সোনা ধানের সিঁড়ি
২৪
“এ্যাই দত টাকা দে” —— চোখের সামনে একটা শুকনো হাত। দুহাত ভর্তি পুরোনো আর বাতিল রঙবেরঙের চুড়ি। একটাও দাঁত নেই। মাথার চুল সাত জন্মেও তেল পড়ে নি। পরনের কাপড় নোংরা আর ছেঁড়া। দুহাতে তিনটে তিনটে ছ’টা ব্যাগ। দশ টাকা দিলাম। কী খুশি। এইভাবে রোজ আসে বুড়ি। একদিন দেখি ফুটপাতে বসে আসন বুনছে। “কাকে বসতে দিবি?” আমার প্রশ্ন শুনে বুড়ির একেবারে হেসে গড়িয়ে পরার যোগাড়। “আজ একত টাকা দে”—– একদিন হঠাৎই চেয়ে বসল। আমি বললাম পুজোর সময় দেব। আর কোনো কথা নেই। হাসতে হাসতে সেদিন দশ টাকা নিয়ে চলে গেল। পুজোর সময় বুড়িকে কোথাও খুঁজে পেলাম না। মনে হল সে কি অন্য কোথাও চলে গিয়ে রাস্তা খুঁজে পায় নি! একদিন এক বান্ধবী এসে খবর দিল, “তোমার প্রেমিকা লঞ্চঘাটে ঘোরাঘুরি করছে”। এর বেশ কয়েকদিন পরে বুড়ি আমার সামনে এসে দাঁড়াল। দেখলাম বুড়ির একশ টাকার কথা মনে আছে। কিছু খাওয়াতে গেলে খাবে না। দশ টাকা নিয়ে হাসি মুখে চলে যাবে। আমার ওপর যেন ওর একটা অধিকার জন্মে গেছে। একদিন কে যেন এসে বলল, ওকে টাকা দেবেন না। বুড়ি ছোট ছোট ছেলেদের টাকা বিলিয়ে দেয়। সে নাকি দেখেছে। নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান বলে মনে হলো। এমন একটা মানুষ আমার ওপর অধিকার দেখায়।
২৫
গরমকালের ভোরবেলা একটা ঠাণ্ডা হাওয়ার পরিবেশ। মা ছাড়া সবাই ঘুমিয়ে থাকত। আমি আস্তে আস্তে উঠে বাইরে পালাতাম। তখন সবেমাত্র একটু একটু আলো ফুটছ। উদ্দেশ্য আম কুড়ানো। কিন্তু সেটাই একমাত্র নয়। আসলে ভোরের আকাশ, ঠাণ্ডা বাতাস আর চারপাশের নির্জনতা আমাকে ভীষণভাবে টানতো। তাই যখন আমবাগানে গিয়ে দেখতাম আমার অনেক আগেই অনেকে আমতলা খুঁজে ফেলেছে তখন এতটুকু মনখারাপ হতো না। ভোরবেলা বাইরে আসতে পেরেছি এটাই যেন অনেক আনন্দের। কোনো কোনো দিন আমবাগানের ভেতরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতাম। চারপাশের মানুষজনদের আস্তে আস্তে জেগে ওঠা, পাখির ডাক —– এসব কিছুর মধ্যে ভাসতে ভাসতে কখন যেন আমের কথা ভুলে যেতাম।
ক্রমশ…