• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকা -তে সৌরভ বর্ধন (পর্ব – ৪)

কবিতায় আমি কলার তুলতে চাই (পর্ব – ৪)

প্রতিটা কেন্নো মারার শব্দে আমি শুনতে পাই নির্বাণ ও পাপবোধের এক অদ্ভুত অহংকার দৌড়াতে দৌড়াতে চলে যাচ্ছে অঙ্গুরিমাল রাজ্যের শাসকের কাছে, তিনি ভোটব্যাঙ্ক ও ইমেজের লোভে জীবনবীমার পরামর্শ দিলেন, অতএব সামান্য পরিখায় এলো বিস্ময়, এখন আসবে উপপাদ্যের রঙিন কালার, উপাস্যের সরনিম হাসি, জন্ম নেবে ভয় এবং ভক্তির শীর্ষবিন্দু, হাসপাতাল থেকে গঙ্গারতীর অবধি তাকাও দেখতে পাবে মাঝ উঠোনে তিনটে ব্যাঙ মুখোমুখি বসে আছে, তাদের আলোচনায় আড়িপেতে যা বুঝলাম তাতে তারা আমার সঙ্গে সহমত, কেননা যতদিন বেঁচে আছি আজিকার এই জবানবন্দী আলোয় শত ফুলের তিরস্কার খেয়ে ততদিন ক্ষুর হাতে নাপিত যখনি বলে ওঠে ‘গলাটা তুলুন’ হঠাৎ কত্ করে ঢোক্ গিলে আসে, খুব মিহি সূক্ষ্ম ১টা টান, এখন সব কিছু তাঁর হাতে, তিনি মূর্খ ও লম্পট তিনি ধূর্ত ও মাতাল, তবু ১টি জলজ্যান্ত প্রাণনালী হাতে পেয়ে সিদ্ধান্তে ও কর্মে তিনি অবিচল থাকতে পারেন এই অলিখিত ইতিহাস জেনে আশ্বস্ত হই, মনে হয় আবার উড়ছি, জলস্থল প্রতিপত্তির উপর দিয়ে, এই উড়ান বুদ্ধদীপ্ত নয়, এই দেহ শুধু লিঙ্গের পাছানি নয়, সামাজিক তোরঙ্গে রাখা একটি বধ্যভূমি মাত্র
বিদ্যুৎপৃষ্টতা থেকে সরে এসেছি, এখন আমাকে গতরপোড়া বলো, আমাকে বিজলিখেকো বলো, ঠেলে ধরো আমায় উচ্চ বেদানার দিকে, গাছের গভীর ফাটলে মুখ ঠুঁসে দাও আমার, মুখোমুখি শুয়ে থাকি, সমস্যা হবে না কোনো, রবীন্দ্রনাথের থেকে আমি জেনে রেখেছি যে আমার মধ্যে একটা বিপুল আনন্দ আছে, সে এই জলস্থল গাছপালা পশুপক্ষীর আনন্দ,   বোটের খোলা জানলায় বসে এই পুরাতন পৃথিবীটার গৈরিক রঙের মাটির উপরে যখন সূর্যের আলো পড়তে দেখেছি তখন আমার সমস্ত দেহটা যেন বিস্তীর্ণ হয়ে ঐ ধুলা এবং ঘাসের মধ্যে দিক্প্রান্ত পর্যন্ত অবাধে আতত হয়ে গ্যাছে, আমি সূর্য চন্দ্র নক্ষত্র এবং মাটি পাথর জল সমস্তের সঙ্গে একসঙ্গে আছি এই কথাটা এক-এক শুভ মুহূর্তে যখন আমার মনের মধ্যে স্পষ্ট সুরে বাজে তখন একটা বিপুল অস্তিত্বের নিবিড় হর্ষে আমার দেহ মন পুলকিত হয়ে উঠে, ইহা আমার কবিত্ব নহে, ইহা আমার স্বভাব, আমি মানুষ, এই জন্যই আমি ধুলা মাটি জল গাছপালা পশুপক্ষী সমস্তই, ইহাই আমার গৌরব, আমার চেতনায় জগতের ইতিহাস দীপ্যমান হয়ে উঠেছে, আমার সত্তায় জড় ও জীবের সমস্ত সত্তা সম্পূর্ণ হয়েছে…
তাই রাত হলেই বগলের আঘ্রাণ মোহময়তায় পৌঁছে দেয় আমায়, নিজের বগলের প্রতি এই মোহ থেকেই কি পুরুষেরা আপেলপ্রবণ সন্দেহ লালন করে, নিজের গভীরে ? কী জানি! আমি তো কোনো সন্দেহহীন পুরুষ দেখিনি কোত্থাও। হঠাৎ যদি ধরে নিই আমাদের কলতলার চারপাশে অসংখ্য শন সুপ্তাবস্থা থেকে জেগে উঠছে, আঙুলের ফাঁক দিয়ে ফোঁকড় জেগে উঠছে, তাহলে সন্দেহ কোথায় গিয়ে বসে? নিশ্চয় খুব গভীরে নয়, এই আশে পাশেই কোথাও হবে! অর্থাৎ অন্ধকারে যে মুখাবয়ব ওয়ালপেপারে হাসে, তা দেখে বোঝার উপায় বার করা উচিত নয় যে লোকটা আসলে একজন সুখী সৈনিক অথবা যুদ্ধবাজ, দুটোর কোনটাই নয় — শুধু ভুলের মাশুলতলায় বসে বসে দীর্ঘকাল সে গান কেটে চলেছে সংসারের, এই গান কি নিজেকে নিংড়ানো, নিজেকে আখের রসের মেশিনে ফেলে দেওয়া! অথচ মাঝেমাঝে যে ভীষণ আনন্দ পাই না তা নয়, দারুণ ভালোলাগা মতন হয়,  পরম প্রাপ্তি যেন, কিন্তু বেশির ভাগ সময়ে মনে হয় নিজের শরীরের ওপর দিয়ে লাঙল চালাচ্ছি অথবা কবিতা নাম্নী কিছু একটা এসে ব্লেড চালাচ্ছে আমার মাথায় কপালে চোখে, কিন্তু হৃৎপিণ্ডে নয় – সেখানে আমার ভীষণ ভয় লুকিয়ে থাকে কড়া প্রহরায়, স্পন্দন বেড়ে গেলে আকাশ আকাশ অনুভব ছেঁকে ধরে আমায়, আদ্যন্ত পরিখার ঢঙে মেলে ধরে যৌবনের উচ্ছ্বাস, জানি না সেই উচ্ছ্বাসে নাকি অবভাসে মাঝেমাঝে রাত ভোর হয়ে এলে প্রচুর কবিতার পংক্তি নতুন নতুন পংক্তি জাগতে থাকে – অসংলগ্ন, একা, ধীবরের বৃত্তান্ত! কখনও কখনও কোনো কবির বিখ্যাত কোন লাইনও বারেবারে ভেসে ওঠে, এই তো সেদিন কবি স্বদেশ সেনের ‘… ওকে তুমি দাঁত দিয়ে জাগাও’ লাইনটা বারংবার ঘুম ভাঙিয়ে দিচ্ছিল, শেষে না পেরে জেগে উঠলাম, কোথাও কোনো ক্ষতচিহ্ন পেলাম না, দাঁতের দাগ – তাও না,  তবে? কী জানি! আমি তো কিছুই জানি না; আমাকে যে কোনোদিনও কেউ আপেল বলে ডাকতে পারে তা-ই জানতাম না, মানে ভাবিনি, তবুও কেন জানি না কে যেন কেবলই বলে চলে ‘ওকে তুমি দাঁত দিয়ে জাগাও’, কাকে জাগাবো বলুন তো! আমি তো তেমন কোনো আপেলকে চিনি না, শুধু জানতাম মনখারাপ সাধারণত আপেলপ্রবণ হয়, তাই লিখেও ছিলাম, কিন্তু আপেল তো নয়, আপেল কে? মনটা কি? নাকি খারাপটা! বোঝা যাচ্ছে না, আমার ঘুমের সাথে কি মনের গোপন কোনো আঁতাত রচিত হয়েছে? নাহলে আমার ঘুম কেন আমাকে বারবার মনকে জাগাতে বলছে? কী আছে মনে? নিজস্ব বগলের প্রতি আমার যে মোহ তা আপেলের প্রতি আমার কোনোদিনও ছিল না, এখনও নেই, আবার আমার বগলে কখনও আপেল চাষও হয়নি, আফিম হয়েছিল কিনা জানি না, হলেও হতে পারে, নইলে এতো নেশা কেন!

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।