি । কখনো কখনো তিনি কৃপা করেন । বলেন , ” পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে “। তিনি কখনো বকুল , কখনো কৃষ্ণকলি , কখনো কাজরী , কখনো বা ছলাকলা পটিয়সী তেলাপিয়া নামক মৎস্যকন্যা হয়ে দেখা দেন । কবি ডুবে যায় । কামনা-সমুদ্রে তিনি আমাকে ডোবান । তারপর একসময় চুলের মুঠি ধরে সমুদ্র থেকে তুলে আছড়ে ফেলেন তটে । বলেন , লেখায় মন দে । এত কামনা , এত মোহ , এত আসক্তি ভালো নয় । তিনি এই অবুঝকে দংশন করেন । আহত করেন । নীল হয় শরীর ও মন । আমি আবার চোখের জল মুছে , হৃদয়-ক্ষত ভুলে বেদনাগুলিকে সাজাই অক্ষরে । লিখি । পরম-প্রসঙ্গ লিখি । ঘৃণা লিখি । ক্রোধ লিখি । মায়া লিখি । মুক্তি লিখি ।
তিনি আমার সাধনা । পরম মনে হয় । তাঁর কাছে নিজেকে সমর্পন করি । তিনিই আমার সাধনসঙ্গিনী । পরকালের পারানি । ইহকালের বেঁচে থাকার দাহ ও তৃষ্ণা ।তিনিই আমাকে পৃথিবীতে এনেছেন । ওষ্ঠে সুধা দিয়েছেন । ক্ষুধার নিবৃত্তি করেছেন । পালন করছেন । মৃত্যুও তিনিই দেবেন । তাঁকে আমার বিনীত প্রণাম ।
” আমি যাঁর কাছে পৌঁছুতে চাই ,সে কি তুমি ? তুমি নও ,তবে তোমার ভিতর দিয়ে দেখতে চেয়েছি তাঁকে ।আমার যা কিছু অর্জন ,যা কিছু বেদনা সবটুকু তাঁকে দিয়ে মুক্ত হবো বলে বসে আছি…সেই কবে থেকেই তো বসে আছি…তুমি বুঝলে না ,দেহাশ্রিত সেইসব কোমল মায়া ,সেইসব চুম্বনের মাধুর্য যে পরম…বুঝলে না যে হাওয়ার কাছে এই সমর্পন ,এই হেঁটে চলা…সে তো পরমের দিকেই যাওয়া ।আমি কেউ নই ,তুমিও কেউ নও… প্রকৃতিমুগ্ধ বালক-বালিকা যেমন ”
(পরম-প্রসঙ্গ :১/ অমিতাভ দাস )
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *