দৈনিক ধারাবাহিকে মৃদুল শ্রীমানী
বৃহন্নলা কথা (১ থেকে ৯)
১
অর্জুনকে যে তৃতীয়া প্রকৃতি একদিন হতেই হবে, তা জানা ছিল। শুধু ইন্দ্রের ঔরসে জন্মানো বুদ্ধিমান ব্যক্তিটি এই বিষয়টাকে সুচতুর ভাবে কাজে লাগিয়েছেন। নিজের অসুবিধাকে সুবিধায় পরিণত করা অত্যন্ত ধীশক্তি সম্পন্ন মানুষের পক্ষেই সম্ভব।
জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা যুধিষ্ঠির পাশা খেলায় হেরে গিয়ে ভাইদের সাথে নিয়ে বনবাসে যেতে বাধ্য হন। সেই বনবাসে গিয়ে অর্জুন একা একা ঘুরে পাবলিক রিলেশন তৈরি করেছিলেন। মহাদেব, বরুণ, কুবের ও যমের সাথে অর্জুনের যোগাযোগ হয়। ইন্দ্রের সাথেও। দেবতাগণ অর্জুনকে নিজেদের সেরা অস্ত্রগুলি দান করেন। যেহেতু রক্তের সম্পর্কে দেবরাজ ইন্দ্র ছিলেন অর্জুনের পিতা, তিনি পুত্রকে একবার স্বর্গ বেড়িয়ে আনার ব্যবস্থা করলেন। স্বর্গে গিয়ে তিনি গন্ধর্বরাজ চিত্রসেনের কাছে নাচ ও গান শিখে খুব সুনাম অর্জন করেন। সেই সময় অর্জুনকে দেখে উর্বশী প্রেমে পড়ে যান। সাধারণতঃ উর্বশী প্রমুখ এলিট অপ্সরীরা সাধারণের প্রেমে পড়েন না। বড় বড় মুনি ঋষির মাথা ঘোরাতে ওই ক্যাটাগরির অপ্সরীরা ব্যস্ত থাকতেন। উর্বশীকে দেখে প্রথম সারির দেবতাদের পর্যন্ত শুক্রস্খলন হয়ে যেত। কিন্তু অর্জুনের মনের গঠন নিয়ে উর্বশীর একটু টেনশন ছিল। তাই তিনি অর্জুনের বায়োলজিক্যাল পিতা ইন্দ্রের অনুমতি আদায় করেও রেখেছিলেন। এদিকে অর্জুন জানতেন উর্বশী তাঁর পূর্বপুরুষ পুরূরবার দয়িতা ছিলেন। সেই কথা জানিয়ে তিনি সবিনয়ে উর্বশীকে জানান যে বংশের প্রাচীন পুরুষের প্রেমিকা হবার কারণে উর্বশী অর্জুনের পক্ষে মাতৃস্বরূপা। সুতরাং উর্বশীর প্রতি প্রেমালিঙ্গন তাঁর পক্ষে অসম্ভব। এ কথা শুনে অভিমানিনী উর্বশী অর্জুনকে তৃতীয়া প্রকৃতি হয়ে দিন কাটাবার অভিশাপ দেন। সেই অভিশাপের সময়সীমা নির্দিষ্ট হয় এক বৎসর। পরে বিরাট রাজার কাছে অজ্ঞাতবাসের কালে অর্জুন এই অভিশাপ কাজে লাগিয়েছিলেন ও রাজনন্দিনী উত্তরাকে নাচে গানে পারদর্শী করে তোলেন।
ক্রমশ…..